Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

আপেক্ষিক

বি শ্ব উষ্ণায়নে যে পৃথিবীর স্বাস্থ্যহানি ঘটিয়াছে, তাহা কাহারও অবিদিত নহে। তজ্জনিত সমস্যাদির মোকাবিলা কী রূপে করা যায়, সে ব্যাপারেও ভাবনা বিস্তর।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

বি শ্ব উষ্ণায়নে যে পৃথিবীর স্বাস্থ্যহানি ঘটিয়াছে, তাহা কাহারও অবিদিত নহে। তজ্জনিত সমস্যাদির মোকাবিলা কী রূপে করা যায়, সে ব্যাপারেও ভাবনা বিস্তর। এই গ্রহে প্রাণ যে হেতু এক অতি মূল্যবান সম্পদ এবং বিপদাপন্ন আবহাওয়া যে হেতু সেই সম্পদের পক্ষেও অশনিসংকেত, সে হেতু উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা স্বাগত। যে সব পরিবেশবাদী বিশেষজ্ঞ উষ্ণায়নের প্রতিকারে বিবিধ উদ্যোগ উদ্ভাবন করিতেছেন, তাঁহাদের মঙ্গল হউক। এক্ষণে আলোচ্য উষ্ণায়নজনিত এমন এক সমস্যা, যাহার প্রতিকার কী রূপে করা যায়, সে ব্যাপারেই ঐক্যমত্যে পৌঁছান সম্ভব হয় নাই। সমস্যাটির সহিত আবহাওয়ার সম্পর্ক নাই, তথাপি উহা এক উপদ্রব হিসাবে হাজির। রসায়নবিদ নহে, চিন্তিত ভূতাত্ত্বিকেরা। এই তথ্য হইতেই বুঝা যায় কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।

সমস্যাটি সমুদ্রের জলতল সংক্রান্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা মাপিবার জন্য নির্দিষ্ট স্থানটি ওই জলতলের কতটা উপরে, তাহা নির্ণয় করিবার পদ্ধতি চালু রহিয়াছে। কিন্তু উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের জলতলের নিজের উচ্চতা বৃদ্ধি পাইতেছে। এমতাবস্থায় কোনও স্থানের উচ্চতা কী রূপে নির্ণয় করা যাইবে? বলা বাহুল্য, প্রশ্নটি পূর্বেও জটিলতামুক্ত ছিল না। বিশ্বের নানা স্থানে সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ এবং জলের তাপমাত্রায় তারতম্য আছে। সে কারণে জলতল কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। কোনও স্থানের উচ্চতা নির্ণয়ে কোন সমুদ্রের জলতলের সহিত তাহার তুলনা করা হইতেছে, তাহা গুরুত্বপূর্ণ হইয়া দাঁড়ায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন অক্ষাংশ কিংবা দ্রাঘিমাংশ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা মিলিত হইয়া মাপের ‘জিরো পয়েন্ট’ বা ‘শূন্য বিন্দু’ নির্ধারণ করেন, তখন কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বিচারের বাহিরে থাকিয়া যায় উচ্চতা মাপিবার প্রশ্নটি। ফলে এক্ষণে এক-এক স্থানে এক-এক ব্যবস্থা। উচ্চতার শূন্য বিন্দু সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় একশোটি। ইংল্যান্ড দেশের কোনও স্থানের উচ্চতা মাপে নিউলিন-এ সমুদ্রের জলতলের তুলনায়, উত্তর আয়ার্ল্যান্ড তাহা মাপে বেলফাস্ট শহরকে শূন্য ধরিয়া।

তারতম্য দূর করিয়া উচ্চতার প্রকৃত মান পাওয়া যে জরুরি, তাহা না বলিলেও চলে। প্রকৃত মান নির্ণয়ের প্রশ্নে আসিয়া পড়ে এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গের প্রসঙ্গ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জরিপের সময় এভারেস্ট-এর উচ্চতা মাপা হইয়াছিল করাচি শহরের উপকূলে সমুদ্রের জলতলের তুলনায়। বর্তমানে ওই শৃঙ্গের উচ্চতা ধরা হয় ৮,৮৪৮ মিটার। আমেরিকার ভূতাত্ত্বিকদের ১৯৯৯ সালের জরিপে অবশ্য ওই মান ৮,৮৫০ মিটার। ভূগর্ভে টেকটনিক প্লেট-এর সরণের ফলে এভারেস্ট কিঞ্চিৎ বেশি উঁচু হয়। ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের ফলে ওই শৃঙ্গ স্বল্প উচ্চতা হারাইয়াছে। এই কারণে সমুদ্রে জলতল, জলের নীচে ভূত্বক নাকি পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু— কোনটির তুলনায় উচ্চতা মাপা যায় তাহা ভূতাত্ত্বিকদের চিন্তার বিষয়। হাওয়াই-এর আগ্নেয়গিরি মনা কিয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ৪,২০৭-মিটার উঁচু হইলেও জলের তলায় ভূত্বক হইতে ১০,২০৩ মিটার উঁচু। আর পৃথিবীর কেন্দ্র বিচার্য হইলে এভারেস্ট পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের মর্যাদা আজই হারায়। পৃথিবীর পেটটি স্ফীত বলিয়া এই কেন্দ্রকে শূন্য বিন্দু ধরিলে ইকুয়েডর-এর শৃঙ্গ ক্রিসবোরাজে এভারেস্টের চেয়ে ২ কিলোমিটার বেশি উঁচু!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE