Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ ৩

কী করে নোবেল পাব?

বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে অহেতুক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি দিলে গবেষণার মান বাড়বে। লিখছেন বিকাশ সিংহ।রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পুরনো বিমর্ষতা, দুঃখ এমনকী আশঙ্কা আবার নতুন করে তুলে ধরলেন: সি ভি রামনের (উপরের ছবি) পরে কেন কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানে কেউ নোবেল পাননি, দ্বিতীয়ত, বিশ্বের প্রথম ২০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ভারতের কোনও প্রতিষ্ঠান স্থান পায়নি, কেন? ব্যাপারটা একটু বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পুরনো বিমর্ষতা, দুঃখ এমনকী আশঙ্কা আবার নতুন করে তুলে ধরলেন: সি ভি রামনের (উপরের ছবি) পরে কেন কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানে কেউ নোবেল পাননি, দ্বিতীয়ত, বিশ্বের প্রথম ২০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ভারতের কোনও প্রতিষ্ঠান স্থান পায়নি, কেন? ব্যাপারটা একটু বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

সি ভি রামনকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ২৯ বছর বয়সে পালিত অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন। রামন সাহেবের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। তাঁর গবেষণার পুঁজির টাকা, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁজির সঙ্গে অনায়াসে তুলনা করা যায়। সেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক’জন অধ্যাপক, অন্তত বিজ্ঞানে, জগত্‌-তুলনীয় গবেষণা করার সুযোগ পান? আনুষঙ্গিক বিজ্ঞানে আরও সঙ্গিন অবস্থা। টাকার ব্যবস্থাও নেই, উত্‌সাহও প্রায় শূন্য, পরিবেশ অসম্ভব। স্বাধীনতার পর থেকে একাধারে নিয়মের জঞ্জাল আর আমলাদের হুকুম গবেষণার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। ‘এটাও করতে পারবেন না, এর প্রিসিডেন্স নেই।’ আরে বাবা নতুন আবিষ্কারে যদি প্রিসিডেন্স থাকে তা হলে সে আবিষ্কার আর আবিষ্কার নয়, তা হল দিনগত পাপক্ষয়। স্যার আশুতোষ সেটা বুঝতেন। তিনি প্রথম থেকেই ঘোড়ার লাগাম খুলে নিয়েছিলেন।

আর একটা ব্যাপার বলতেই হয়, সি ভি রামন তাঁর কর্তব্য পালন করার পর ভোরের দিকে, সন্ধ্যার পরে, এমনকী ছুটির দিনেও কাজ করতেন। অদম্য কৌতূহল তাঁকে অস্থির করে তুলত। প্রশ্নের সমাধান করে তবেই রেহাই এই ছিল তাঁর ধর্ম। এই অধ্যবসায়, এই সাধনা ক’জনের মধ্যে এখন আছে?

সত্যেন বোস মহাশয়কেও দেখেছি, সব সময়েই এক সাধকের সাধনায় তিনি মগ্ন থাকতেন। খ্যাতি বা সমাজের কেউকেটা হওয়ার কোনও বাসনাই ছিল না। যখন প্রশ্ন করতুম যে কেন উনি নোবেল পাননি, যেখানে একটা নয় দুটো নোবেল পাওয়া উচিত ছিল, মৃদু হেসে বলতেন, ‘আরে আবিষ্কার হলেই তো হল, কে আবিষ্কার করেছে, সেটা বড় ব্যাপার নয়।’ এমন লোক পাবেন?

এক ভারতীয় বৈজ্ঞানিককে আমি কাছ থেকে দেখেছি যিনি নোবেল প্রায় পাব পাব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল না। ক’জন নোবেলজয়ী তাঁর সম্বন্ধে বিশ্ব দরবারে বলবে? চিত্‌কার চেঁচামিচি করে নিজেদের দেশের ক্যান্ডিডেটকে সাপোর্ট করবে। বৈজ্ঞানিক সেটা ভাল ভাবেই বুঝেছিলেন। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে ইংলন্ডের কেম্ব্রিজে এলেন। নোবেল একেবারে ঘরের দুয়ারে। সি ভি রামনের প্রশংসাপত্র স্বয়ং লডর্র্ রাদারফোর্ডই লিখেছিলেন। কেম্ব্রিজে তখন নোবেলজয়ীর ভিড়।

কেম্ব্রিজে রাস্তাঘাটে আজও নোবেলজয়ীর ভিড়। কিন্তু মনে রাখতে হবে কেম্ব্রিজ, সরকারের পয়সায় চলে না। তাঁদের নিজস্ব পুঁজি যথেষ্ট। গত আটশো বছর ধরে এই রেওয়াজ, এই ধারা। আমলাদের ব্যাগড়া দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাধীনতা দিয়ে দেখতে হবে, তারা গবেষণাকে কোন পথে নিয়ে যেতে পারে। তাতে সুফল পাওয়া সম্ভব।

ইউ জি সি যে দায়িত্ব পালন করতে পারত, তার বিন্দুমাত্র আভাস নেই। এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজতে হবে, ব্যবস্থাপনায় একেবারে নতুন পদ্ধতি আনতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে।

অন্য যে প্রশ্ন কেন পৃথিবীবিখ্যাত ২০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমাদের কোনও প্রতিষ্ঠানের নাম নেই? গবেষণার মান যদি অনেক উপরের দিকে যায়, প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিষ্ঠা বাড়বে। আর বিচার পদ্ধতির যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্থান বিচার করার একটা সাধারণ মাপকাঠি হল ক’জন বিদেশি ছাত্র আছে প্রতিষ্ঠানে। কেম্ব্রিজ এই ব্যাপারে খুব বেশি নম্বর পায় আর আমরা শূন্য।

শেষে বলি, বিজ্ঞানকে সত্যিই কেউ কি খুব একটা পাত্তা দেয় এই সমাজে? বুদ্ধিজীবীরাই তো সর্বত্র সব পাত্তা পেয়ে বসে আছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

post editorial dr. bikash sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE