Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

কী ভাষা! খাসা

শি ক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বড় উপকার করিতেছেন। রাজ্যের চার দিকে কী ঘটিতেছে, কেমন ভাবে ঘটিতেছে, তাহার একটি প্রামাণ্য দৃষ্টান্ত হিসাবে প্রত্যহ নিজেকে সর্বসমক্ষে উদ্ভাসিত করিয়া চলিতেছেন।

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

শি ক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বড় উপকার করিতেছেন। রাজ্যের চার দিকে কী ঘটিতেছে, কেমন ভাবে ঘটিতেছে, তাহার একটি প্রামাণ্য দৃষ্টান্ত হিসাবে প্রত্যহ নিজেকে সর্বসমক্ষে উদ্ভাসিত করিয়া চলিতেছেন। তিনি না থাকিলে রাজনীতির নামে চতুর্দিকের পরিব্যাপ্ত অরাজকতা ও অনাচারের প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুঁজিয়া খামখা ইতিউতি অন্ধকার হাতড়াইয়া মরিতে হইত। প্রতি সম্ভাব্য ও অসম্ভাব্য প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যবাসীকে এই আলো-আঁধারি হইতে একা হাতে আলোকে লইয়া আসেন। তাঁহার উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যমাণিকই তৃণমূল শাসনতন্ত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃত রূপটির উপর স্পটলাইট ফেলিয়া জ্ঞানের সিঁড়ির আর এক ধাপ উঠিবার সহায়ক। শেষতম মাণিক্যটি মিলিল গত সপ্তাহান্তে, যখন তিনি বলিলেন: ছাত্রদের ফি না কমাইলে, হাংলু হউক আর যে হউক, তাহাকে রাখিব না! প্রসঙ্গ: ছাত্রদের ফি কমাইবার দাবিতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী-কর্তৃক রাত্রিব্যাপী ঘেরাও করিয়া রাখিবার ঘটনা। এক বাক্যের ঘায়ে কতকগুলি বিষয় তিনি স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন, গনিয়া লওয়া যায়। এক, এই রাজ্যের উপাচার্যদের রাখিবার বা না রাখিবার সিদ্ধান্ত তাঁহার। ইহা প্রণিধানযোগ্য, কেননা নীতিগত ভাবে, উপাচার্যদের ‘রাখিবার’ কথা আর যাহারই হউক, শিক্ষামন্ত্রীর নহে, সরকারের নহে। এবং যদি এই নীতির প্রয়োগে কোনও ব্যভিচার ঘটে, সে ক্ষেত্রেও মন্ত্রীর এমন প্রকাশ্য হুমকি দিবার কথা নহে, আচার্যের কাছে যথাবিধি বিষয়টি তুলিবার কথা।

দ্বিতীয়ত, উপাচার্যদের তিনি কেবল ‘রাখেন’ই না, তাঁহাদের ভৃত্যসম কিংবা অনুগত তাঁবেদার বলিয়া মনে করেন, নতুবা প্রকাশ্যত উপাচার্য সম্পর্কে এ ভাবে অশোভন মন্তব্য করিতেন না। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন হইলেও জনসমক্ষে তাঁহাদের আর একটু সতর্ক ভাবে উল্লেখ করিবার প্রথাই এ যাবৎ প্রচলিত। তৃতীয়ত, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা কত ফি দিবে, তাহা তিনিই স্থির করিবার নিয়ামক। গোটা দুনিয়ায় অন্য রকম দস্তুর হইতে পারে। দেশে-বিদেশে মাননীয় উপাচার্যরাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি-সমূহের সহিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাহা স্থির করিয়া থাকিতে পারেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ অন্য পথে অন্য মতে চলে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে ‘হাংলু’ বলেন। বস্তুত, তাঁহার এই বাচনভঙ্গিটি এক অর্থে গভীর এক মানসিকতার পরিচয় বহন করিতেছে। এই বিষয়ে তিনি কোনও সন্দেহ রাখেন নাই যে, তাঁহার নিকট উপাচার্য কোনও সম্মানের পাত্র নহেন, তাঁহার পদটির কোনও মর্যাদা শিক্ষামন্ত্রীর নিকট নাই। থাকিলে, তিনি এই উক্তি করিতে পারিতেন না।

শিক্ষকদের প্রতি কোনও সম্মানবোধ যে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর নাই, তাহা তিনি অন্য ভাবেও স্পষ্ট করিয়া চলিয়াছেন। বারংবার। তিনি পয়সা দেন, তাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, শিক্ষক, অধ্যক্ষ, উপাচার্যরা খাইয়া পরিয়া বাঁচিয়া আছেন, ফলে শিক্ষা দফতরের তথা রাজ্য সরকারের সব কথা শুনিয়া চলিতে ইঁহারা বাধ্য: এই কথা তিনি বহু বার বলিয়াছেন, আবারও বলিয়াছেন। নিয়ন্ত্রণটি নিরঙ্কুশ বলিয়াই আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়া অধ্যক্ষদের কাছে তিনি ঠিক ভাবে চলিবার বার্তা পাঠাইতে পারেন। এত স্পষ্টবাক হইয়াও নিন্দুকদের তিনি চুপ করাইতে পারিতেছেন না। তবে তাই বলিয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ কায়েমের কাজটি তো তিনি এবং তাঁহার মুখ্যমন্ত্রী দিদি ছাড়িয়া দিতে পারেন না। ছাত্রনেতারা হাল না ধরিলে, দলে দলে ছাত্রছাত্রী দলের কাডার না বনিলে দলই বা চলে কী ভাবে, সরকার নামক যন্ত্রটিকেই বা দল চালায় কী ভাবে। শিক্ষামন্ত্রীর ভাষায় ও আচরণে তাঁহার দলনেত্রী নিশ্চয়ই অত্যন্ত সন্তুষ্ট। উপযুক্ত সাগরেদ পাইয়াছেন বটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE