Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পয়লা বৈশাখে তারাপীঠে উপরি পাওনা অমাবস্যা

তারাপীঠ মন্দিরে মা তারার কাছে দূর-দূরান্ত থেকে হালখাতা নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। বছরের শুরুটা যাতে ভাল হয়, সে জন্য মা তারার কাছে পুজো দিয়ে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

তারা মায়ের মূর্তি। ফাইল চিত্র

তারা মায়ের মূর্তি। ফাইল চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
তারাপীঠ শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন মানেই বাঙালি বা ব্যবসায়ীদের কাছে আলাদা গুরুত্ব পায়। ওই বিশেষ দিনে বিভিন্ন মন্দিরে ভোর থেকেই থেকেই ভিড় উপচে পড়ে। বীরভূমেও তার উল্টোটা হয় না। তারাপীঠ মন্দিরে মা তারার কাছে দূর-দূরান্ত থেকে হালখাতা নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। বছরের শুরুটা যাতে ভাল হয়, সে জন্য মা তারার কাছে পুজো দিয়ে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

এ বার পয়লা বৈশাখের দিনকে আলাদা গুরুিব এনে গিয়েছে অমাবস্যা।

নতুন বছরের প্রথম দিন দূর-দূরান্ত থেকে হোক বা এলাকা সংলগ্ন বা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যাতে তাঁদের পুজো সুষ্ঠুভাবে দিতে পারেন, তার জন্য মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে আলাদা করে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ থেকে শৃঙ্খলারক্ষা করার জন্য মন্দির চত্বরে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনেরও এই দিনটির জন্য বিশেষ নজরদারি থাকে।

আর এ বছর আবার বাংলা নতুন বছরের দিনই হালখাতার পুজো ছাড়া সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে অমাবস্যা তিথি পড়ে যাওয়ায় তারাপীঠে ওই দিন রাতে প্রতি অমাবস্যা তিথির মতো মা তারার বিশেষ পুজো হবে। তারাপীঠ মন্দির কমিটির তথা তারামাতা সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক দিকে পয়লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের হালখাতার পুজো অন্য দিকে ওই দিনই সকাল থেকে অমাবস্যা তিথি থাকার জন্য তারাপীঠে এ বার নতুন বছরের প্রথম দিন আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিন দুপুরে মায়ের নিত্য ভোগ যেমন হয় তেমনি হবে। সেই সঙ্গে অমাবস্যা তিথিতে মায়ের নিশি পুজোও হবে।’’ তিনি জানান, নিশি পুজোতে মা তারাকে রাজবেশে সাজানো হয়। নানান অলঙ্কার-সহ নানা ফুলের মালা মা তারা রাজবেশের সঙ্গে শোভা বৃদ্ধি করে। এ জন্য পুণ্যার্থীরাও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মায়ের দর্শনের সঙ্গে একই দিনে অমাবস্যা তিথিতে পুজো দিতে পারবেন। সে জন্য এ বছর নববর্ষের প্রথম দিন তারাপীঠে মা তারার দর্শনে দর্শনার্থীদের ভালই ভিড় হবে বলে মনে করছে মন্দির কমিটি।

তারাপীঠ মন্দিরের আর এক সেবাইত প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে অনেক বই রয়েছে। প্রবোধবাবু জানান, মা তারার মন্দির মন্দির নির্মাণ এ বছর বাংলা নতুন বছরে ২০০ বছর পদার্পণ করছে। ১২২৫ বঙ্গাব্দে মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় মন্দিরের ভগ্নাংশ সংস্কার করে আজকের তারাপীঠ মন্দির নির্মাণ করেন। বর্তমান মন্দিরের গায়ে রামায়ন, মহাভারত নানান কাহিনি-সহ রাধাকৃষ্ণের লীলা, মহিষাসুর বধ, মা দুর্গার দশভূজা মূর্তির রূপ টেরাকোটার কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রবোধবাবু বলেন, ‘‘বর্তমানে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ণ পর্ষদ থেকে মন্দিরের ভোগ গৃহ সংস্কারের কাজ চলছে। আশা করি প্রাচীন এই মন্দিরের আরও অনেক সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি তারাপীঠ এলাকার আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে।’’

তারাপীঠের পাশাপাশি নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দিরে হালখাতার পুজো দেওয়ার জন্য ভোর থেকেই লম্বা লাইন পড়ে যায় এলাকা-সহ লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হালখাতার পুজো দেওয়ার জন্য মন্দির চত্বর ছাড়িয়ে লম্বা লাইন রাস্তা পর্যন্ত চলে যায়। তারাপীঠ, নলাটেশ্বরী মন্দির ছাড়াও নলহাটি থানার আকালীপুরে গুহ্য কালীকা মাতার মন্দিরে নববর্ষের প্রথমদিন এলাকাবাসী মন্দিরে ভিড় জমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE