Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাটাকুটি খেলা

এ বার ওভারিটা বাদ দিয়ে দিলাম। আরে, মানুষের প্রথম ইনস্টিংক্ট হচ্ছে সারভাইভ করা। নিরাপদে বাঁচতে গেলে বাথরুমে সিসিটিভি লাগাতে হবে। বাগানে চুয়াল্লিশটা ন্যাজকাটা ডোবারম্যান ছাড়তে হবে। অতিথির এক্স-রে করে তবে বাড়ি ঢুকতে দিতে হবে। এগুলো তো বেসিক কাজ। সে ভাবেই, যদি মনে হয় কোথাও একটা ক্যানসারের সম্ভাবনা আছে, সেটা তুরন্ত কেটে বাদ দিতে হবে।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

এ বার ওভারিটা বাদ দিয়ে দিলাম। আরে, মানুষের প্রথম ইনস্টিংক্ট হচ্ছে সারভাইভ করা। নিরাপদে বাঁচতে গেলে বাথরুমে সিসিটিভি লাগাতে হবে। বাগানে চুয়াল্লিশটা ন্যাজকাটা ডোবারম্যান ছাড়তে হবে। অতিথির এক্স-রে করে তবে বাড়ি ঢুকতে দিতে হবে। এগুলো তো বেসিক কাজ। সে ভাবেই, যদি মনে হয় কোথাও একটা ক্যানসারের সম্ভাবনা আছে, সেটা তুরন্ত কেটে বাদ দিতে হবে। এতে নাক কোঁচকাবার, শিউরে ওঠার, হেসে গড়াবার তো কিচ্ছু নেই। আসলে আমি সুন্দরী গ্ল্যামারাস পয়সাওলা বিখ্যাত, তাই মাঠেঘাটে হিংসে থিকথিক করছে। তার ওপর দিয়ে বুলেটপ্রুফ গাড়ির টায়ার চালিয়ে রোজ কাজে বেরনো কি চাট্টিখানি কথা? ওঃ, কী পরিমাণ আত্মত্যাগ যে করছি মানুষের ভালর জন্যে, শুধু আমিই জানি আর আমার ইন্টারভিউ যারা ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড ছাপে তারাই জানে। তবে নোবেল শান্তিটা পেতে গেলে বোধহয় আরও কিছু দিন ওই মশামাছিওলা ঘিঞ্জি দেশগুলোয় ঘুরেঘারে বেড়াতে হবে। কাঠি-কাঠি হাত-পা আর ইয়াব্বড় পিলেওলা বাচ্চাগুলোকে আদরও করতে হবে। অবশ্য ফেমিনিস্ট অ্যাঙ্গলটা যা ফেঁদে রেখেছি, কারও বাবা, সরি, মা পারবে না!

যে-নারী রূপ খেলিয়ে বিশ্বকে সম্মোহিত রেখেছে, যার সেক্স অ্যাপিলে কোটি কোটি মানুষ ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার মতো থরথর, যার টপলেস ছবি দেখার জন্যে লোকে মাঝরাত্তিরে তিন মাইল হামা টানে, সে যদি নিজ যৌনতার ধ্বজা দুটিকে অবহেলায় কচাত্‌ বাদ দিয়ে দেয়, তা হলে টোটাল পুংজাত কেমন হাঁ হাঁ করে ওঠে! ওই হাঁ করিয়ে দেওয়াটা আমার এ যাবত্‌ শ্রেষ্ঠ সুপারহিট কাণ্ড! কাগজে, টিভিতে, পাব-এ, পোডিয়ামে, আমার স্তনকর্তন ছাড়া তখন কোনও কথা নেই! সবাই বলছে, উনি যদি স্তন বাদ দিতে পারেন, তা হলে তো বাঘের ডোরা বাদ দিলেই হয়! কিংবা মেসি-র পা! কেউ মুচ্ছো যাচ্ছে, কেউ বলছে বাদ দিয়ে ও-দুটিকে কোথায় ফেলল রে, যদি ছিনতাই করে আনা যায়! কিন্তু সব্বাই যেটাকে কুর্নিশ করছে: আমার সাহস। ফেমিনিস্টরা নির্ঘাত ভেবেছে, অ্যঁা! আমরা এর নামে দই পাতিনি? এ তো সেরা পেট্রিয়ার্কি-ঘাতিনী! পুরুষের লোলুপ দৃষ্টিটাকে কেমন সপাট লাত্থিটা মারল! অ্যাদ্দিন ধরে যে-জেল্লার জন্য নাগাড়ে হাততালি আর সোনাদানা, এক লহমায় তা ত্যাগ করতে কতটা ধক আর গভীর দর্শন দরকার! ওঃ, যা খোয়ালাম, হুড়হুড়িয়ে পেলাম তার দশ গুণ। ঠিক যেমন বড় প্রাইজ নেওয়ার চেয়ে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে ছ’শো গুণ গ্ল্যামার, তেমনই সুপার-যৌবনবতী অভিনেত্রী হয়ে স্বেচ্ছা-নিস্তনী হওয়ার মধ্যে দুশো পাতার সমাজতাত্ত্বিক বই গমগম করছে। সিনেমায় মেয়েদের প্রতি যুগ যুগ ধরে যে লোলুপ-লোফার চাউনিটা ক্যামেরার, দর্শকের, পরিচালকেরও, তাকেই চ্যালেঞ্জ করলাম। নাক নেড়ে দিয়ে বললাম, বড় হও সোনা, মেয়েদের মন দেখতে চাও, স্তন নয়।

নিন্দুকগুলোর জিভে বিছুটি! ব্যাটারা বললে, অ্যাদ্দিন যে আমি পেট্রিয়ার্কির স্টেজে তাদেরই ফর্মুলা টায়ে-টায়ে মেনে লাচ দেখালাম আর ব্যাংক ব্যালান্স ফাঁপালাম, তার কী হবে? কী আবার হবে? লোকে কি পেট থেকে পড়েই উচিত-বাদী হয়ে যায়? একটা বিকামিং নেই? বাল্মীকি থেকে রত্নাকর হওয়ার লং প্রক্রিয়া নেই? রামায়ণ লেখার সময় কি রত্নাকর আগের পয়সাগুলো ফেরত দিয়েছিল? খাগের কলম কিনতে লাগেনি? অবশ্য এই নিন্দুকগুলো কি মানুষ? এই যে এত রকমের এত গা-রঙের সন্তান পুষ্যি নিচ্ছি, কোথায় দুহাত তুলে পুজো করবে, তা না, চুটকি ছড়াচ্ছে! যখন বললাম, আমার স্তন-ত্যাগের কথা সন্তানদের বোঝাতে সবচেয়ে কষ্ট হয়েছে, চুটকিবাজ লিখল, বোঝাবে কী করে, ও তো আফ্রিকান ভাষা জানে না! এই যে প্রথমে স্তন তার পর ওভারি বাদ দিলাম, ব্যাটারা লিখছে, ও তো সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করাচ্ছে, শুধু এক বারে পুরোটা করাবার সাহস নেই। এক জন আবার ফুট কেটেছে, ও ব্র্যাড পিট-কে ছেড়ে যাচ্ছে, তবে পিস পিস করে! শয়তান! শোন ভাই, এই কাটাকুটির জন্যে মেডিকাল বিশ্বের লোকেরা আমাকে সচেতনতার ব্র্যান্ড অ্যামবাসাডর করবে, আজ নয় কাল।

যেখানে এই গ্রহের অধিকাংশ বুড়বক নিজের শরীর সম্পর্কে কিস্যু না জেনে কাল কাটাচ্ছে, হাসপাতাল দেখলে শুধু ভয় পাচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি অবৈজ্ঞানিক বিলাপ শানাচ্ছে, সেখানে আমি কত দশমিক কত পার্সেন্ট বিপদ কোথায় লুকিয়ে আছে গাদা গাদা টেস্ট করিয়ে, ফটাফট নির্ভীক বন্দোবস্ত করছি, এখেনে কেটে ওখেনে ছেঁটে একদম সেফ কাস্টমাইজড ভার্সন করে নিচ্ছি, পোশাকের মতোই ট্রিট করছি শরীরটাকে, এই ম্যাক্সি তো এই মিনি, এ বিপ্লব তোরা বুঝবি কেমনে? তোদের সমাজ-ধোলাই ব্রেন বলে, রূপ ইম্পর্ট্যান্ট। আমি বলি, জরুরি স্রেফ অন্তরাত্মা। আমি তো বাতের রোগীকে পরামর্শ দেব, পা কেটে ফেলুন। মশারি নেই? হাতে মশা কামড়াতে পারে? হাত কাটুন! শভিনিস্ট হয়ে উঠছেন? অণ্ডকোষ কাটুন, ইমিডিয়েটলি! আরে বাবা, স্টিরিয়োটাইপ মানুষ হয়ে জীবন বিতিয়ে লাভ কী? কী বললেন? অবধারিত দরকার পড়লে তো এ সব নিশ্চয় বাদ দিতে হবে, কিন্তু আগাম ভয় পেয়ে করার মানে নেই? আরে! সাবধানের মার আছে? বাচ্চার ডান কানটা এখনই কুচলে কেটে দিন। অংক টিচারের সম্ভাব্য কানমলা থেকে দ্রুত রেহাই।

পেঁচোরা বলছে, বছর দশ বাদে কেটেকুটে আমার আর কিছু বাকি থাকলে হয়। ওরে ব্যাটারা, আমি একমাত্র নট, যার দেহপটের চেয়ে থট বেশি পাত্তা পাবে। একটাই জাস্ট ভয়। মাথায় না ক্যানসারের থ্রেট ধরা পড়ে। অবশ্য, ব্র্যাড বলেছে, তাতেও রোল পাওয়ার অভাব হবে না। ও প্রোডিউস করবে, আর সব সিনেমারই কেন্দ্রে থাকবে এক জন ধাঁ-রূপসি কন্ধকাটা!

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE