Advertisement
১০ মে ২০২৪

সিপিএমের মিছিলে তৃণমূলের হামলায় উদাসীন পুলিশ, অভিযোগ

তৃণমূলের নেতা কর্মীরা মূল রীতিমতো পুলিশের সাহায্য নিয়ে সিপিএমের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। শামুকতলার ভাটিবাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। সিপিএমের অভিযোগ পুলিশ হামলা ঠেকাতে কোন ভূমিকা নেয়নি। পক্ষান্তরে ক্ষমতাশীল দলকে সাহায্য করেছে পুলিশ। এই হামলার ঘটনায় সিপিএমের চার কর্মী জখম হয়েছেন। এর মধ্যে অজিতকুমার ঘোষ ও দ্বিজদাস দেবনাথ নামে প্রবীণ দুই কর্মীর মাথা ফাটে।

হামলায় আহত সিপিএম কর্মী। ছবি: রাজু সাহা।

হামলায় আহত সিপিএম কর্মী। ছবি: রাজু সাহা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:৪৪
Share: Save:

তৃণমূলের নেতা কর্মীরা মূল রীতিমতো পুলিশের সাহায্য নিয়ে সিপিএমের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। শামুকতলার ভাটিবাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। সিপিএমের অভিযোগ পুলিশ হামলা ঠেকাতে কোন ভূমিকা নেয়নি। পক্ষান্তরে ক্ষমতাশীল দলকে সাহায্য করেছে পুলিশ। এই হামলার ঘটনায় সিপিএমের চার কর্মী জখম হয়েছেন। এর মধ্যে অজিতকুমার ঘোষ ও দ্বিজদাস দেবনাথ নামে প্রবীণ দুই কর্মীর মাথা ফাটে। তাঁদের দু’জনের জখম গুরুতর হওয়ায় তাঁদের ভাটিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সিপিএমের আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির সদস্য সন্তোষ সরকারের অভিযোগ, “ভাটিবাড়িতে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূল সিপিএমের মিছিলে হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ ‘‘পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূল আমাদের মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা নেয়। পুলিশ হামলা ঠেকাতে কোনও ভূমিকা নেয়নি। পুলিশ যদি সামান্য বাধা দিত, এই হামলার ঘটনা ঘটত না।’’ তৃণমূল এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া অবশ্য বলেন, “অভিযোগ সঠিক নয়। দুই দলের লোকজন মুখোমুখি হওয়ায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কোন ভূমিকা নেয়নি এটা ঠিক নয়। পুলিশ ভুমিকা নিয়েছে তাই বড় রকমের কিছু ঘটেনি। তবে ওই সময় শামুকতলার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।’’

সিপিএমের ভাটিবাড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক কিশোর দাসের অভিযোগ, ‘‘এদিন সকাল ছ’টা থেকে লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে তৃণমূল। সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে। ভাটিবাড়িতে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে। ওরা আমাদের বন্‌ধ তোলার চেষ্টা করে। আমাদের পতাকা ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ওদের মিছিল শেষ হওয়ার পরে আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল বের করি। হঠাৎই আমাদের মিছিলে হামলা চালায় তৃণমূল। আমাদের কর্মী সমর্থকদের উপর মারধর শুরু করে। আমাদের দুই কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেয় এক কর্মীর হাত ও বুকে প্রচন্ড আঘাত লাগে। আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে কপালে আঘাত লাগে।’’ রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নীরব দর্শক ছিল। তৃণমূলের দশ নেতা কর্মী বিরুদ্ধে শামুকতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ হামলাকারিদের গ্রেফতার না করলে আন্দোলনে নামা হবে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে পঁয়ষট্টি বছরের জখম সিপিএম কর্মী অজিতকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর তৃণমূল এ ভাবে হামলা চালাবে ভাবিনি। আমার মাথায় লাঠির আঘাত লেগে গলগলিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। গায়ের জামা গেঞ্জি রক্তে ভিজে যায়। মাথা ঘুরতে থাকে। এখনও প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।’’

সিপিএমের বিরুদ্ধে পালটা হামলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম কর্মী সমর্থকরাই মিছিল করার নাম করে তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে তৃণমূলের চার কর্মী সমর্থক জখম হয়েছেন। তাদের ভাটিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য কাজল দত্ত যুব নেতা রানা পাল ও জগদীশ মজুমদারদের অভিযোগ, “আমরা মিছিল শেষ করে মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলাম। ওই সময় সিপিএম মিছিল বের করে। আমাদের পাশ দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় হঠাৎ একদল সিপিএম কর্মী আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এখন সিপিএম আমাদের বিরুদ্ধে হামলার মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। এই ঘটনায় চার সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে শামুকতলা থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। দ্রুত তাদের গ্রেফতার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে।’’

এই ঘটনায় এদিন সকাল থেকে ভাটিবাড়িতে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পরে সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের হলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। শামুকতলা থানার ওসি পঙ্কজ থাপার দাবি, ‘‘দুই পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’’ পুলিশ উদাসীন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশ সক্রিয় ছিল বলেই সংঘর্ষ বড় আকার নিতে পারেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE