Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মমতা হাওয়ায় উদ্বেগ, জোট পুরভোটেও

শহর তাঁদের দখলে। বিধানসভা ভোটে তাঁদের প্রার্থী পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ড থেকেই লিড পেয়েছিলেন। তবু বাম-কংগ্রেস জোট হলেই যে এ বারে সহজে রায়গঞ্জ চলে আসবে তাঁদের হাতে, এটা হলফ করে বলতে পারছেন না জোটপন্থীরা। প্রকাশ্যে তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, হারের আশঙ্কায় পুরসভায় প্রশাসক বসাতে পারে রাজ্য সরকার।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৯:৫৬
Share: Save:

শহর তাঁদের দখলে। বিধানসভা ভোটে তাঁদের প্রার্থী পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ড থেকেই লিড পেয়েছিলেন। তবু বাম-কংগ্রেস জোট হলেই যে এ বারে সহজে রায়গঞ্জ চলে আসবে তাঁদের হাতে, এটা হলফ করে বলতে পারছেন না জোটপন্থীরা। প্রকাশ্যে তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, হারের আশঙ্কায় পুরসভায় প্রশাসক বসাতে পারে রাজ্য সরকার। তবে ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, রাজ্য জুড়ে যে হাওয়া, পুরভোটে রায়গঞ্জের মানুষের একাংশ সেই হাওয়ায় গা ভাসালে তাঁদের বিপদ বাড়তে পারে।

বস্তুত, উত্তর দিনাজপুর জেলাতেও সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের ফল খারাপ নয়। ২০১১ সালে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে দু’টি আসনে জিতেছিল। পরে কংগ্রেসের দুই বিধায়ক তাদের দলে যোগ দেন। এ বারে কংগ্রেস ও বামেদের যৌথ শক্তির বিরুদ্ধে একক ভাবে লড়েও চারটি আসনে জিতেছে। করণদিঘিতে গত ৩০ বছর ধরে বামেদের হাতে ছিল। এ বারে সেই আসনটি তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। ইসলামপুরে আব্দুল করিম চৌধুরী হারলেও তৃণমূলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ইটাহার, চোপড়া, গোয়ালপোখরে। এমনকী, জিততে না পারলেও কালিয়াগঞ্জে তাদের সংগঠন আগের চেয়ে অনেক ভাল।

রায়গঞ্জেও বসে নেই শাসক দল। এখানে পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২২ জুলাই। রাজ্য সরকারের প্রস্তাব মেনে তাই জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। এই অবস্থায় কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা জোট করেই এই ভোটে লড়বে। সম্প্রতি কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের উত্তর দিনাজপুর জেলা নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে জোটের প্রার্থী কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত ৫১ হাজার ২৪৭ ভোটে পরাজিত করেছেন তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণেন্দু দে’কে। জেলায় মোহিতবাবু বরাবরই জোটপন্থী হিসেবে পরিচিত। যখন সিপিএমের সঙ্গে জোট হবে কি না, এই নিয়ে আলোচনায় কিছুটা হলেও নেতিবাচক সুর শোনা গিয়েছিল দীপা দাশমুন্সির গলায়, তখনও কিন্তু মোহিতবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা এককাট্টা হয়ে জোটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।

এ বারও মোহিতবাবুদের দাবি, জোট গড়ে লড়লে তবেই তাঁরা রায়গঞ্জ নিজেদের হাতে রাখতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘‘রায়গঞ্জবাসী জোটপ্রার্থী হিসেবে আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। সাধারণ মানুষের এই বিশ্বাসকে আমরা পুরভোটেও মর্যাদা দিতে চাই।’’ তিনি জানিয়েছেন, সে জন্যই বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করেই কংগ্রেস আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অপূর্ব পালও একই যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, শহরের স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পুরসভা নির্বাচনে লড়ার আঞ্চলিক সিদ্ধান্তের কথা রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কোনও আপত্তি করেননি।

রায়গঞ্জ পুরসভায় এত দিন ছিল ২৫টি ওয়ার্ড। এ বছর রাজ্য নির্বাচন কমিশন আসন পুনর্বিন্যাস করায় ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে তৃণমূলের দখলে থাকা একাধিক ওয়ার্ড ভাঙা হয়েছে। সংরক্ষণের জেরেও কংগ্রেস ও তৃণমূলের একাধিক বিদায়ী কাউন্সিলর এ বছর নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন না। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে আসন পুনর্বিন্যাস ও সংরক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু তৃণমূলের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলি কেন ভাঙা হল ও আসন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তৃণমূলেরই দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলিকে কেন প্রাধান্য দেওয়া হল, প্রশাসনের কাছে সেই প্রশ্ন তুলে আমরা উপযুক্ত পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছি। কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট কী বলছে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’’

মোহিতবাবুর আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার পুরভোট আটকে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত সে রকম হলে শহরের ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ বজায় রাখতে আমরা আইনের পথে যাব।

জেলাশাসক রণধীর কুমার বলেন, ‘‘আসন পুনর্বিন্যাস ও সংরক্ষণের বিষয়টি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত। এখানে আমার কিছু বলার নেই।’’

মোহিতবাবুদের আশঙ্কা ও দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিত আলাদা। স্থানীয় উন্নয়ন ও অনুন্নয়নের নিরিখে পুরসভা ভোট হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের রামধনু জোটকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। রায়গঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশ জোটের মিথ্যা আশ্বাসে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে জোটপ্রার্থীকে জয়ী করেছেন। রাজ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যেখানে তৃণমূল রয়েছে, সেখানে আসন্ন পুরভোটে রায়গঞ্জের মানুষ আর ভুল করবেন না বলেই আমাদের ধারণা। উন্নয়নের স্বার্থে জোটকে পরাস্ত করে তৃণমূলকেই পুরসভা উপহার দেবেন তাঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipal Election Alliance Congress CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE