Advertisement
০৮ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

নিষ্ক্রিয়তার পরিণাম

তথাকথিত আধ্যাত্মিক গুরুরা সকলেই কিছু আধ্যাত্মিক নহেন। বিরিঞ্চিবাবার কালেও ছিলেন না, এ কালেও নাই। ভক্তদের শুভ কর্মপথে অনুপ্রাণিত করার বদলে তাঁহাদের কেহ কেহ ক্ষমতা ও প্রভাব খাটাইতেই অতিরিক্ত ব্যগ্র হইয়া পড়েন। তাঁহাদের কীর্তিকলাপ থাকিয়া থাকিয়াই আইনের সীমা লঙ্ঘন করে, তখন দুষ্টের শাসনে রাষ্ট্রযন্ত্রের তত্‌পরতা আবশ্যক হয়।

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

তথাকথিত আধ্যাত্মিক গুরুরা সকলেই কিছু আধ্যাত্মিক নহেন। বিরিঞ্চিবাবার কালেও ছিলেন না, এ কালেও নাই। ভক্তদের শুভ কর্মপথে অনুপ্রাণিত করার বদলে তাঁহাদের কেহ কেহ ক্ষমতা ও প্রভাব খাটাইতেই অতিরিক্ত ব্যগ্র হইয়া পড়েন। তাঁহাদের কীর্তিকলাপ থাকিয়া থাকিয়াই আইনের সীমা লঙ্ঘন করে, তখন দুষ্টের শাসনে রাষ্ট্রযন্ত্রের তত্‌পরতা আবশ্যক হয়। সেই শাসন যথাসম্ভব দ্রুত সাধন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রশাসনের যন্ত্রীরা সেই কাজ না করিলে পরিণাম কী হয়, হরিয়ানার হিসারে তাহা দেখা গেল। শেষ অবধি ‘সন্ত’ রামপাল ধরা পড়িয়াছেন বটে, কিন্তু তাহার পূর্বে যে কাণ্ড ঘটিয়াছে, তাহা নিকটবর্তী কুরুক্ষেত্রকে লজ্জা দিবে। এই ‘সন্ত’-এর তথাকথিত আশ্রমে এক ব্যক্তির খুন হওয়ার ঘটনায় চার বছরে ৪৩ বার শমন অগ্রাহ্য করার পর পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তাঁহার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিলে সরকার অগত্যা পুলিশ পাঠায়। অতঃপর প্রায় মুঘল আমলের অবরোধ চলিয়াছে, আশ্রমে জল ও বিদ্যুতের সংযোগ কাটিয়া দিয়াও রামপালকে টলানো যায় নাই। আশ্রম হইতে গুলিবর্ষণ, ২৮ জন সাংবাদিক-সহ ৬০ জন আহত, এমনকী হিংসার বলি হইয়াছেন পাঁচ নারী ও এক শিশু। এই মর্মান্তিক পরিণতি রাজ্য প্রশাসনের দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তার পরিণাম।

এমন নিষ্ক্রিয়তা নূতন নহে। কিছু কাল আগে আর এক ধর্মগুরু আসারাম বাপুর বিরুদ্ধে কুমারী-ধর্ষণ সহ রকমারি অনাচারের অভিযোগ থাকিলেও দীর্ঘ কাল তাঁহাকে বিচারের সম্মুখীন করিতে রাজস্থান সরকার টালবাহানা করিয়াছিল। হরিয়ানাতেই সিরসা জেলায় ডেরা সাচা সৌদার রামরহিম সিংহের বিরুদ্ধে খুন ও যৌন নিগ্রহের একাধিক অভিযোগ থাকিলেও এবং সেই অভিযোগগুলিতে সিবিআই চার্জশিট পর্যন্ত দাখিল করিলেও তাঁহার কেশাগ্রও কেহ স্পর্শ করে নাই। হরিয়ানা বিধানসভার নির্বাচনে এই রামরহিম সিংহ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানাইয়াছিলেন। গুরু, বাবা, ব্রহ্মচারীদের সহিত ব্যক্তি-রাজনীতিকদের যোগাযোগের পিছনে প্রায়শ তাঁহাদের অনুগামী ভক্তশিষ্য সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়ার তাগিদ থাকে। হোক বা না হোক, এই রাজনৈতিক যোগাযোগকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করিয়া কিছু আধ্যাত্মিক গুরু-বাবা-ব্রহ্মচারী-আচার্য নিজেদের দেশের প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে স্থাপন করেন। তাঁহাদের ভক্তবৃন্দও মনে করেন, গুরুকে আদালত-পুলিশ ছুঁইতে পারে না। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাইয়া নানা অনাচার ও অপকর্মও গুরুদের আশ্রমে নিত্য সংঘটিত হইয়া চলে।

রাজ্য প্রশাসনের বিলম্বিত কঠোরতার পিছনে হাইকোর্টের অনুশাসন বড় ভূমিকা লইয়াছে। আদালত স্পষ্টতই জানাইয়াছিল, রামপালকে যদি আদালত অবমাননার দায়ে পুলিশ গ্রেফতার করিতে না পারে, তাহা হইলে আইনরক্ষক হিসাবে পুলিশের কর্তৃত্ব যেমন হ্রাস পাইবে, তেমনই বিচারব্যবস্থার উপরেও সাধারণ মানুষের আস্থা ঘুচিয়া যাইবে। তাঁহারা দেখিবেন, কেবল গুন্ডামি করিয়া কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটাইয়া এক ব্যক্তি দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইতে পারে, খুনের দায়ে অভিযুক্ত হইয়াও আদালতকে অগ্রাহ্য করিতে পারে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের জোরে শস্ত্রধারী আইনরক্ষকদেরও প্রতিরোধ করিতে পারে। ইহা দৃষ্টান্ত হিসাবে ভাল নয়। আদালতের বক্তব্য সম্পূর্ণ নির্ভুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE