যুবরাজ সিংহ (ছবিতে) প্রত্যেককে বিস্মিত করিয়া অসামান্য ১৫০ রান করিলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক একদিবসীয় ম্যাচে, এবং দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস লিখিলেন। তিনি ২০১১ বিশ্বকাপের নায়ক ছিলেন, তাহার পরেই ক্যানসার-আক্রান্ত হইয়া ক্রমে ক্রীড়ার জ্যোতির্বলয় হইতে নির্বাসনে চলিয়া যান। ‘কামব্যাক’ শব্দটি বলিলে বাঙালিদের অবশ্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাই মনে পড়ে, যিনি ভারতীয় দল হইতে বাদ পড়িয়া সহস্র প্রতিকূলতা জয় করিয়া পুনরায় দলে ফিরিয়া আসেন, কিন্তু যুবরাজও মহারাজের পার্শ্বে এই বার বসিবেন, সন্দেহ নাই। মার্কিন মহিলা দৌড়বীর গেল ডেভার্সের জীবনও চমকপ্রদ। তিিন ১০০ মিটার দৌড় ও ১০০ মিটার হার্ডল্স-এ দৌড়াইতেন। ১৯৮৮ অলিম্পিকের প্রস্তুতির সময় অসুস্থ হইয়া পড়েন, কঠিন রোগ শনাক্ত করিবার পর অতি কড়া চিকিৎসা শুরু হয় ও তাহার ফলে তাঁহার দুই পা ফুলিয়া উঠে ও ফোসকা পড়িয়া যায়। তখন তিনি হাঁটিতে পারিতেন না। হামাগুড়ি দিয়া চলিতেন, বা কেহ পাঁজাকোলা করিয়া লইয়া যাইত। এক চিকিৎসক বলিয়াছিলেন, পা কাটিয়া ফেলিতে হইবে। যে রোগী আর কোনও দিন হাঁটিতে পারিবেন কেহ ভাবে নাই, তিনি অলিম্পিকে ফিরিয়া আসেন এবং পর পর দুই বার একশো মিটার দৌড় জিতিয়া শোরগোল ফেলিয়া দেন! ১৯৯২ ও ১৯৯৬-এ এই অসামান্য কীর্তি স্থাপন করিয়া তিনি প্রত্যাবর্তনের অমোঘ প্রতীক হইয়া রহিয়াছেন।
আব্রাহাম লিঙ্কন পৃথিবীর ইতিহাসে এক অসামান্য নেতা, কিন্তু কেবল প্রত্যাবর্তনের কারণেই তিনি স্বতন্ত্র পূজা পাইতে পারেন। তিনি ব্যবসায়ে ব্যর্থ হইয়াছেন, রাজনীতিতে বারংবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হইয়াছেন। আট বার নির্বাচনে হারিয়াছেন। কংগ্রেসের আসনের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াইয়া হারিয়াছেন, সেনেটের আসনের ক্ষেত্রেও হারিয়াছেন, উপরাষ্ট্রপতি হইতে চাহিয়াছিলেন, তাহাও পারেন নাই। তাহার পর, প্রবল অধ্যবসায়, পরিকল্পনা ও বাগ্মিতা কাজে লাগাইয়া তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হন। আজ তিনি মানবমুক্তির এক দিশারি। কেবল মানুষ নহে, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানগুলিও বহু ক্ষেত্রে পরাজয় হইতে জয়সরণিতে আসিয়া দাঁড়ায়। ‘অ্যাপ্ল’ প্রায় ডুবিতে বসিয়াছিল ১৯৯০-এর মধ্যপথে, আজ তাহারা সাফল্যের মধ্যগগনে। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও জাপান যে ভাবে ধ্বংস হইয়া গিয়াছিল, এবং যে পরিমাণ অবমাননার বোঝা তাহাদের বহন করিতে হইয়াছিল, তাহারা যে বিশ্বে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইবে ও অত্যন্ত সম্মানিত দেশ হিসাবে ধ্বজা উড়াইতে পারিবে, কেহ ভাবে নাই।
বিশ্বে প্রথম শ্মশ্রুবিশিষ্টা মহিলা মডেল হিসাবে হারমান কৌর যখন ফ্যাশন র্যাম্পে হাঁটেন, তাঁহার সত্তাও নিশ্চয় প্রত্যাবর্তনের গর্বেই স্ফীত হয়। অসুখের ফলে তাঁহার মুখে প্রবল কেশাধিক্য ঘটে, একটি বয়স অবধি তিনি ইহার জন্য লজ্জিত আড়ষ্ট ছিলেন, হীনম্মন্যতায় ভুগিতেন। তাহার পর এক সময় তিনি নিজ শরীরকে তাহার পূর্ণ রূপেই গ্রহণ করিবার সিদ্ধান্ত লইলেন ও অন্যদের মতামতকে তোয়াক্কা না করিয়া তাহা উদ্যাপন করিতে লাগিলেন। তাঁহার আত্মমর্যাদায় প্রত্যাবর্তনের সহিতই ঘটিল তাঁহার খ্যাতি-আরোহণ। নেলসন ম্যান্ডেলা নিজেও প্রত্যাবর্তনের প্রতীক, ২৭ বৎসর কারারুদ্ধ থাকিয়া, বাহির হইয়া দেশের রাষ্ট্রপতি হইয়াছিলেন। কারাকক্ষে তিনি তাঁহার সহিত উইলিয়াম হেনলি লিখিত একটি কবিতা রাখিতেন, যাহার শেষে আছে, I am the master of my fate: I am the captain of my soul. বাস্তব উদাহরণগুলি সমানে রাখিয়া সাধারণ মানুষও হয়তো এমত অনুপ্রেরণা সংগ্রহে ব্রতী হইতে পারেন। বিশেষত ওয়ান-ডে ম্যাচ হইতে সে অনুপ্রেরণা আসিলে, ব্যাপারটিকে মোটিভেশনাল টক-এর ন্যায় ‘শিক্ষামূলক’ লাগিবে না!
যৎকিঞ্চিৎ
ঋষি কপূর আত্মজীবনীতে লিখলেন, ১৯৭৪-এ প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারটা (‘ববি’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা) তিনি তিরিশ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। মানে, পুরাকালে সব তুঙ্গ-পবিত্র ছিল, যত যুগ গড়াচ্ছে লোকে নোংরার জাসু হচ্ছে— ঠিক নয়? অনেকেই প্রশ্ন করছে, তা হলে এখন কত দিতে হচ্ছে? আর, সব পুরস্কারেই এমন তলে তলে রেট আছে কী? তা হলে আমাদের ধনাঢ্য মস্তানরা তিন-চারটে নোবেল প্রাইজ কিনতে তো পারেন। ভারতের প্রেস্টিজ বাড়ে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy