নদীর ভাঙনে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে কামরাঙাগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবিটি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
বছর কয়েক ধরেই তোর্সা নদী একটু একটু করে এগিয়ে আসছে স্কুলের দিকে। গত এক বছরে দূরত্ব কমেছে অনেকটাই। এ বার নদী যেন একেবারে দুয়ারে। ক্লাসঘরে ভেসে আসছে ফুঁসে ওঠা তোর্সার জলের শব্দ। জানালা দিয়ে তাকালেই দেখা যাচ্ছে নদীর ভয়াল চেহারা। অথচ স্কুলের চার দিকে সীমানা প্রাচীর বলে কিছু নেই। কোচবিহার সদর মহকুমার মধুপুরের কামরাঙাগুড়ি পঞ্চম পরিকল্পনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত তাদের অভিভাবকেরা। একই সঙ্গে চিন্তা বর্ষার মরসুমে স্কুলের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েও।
কোচবিহার জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন কল্যাণী পোদ্দার বলেন, “ওই স্কুলের সমস্যা নিয়ে বর্তমান জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলব। আগের জেলাশাসককেও বিষয়টি জানিয়েছিলাম। শুধু ওই স্কুলই নয়, সীমানা প্রাচীর নেই এমন সমস্ত স্কুলেই তা তৈরির জন্য প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।” সেচ দফতরের কোচবিহারের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন সাহা বলেন, “ বাঁধের ওপারে নদীর দিকে স্কুলটি রয়েছে। ফলে এলাকায় ভাঙন রোধের কাজের সুযোগ কম। তবু প্রাথমিক কিছু কাজ হয়েছে। স্কুল রক্ষায় আরও কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখতে আধিকারিকরা সেখানে যাবেন।”
এলাকার বাসিন্দারা জানান, কামরাঙাগুড়ির ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তোর্সার অসংরক্ষিত এলাকায়। বাঁধের ওপারে তৈরি স্কুলটি কয়েক বছর আগেও নদী থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে ছিল। তোর্সা ফি বছর একটু একটু করে দক্ষিণমুখী প্রবাহ ছেড়ে উত্তর দিকে এগোতে শুরু করায় সমস্যা তৈরি হয়। গত কয়েকদিনে ফুঁসে ওঠা তোর্সার জল কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আর তাতেই ভাঙন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্কুলটির অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েও তাই উদ্বেগ বেড়েছে বাসিন্দাদের।
বৃহস্পতিবার থেকে এলাকার বেশকিছু জমি,বাঁশঝাড় ও বসতবাড়ি তোর্সার একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছে। কিছু জমি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীনও হয়েছে। তাই স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় পড়ুয়ারা যাতে নদীর কাছে চলে না যায় তা নিয়ে সবসময় সতর্ক নজর রাখতে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। কামরাঙাগুড়ির বাসিন্দা নিখিল দাস বলেন, “শুরুর দিকে শুধু বাঁশ, বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা হয়। কিছুদিন আগে পাথর ফেলে কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু তোর্সা যেভাবে পাড় ভেঙে এগোচ্ছে তাতে এবার সত্যিই স্কুলটির অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। সেইসঙ্গে সীমানা প্রাচীর তৈরি না হলে বাচ্চাদের নিয়ে ঝুঁকিও থাকছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”
উদ্বিগ্ন অভিভাবদের কয়েকজন জানান, নদী নিয়ে উদ্বেগের জেরে অনেকেই বাচ্চাদের অন্য এলাকার স্কুলে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে। এক অভিভাবক সজল অধিকারী বলেন, “যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে সেই আশঙ্কায় বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়।” অভিভাবক অলকা দাসের কথায়, “ পাঁচিল হলে চিন্তা এতটা হতো না।” স্কুলের শিক্ষক দেবাশিস রায়ের কথায়, শিশুদের উপর সাধ্যমত নজর রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy