Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

ইফতার রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ইফতার ভোজে যান নাই। তাঁহার মন্ত্রিবর্গকেও ইফতার ভোজ দিতে বারণ করিয়াছেন। অতঃপর প্রত্যাশিত ভাবেই ভারতীয় রাজনীতিতে ফের সাম্প্রদায়িকতা বিতর্কটি মাথা চাড়া দিয়াছে, ঘোলা জলে রোহিতাদি শিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলিতেছে। কিছু বিড়ম্বনারও সৃষ্টি হইয়াছে বিরোধী কংগ্রেস সভানেত্রী নাকি প্রথমে বর্ষীয়ান নেতা এ কে অ্যান্টনির পরামর্শে ইফতার ভোজ না দেওয়া মনস্থ করিয়াছিলেন, কিন্তু পরে, সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানিয়া, মত বদলাইয়াছেন।

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ইফতার ভোজে যান নাই। তাঁহার মন্ত্রিবর্গকেও ইফতার ভোজ দিতে বারণ করিয়াছেন। অতঃপর প্রত্যাশিত ভাবেই ভারতীয় রাজনীতিতে ফের সাম্প্রদায়িকতা বিতর্কটি মাথা চাড়া দিয়াছে, ঘোলা জলে রোহিতাদি শিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলিতেছে। কিছু বিড়ম্বনারও সৃষ্টি হইয়াছে বিরোধী কংগ্রেস সভানেত্রী নাকি প্রথমে বর্ষীয়ান নেতা এ কে অ্যান্টনির পরামর্শে ইফতার ভোজ না দেওয়া মনস্থ করিয়াছিলেন, কিন্তু পরে, সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানিয়া, মত বদলাইয়াছেন। হয়তো অন্য উপদেষ্টারা তাঁহাকে মন্ত্রণা দিয়াছেন যে, ভোজসভা আহ্বান না করিলে তিনি মোদীপথের পথিক বলিয়া গণ্য হইবেন। সনিয়া গাঁধী বরং দলনেতাদের পরিবর্তে দিল্লির শাহি ইমাম কিংবা শরিয়তি বোর্ডের সদস্যদের নিকট বুদ্ধি ধার করিতে পারিতেন। মুসলিম সমাজের এই নেতারা বিগত কয়েক বত্‌সর যাবত্‌ রাজনীতিকদের আহূত ইফতার ভোজকে তামাশা বলিতেছেন। উপবাস, কৃচ্ছ্রসাধন এবং নামাজ ব্যতিরেকে রমজান মাস যে নিরর্থক, বারংবার মনে পড়াইয়া দিয়াছেন। কিন্তু রাজনীতি নাহি শোনে ধর্মের বাণী!

অনেকে ইতিহাসের কান ধরিয়া টানিতেছেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী ও মনমোহন সিংহের আমলে প্রধানমন্ত্রী-আহূত ইফতার ভোজ স্মরণ করিয়া নরেন্দ্র মোদীকে ঐতিহ্যচ্যুত বলিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়িতেছেন। কিন্তু ঐতিহ্য কি এতই সহজে তৈয়ারি হয়? খিলাফত আন্দোলনে সমর্থন জানাইতে মহাত্মা গাঁধীকে ইফতার ভোজ দিতে হয় নাই। স্বাধীন ভারতে জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আমলে এই রীতি ছিল না। অবাঞ্ছিত রাজনীতির আরও নানা দৃষ্টান্তের ন্যায় ইফতার রাজনীতিও আরম্ভ হয় ইন্দিরা গাঁধীর আমলে। তাহার পরই নেতাদের কে বা আগে ভোজ করিবেক দান গোত্রের চেতনা শুরু। অতঃপর যত দিন গিয়াছে, একের পর এক কুত্‌সিত ঘটনা। নব্বইয়ের দশকে বিজেপি নেতা বঙ্গারু লক্ষ্মণ ইফতার ভোজ দিয়াছিলেন, কিন্তু সেখানে সন্ধ্যার মগরিব নামাজের বন্দোবস্ত ছিল না, পরে তাড়াহুড়া করিয়া ব্যবস্থা হইলে দেখা গেল, নামাজিদের বসার আসন পূর্বমুখে! গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মোদী কোনও দিন ইফতার ভোজ দেন নাই, ইহা লইয়া চর্চা অব্যাহত। কিন্তু তাঁহার পূর্বসূরি কেশুভাই পটেল যে ইফতার ভোজ দিতেন, সেখানে কেবল নিরামিষ আহারের বন্দোবস্ত থাকিত। ইহা কি এক ধরনের অমর্যাদা নহে? এই সংক্রমণ বলিউডেও ছড়াইয়াছে। মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকিলেও দুই মহানায়ক ইফতার ভোজে একত্র পোজ দিয়া ভিন্ন দিকে চলিয়া যান। উপবাসের পবিত্রতা বলিউডি দৃশ্যে পর্যবসিত।

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপটি উপরোক্ত সব প্রহসনের প্রেক্ষিতে বিচার করাই যুক্তিসঙ্গত। অগ্নি ব্যতিরেকে ধূম উত্‌পন্ন হয় না জানিবার জন্য ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়নের প্রয়োজন নাই। রোজা, শিবরাত্রি, অম্বুবাচীর উপবাসশেষে সকলকে চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় সহযোগে আমন্ত্রণ জানানো মন্ত্রীদের কাজও নহে। তাঁহারা বরং দরিদ্র সামাজিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে যথাযথ নীতি প্রণয়ন করিবেন, তাহাই কাম্য। আব্দুল কালাম রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকিবার সময় ইফতার ভোজ দিতেন না, সেই অর্থ দরিদ্রদের দান করিতেন। ইফতার ভোজ প্রদান করিলে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং না করিলে সাম্প্রদায়িক আচরণ এই সমীকরণ হাস্যকর। ইজরায়েলের দূতাবাস গত বত্‌সরও ইফতার ভোজ দিয়াছিল। সনিয়া গাঁধীর বুদ্ধিদাতারা নিশ্চয় সেই দেশটিকে মুসলিমপ্রেমিক বলিয়া গণ্য করেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE