Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কমলকে সামনে রেখে উদয়নকে চ্যালেঞ্জ

পুত্রের বিরুদ্ধে পিতাকেই সামনে রেখে লড়াইয়ের ডাক দিল ফরওয়ার্ড ব্লক। বুধবার কোচবিহারে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের পর হাফিজ আলম সাইরানি অভিযোগ করেন, ‘‘কমল গুহকে কলঙ্কিত করেছে তাঁর ছেলে উদয়ন গুহ।’’

ফরওয়ার্ড ব্লকের বৈঠক চলছে কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।

ফরওয়ার্ড ব্লকের বৈঠক চলছে কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪২
Share: Save:

পুত্রের বিরুদ্ধে পিতাকেই সামনে রেখে লড়াইয়ের ডাক দিল ফরওয়ার্ড ব্লক। বুধবার কোচবিহারে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের পর হাফিজ আলম সাইরানি অভিযোগ করেন, ‘‘কমল গুহকে কলঙ্কিত করেছে তাঁর ছেলে উদয়ন গুহ।’’ তিনি বলেন, “উদয়নবাবু কমল গুহের ছেলে হতে পারেন। তাঁর স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে পারেন। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি নন। দিনহাটার মানুষ উদয়নবাবুকে ক্ষমা করবেন না।”

সে সব কথা তুলে ধরতে প্রয়োজনে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব দিনহাটার মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবেন বলেও জানিয়ে দেন হাফিজ আলি সাইরানি। আজ, বৃহস্পতিবারই দিনহাটায় কর্মিসভার ডাক দিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। আগামী ১৭ অক্টোবর কোচবিহারে জেলা কর্মিসভাও করবেন তাঁরা। ওই সভায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস উপস্থিত থাকবেন। উদয়ন বলেন, “১৯৯২ সালে কমল গুহকে দল থেকে বহিষ্কার করে কারা অসম্মান করেছিল, তা মানুষ জানে। তাঁদের মুখে এসব কথা মানায় না।”

উদয়নবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছাড়াও দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়াও, দিনহাটায় দলের শেষ কথা ছিলেন তিনি। উদয়নবাবু তৃণমূলে যোগদান করায় কোচবিহার ও দিনহাটায় সঙ্কটের মুখে পড়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। এই পরিস্থতিতে কী ভাবে উদয়নবাবুর সঙ্গে টক্কর দিয়ে দলকে টিকিয়ে রাখা যায়, তা নিয়ে পর্যালোচনা করতেই এ দিন সম্পাদকমণ্ডলী ও জেলা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। ওই বৈঠকে রাজ্য কমিটির দুই প্রতিনিধি হাফিজ আলম সাইরানি ও নরেন দে উপস্থিত ছিলেন। যে দুইজন এক সময় রাজ্য রাজনীতিতে উদয়নবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন তাঁরাই এদিন চাঁচাছোলা ভাষায় উদয়নবাবুকে আক্রমণ করেন। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব মনে করেন, কোচবিহারের রাজনীতিতে এখনও জেলা তথা দিনহাটার মানুষ কমল গুহকে শ্রদ্ধা করেন। দিনহাটায় পরপর নির্বাচনে দলের সাফল্যের পিছনে কমলবাবুর ভাবমূর্তিই কাজ করেন। তাই তাঁকেই সামনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

তাঁরা জানান, একজন বাদে জেলা কমিটির কোনও সদস্য উদয়নবাবুর সঙ্গে যাননি। উদয়নবাবুকে দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৩। এদিনের বৈঠকে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। জেলা কমিটির ৪৫ জন সদস্য রয়েছে। তাঁর মধ্যে ৩ জন বহু দিন আগেই দলত্যাগ করেছেন। উদয়নবাবুর সঙ্গে একমাত্র বিশ্বনাথ দে আমিন দলত্যাগ করেছেন। এই পরিসংখ্যান তুলে নরেন দে বলেন, “এখান থেকেই পরিষ্কার উদয়নবাবুর সঙ্গে কেউ নেই। বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে কেউ থাকে না।” তিনি আরও বলেন, “উদয়নবাবু যে অভিযোগ তুলে দল ছেড়েছেন তা অজুহাত মাত্র। কারণ, তিনি দলের দুটি পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। দুদিন পরে অশোক ঘোষের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কোনওটাই করেননি। কলকাতা গিয়ে সোজাসুজি তৃণমূলে যোগ দেন। এই থেকে সব পরিষ্কার।” তাঁদের অভিযোগ, দলত্যাগ করার আগে থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন উদয়নবাবু।

এ দিন অস্থায়ী ভাবে কোচবিহার জেলার সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিধায়ক পরেশ অধিকারীকে। তিনি দলের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। এ ছাড়া, আরেক বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুরকে দিনহাটা মহকুমা দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই অক্ষয়বাবু এক সময় কমল গুহের কাছের লোক ছিলেন। কমলবাবু যখন সমাজতান্ত্রিক ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন, সেই সময় ওই দুইজনই কমলবাবুর সঙ্গে ছিলেন। অক্ষয়বাবু বলেন, “উদয়নবাবু কোনওদিন ছাত্র ও যুব রাজনীতি করেননি। তিনি ২০০৫ সালে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। কমলবাবুর মৃত্যুরপরে সারা জেলা যখন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল সেই সময় আমি উদয়নবাবুর নাম প্রস্তাব করি জেলা সম্পাদকের জন্য। কমলবাবুর আবেগকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সে সময় ওই দায়িত্ব পালন করি। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।” পরেশবাবু বলেন, “কমল গুহের দেখানো পথ এবং অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তা করেই যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE