Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পরিদর্শনে পুরুলিয়ায় কেন্দ্রীয় দল

আর্থিক বিচারের চেয়েও কাজের মূল্যায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের এই স্বীকৃতিটা অনেকই বড় বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

স্বশক্তিকরণ পুরস্কারের জন্য পরিদর্শন সেরে পুরুলিয়ার একটি পঞ্চায়েত সমিতি ও একটি পঞ্চায়েতের নাম কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছিল রাজ্য। এ বার কেন্দ্রীয় সমীক্ষকদের দলও ঘুরে গেলেন ওই দুই এলাকায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী এপ্রিলে কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এই পুরস্কার পেতে পারে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি ও কাশীপুর ব্লকের বড়রা পঞ্চায়েত।

কেন্দ্রের এই পুরস্কার গুরুত্ব কম নয়।

রাজ্যের ৩৪১টি পঞ্চােয়ত সমিতির মধ্যে মাত্র দু’টি এবং ৩,৩৪১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটি এই পুরস্কার পাবে। সূত্রের খবর, রাজ্যের তরফে পরিদর্শনের পরে দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিকেই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সুপারিশ করা হয়েছে। সেই দৌড়ে পুরুলিয়ার নাম ওঠায় খুশি প্রশাসনিক কর্তারা। সুপারিশের তালিকায় থাকা অন্য পঞ্চায়েত সমিতিটি হল বীরভূমের রামপুরহাট ২। বীরভূমের দু’টি পঞ্চায়েতেও অন্য বিভাগে পুরস্কারের জন্য রাজ্যের তরফে মনোনীত হয়েছে।

মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বশক্তিকরণ পুরস্কারের বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি ও কাশীপুরের বড়রা পঞ্চায়েত পরিদর্শন করেছেন। এই বছর ওই সমিতি ও পঞ্চায়েত পুরস্কার পাবে বলে আমরা যথেষ্ঠ আশাবাদী।”

জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছর এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ কী ধরনের কাজ করেছে সেটা খতিয়ে দেখে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এই পুরস্কার দেয়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরস্কারের অর্থমূল্য গত বছর পর্যন্ত ছিল পঞ্চায়েত স্তরে পনেরো লক্ষ টাকা। সমিতির ক্ষেত্রে ছিল ২৫ লক্ষ টাকা। আর জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে ৫০ লক্ষ টাকা।

তবে আর্থিক বিচারের চেয়েও কাজের মূল্যায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের এই স্বীকৃতিটা অনেকই বড় বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে পঞ্চায়েত বা সমিতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা। এই দুই কাজে তারা কতটা সফল, সেটার স্বীকৃতি দেয় কেন্দ্র সরকার। ফলে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’

নিয়ম অনুযায়ী, স্বশক্তিকরণ পুরস্কার পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয়। বিগত আর্থিক বছরের কাজের সমস্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান আপলোড করতে হয় সেখানে। তার পরে প্রথমে জেলা থেকে আধিকারিকেরা গিয়ে আবেদনকারী পঞ্চায়েত ও সমিতিতে সমীক্ষা করেন। পরের ধাপে রাজ্যের আধিকারিকরা আসেন। তাঁরা দেখেশুনে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত ও সমিতির নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, কেন্দ্রের সমীক্ষক দল সমীক্ষা করতে আসা মানে পুরস্কার পাওয়ার পথে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়া। কারণ, যে কটি পুরস্কার থাকে, সেই ক’টি নামই রাজ্যের তরফে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় দল সরেজমিন দেখেন সব ঠিকঠাক রয়েছে কি না।

তবে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা সব সময়ে সমীক্ষা ও পরিদর্শনে আসেন না। বেসরকারি সংস্থাকেও এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বুধবার রঘুনাথপুর ২ ব্লক ও কাশীপুরের বড়রা পঞ্চায়েত সরজমিনে ধুরে দেখছে কেন্দ্র সরকারের মনোনীত ওডিশার একটি বেসরকারি সংস্থার দুই কর্মকর্তা।

কী কী বিষয় দেখা হয় এই পুরস্কারে জন্য?

প্রশাসন সূত্রের খবর, মূলত ৪০টি বিষয় দেখেন কেন্দ্রের সমীক্ষকেরা। বুধবার রঘুনাথপুর ও বৃহস্পতিবার কাশীপুরের বড়রাতে ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ওই সংস্থার দুই কর্মকর্তা।

সূত্রের খবর, সমিতি ও পঞ্চায়েত পরিচালনার প্রশাসনিক দিক যেমন দেখা হয়েছে, তেমনই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জীবন জীবিকার উন্নয়ন, পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রভৃতি ব্যাপারেও। যুগ্ম বিডিও (রঘুনাথপুর ২) রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী জানান, পঞ্চায়েত সমিতিতে নিয়মিত সভা হয় কি না, ওই সভায় অনগ্রসর শ্রেণি ও মহিলাদের উপস্থিতি কেমন থাকে, সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত কতটা কাজে করা হয়, তথ্য জানার অধিকারে কত আবেদন জমা পড়েছিল, তার মধ্যে কতগুলির নিস্পত্তি হয়েছে— এই ধরণের নানা কিছু দেখেছেন পরিদর্শকেরা।

এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সড়ক তৈরি, স্কুল ভবন, অঙ্গনওয়াডি কেন্দ্র, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বনসৃজন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানও খতিয়ে দেখা হয়েছে। পরিদর্শকেরা খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছেন, অনগ্রসর শ্রেণি ও মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির আর্থিক মান উন্নয়নে কী ধরনের কাজ হয়েছে এই সমস্ত এলাকাগুলিতে।

বিডিও (রঘুনাথপুর ২) সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ আর কিছু প্রকল্প মিলিয়ে এলাকার তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে আমরা কী ভাবে ছাই-ইট তৈরির কারখানা করেছি, সেটাও ওঁদের দেখানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Central reviewer team Raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE