মেয়েরা অনাদৃত, সন্দেহ নাই। তবে অবহেলা কোথায় ও কত তীব্র, তাহা নূতন করিয়া নজরে আসিয়াছে। স্বস্তি ইহাই যে, বৈষম্য কমিয়াছে বলিয়াই নজরে আসিয়াছে। হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখিতে ‘অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি’ পদ্ধতির সাহায্যে ধমনীতে একটি ধাতব নল বা ‘স্টেন্ট’ বসাইতে হয়। এ দেশে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির অধিকাংশই হয় পুরুষদের, মহিলাদের ভাগ্যে জোটে বড় জোর সিকিভাগ, ইহা সমীক্ষায় প্রতিষ্ঠিত। যদিও হৃদরোগের ঝুঁকি পুরুষদের কিছু অধিক, কিন্তু তাহাতে এতটা পার্থক্যের ব্যাখ্যা চলে না। চিকিৎসকেরা সন্দেহ করিতেন, মহিলাদের প্রতি সমাজের মনোভাবের জন্যই তাহাদের উপর এই জীবনদায়ী পদ্ধতি কম প্রযুক্ত হইতেছে। মহারাষ্ট্রে একটি সমীক্ষা তাহার প্রমাণ দিল। সে রাজ্যের সরকার এবং একটি জাতীয় বিমা সংস্থা যৌথ ভাবে জীবনদায়ী চিকিৎসার জন্য মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য বিমা প্রকল্প আনিয়াছিল ২০১২ সালের জুলাই মাসে। তাহার আগে ও পরে মুম্বইয়ের একটি প্রধান হাসপাতালে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পরিসংখ্যান হইতে চিকিৎসক-গবেষকরা দেখিয়াছেন, মহিলা রোগীর অনুপাত ষোলো শতাংশ হইতে সাতাশ শতাংশ হইয়াছে। ইহা সম্ভব হইয়াছে বিমার জন্য। বিমা কোম্পানি ও সরকারের কল্যাণে সেই মেয়েরাও চিকিৎসা পাইতেছেন, যাঁহারা আগে অচিকিৎসিত থাকিতেন। প্রসঙ্গত, কিছু দিন পূর্বের জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট দেখাইয়াছে, পুরুষরা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হ’ন বেশি, মহিলারা সরকারি হাসপাতালে। এবং পরিবার হাসপাতালে দাখিল রোগী-পিছু খরচও পুরুষদের জন্যই অধিক করিয়া থাকে। গ্রামে সেই ব্যবধান পাঁচ হাজার টাকা, শহরে সাত হাজার টাকা। প্রথাগত চিকিৎসার বাহিরে ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, মন্ত্রপূত জলে কাজ চালাইতে মহিলারাই অধিক উৎসাহী। এখন স্বাস্থ্যবিমা মহিলাদের এই অবহেলাকে অতিক্রম করিবার পথ দেখাইতেছে।
সরকারি প্রকল্পগুলির গাফিলতি অধিক চোখে পড়ে, সাফল্য চোখ এড়াইয়া যায়। বিশেষত যাহা প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল না, তেমন কোনও অযাচিত লাভ অলক্ষিত, উপেক্ষিত থাকিয়া যায়। যদি কোনও প্রকারে তাহা প্রকাশ পায়, তবে সেই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি দ্বিগুণ আনন্দের কারণ হইয়া ওঠে। তেমনই ঘটিয়াছে এই স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে। যাহা সুচিকিৎসার সহিত দরিদ্র মানুষের ব্যবধান ঘুচাইতে শুরু হইয়াছিল, তাহা মহিলাদের সহিত চিকিৎসার ব্যবধান ঘুচাইতেছে। এই পরিণামের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। প্রান্তিক মানুষের প্রতি ন্যায় করাই রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ। বিমার দ্বারা তাহা সম্ভব হইয়াছে।
সরকারি নীতি রচনার প্রশ্নে ইহা দুইটি ইঙ্গিত বহন করিতেছে। এক, বিমা প্রান্তিক মানুষদের জীবনে বাস্তবিক সুরক্ষা আনিতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে বিমা লইয়া সমস্যা থাকিতে পারে, কিন্তু কিছু অপচয়ের নিদর্শন মিলিলেই তাহার প্রতি খড়্গহস্ত হইবার কারণ নাই। প্রচলিত হিসাবের বাহিরেও তাহা বৈষম্যের প্রতিকার করিতেছে— সেই সম্ভাবনা বাতিল করা চলে না। দুই, সকল শ্রেণির মহিলার স্বাস্থ্যবিমা প্রয়োজন। বিমাকে স্ত্রীরোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নহে। গর্ভাশয়, ডিম্বাশয়, স্তন ব্যতীত মহিলাদের শরীরে আরও প্রত্যঙ্গ রহিয়াছে। সেগুলিরও চিকিৎসা প্রয়োজন। পরিবার তাহা না জুগাইলে রাষ্ট্রকেই সে দায় লইতে হইবে। তাহা না হইলে একবিংশের ভারতেও অচিকিৎসিত থাকিবে মেয়েরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy