Advertisement
১০ মে ২০২৪
প্রবন্ধ ১

বিশ্ববিদ্যালয় কি রাষ্ট্রশক্তির করদ রাজ্য?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত করলে প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার ভঙ্গ করা হয়। ১৬/১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যরাতে যাদবপুর ক্যাম্পাসে সেটাই হয়েছে। পুলিশ যদি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সে কাজ করে থাকে, তা হলে স্বাধিকার ভঙ্গের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের উপরেও বর্তায়। শঙ্খ ঘোষ, অমিয় দেব ও সৌরীন ভট্টাচার্যআমাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসমস্যা নিয়ে ইদানীং যে-ধরনের খবর সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে, তা সাধারণ ভাবে উদ্বেগজনক। তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অবশ্যই জরুরি।

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

আমাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসমস্যা নিয়ে ইদানীং যে-ধরনের খবর সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে, তা সাধারণ ভাবে উদ্বেগজনক। তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু মঙ্গলবার রাত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক হিসেবে আমরা গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা বোধ করছি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত ঘটনা ও তার গতিপ্রকৃতি নিশ্চয়ই তদন্তসাপেক্ষ। আমরা যারা সব কিছু বাইরে থেকে জানছি, তারা অবশ্যই উচিত-অনুচিত বিষয়ে সরাসরি কোনও কথা বলতে পারি না। আমরা মেনে নেব যে, বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব নিয়ম পদ্ধতি মেনে মূল অভিযোগের নিষ্পত্তি করবেন। কিন্তু আমরা মনে করি, এই দিন পুলিশি সক্রিয়তায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘটনা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। যা ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরমহলের নিয়মশৃঙ্খলার প্রশ্ন, তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রয়োগে জনসমাজের প্রশ্নে রূপান্তরিত হয়ে গেল।

মনে রাখতে হবে যে, পুলিশ-র্যাফ ও শেষতক সামরিক বাহিনী এই কিন্তু রাষ্ট্রের পেশিশক্তির বিভিন্ন স্তর। ছাত্রসমস্যা সমাধানের জন্য কথায় কথায় পুলিশের দিকে তাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোনমি বা স্বাধিকারের ধারণায় যে মর্মান্তিক আঘাত লাগে, এই কথাটা আমরা ক্রমশ ভুলতে বসেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন কার্যত রাষ্ট্রশক্তির নিরাপদ আশ্রয়ের হেলান দিয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিছু দিন আগে পর্যন্তও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ ঢোকার উপরে যেন এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞাই জারি ছিল। সে রকম ঘটনায় একেবারে তুলকালাম অবস্থা সৃষ্টি হত।

দিনে দিনে প্রসারিত হতে হতে রাষ্ট্রের হাত আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে যেন সব সময় ছুঁয়ে থাকে। সে হাতের ছোঁয়া না পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও আজ যেন নিশ্চিন্ত বোধ করেন না। শিক্ষার ব্যবস্থা অবশ্যই কল্যাণরাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব, কিন্তু সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানকে অত সাবলীলভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত করে তোলা স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। আর শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি সমাজকল্যাণমূলক কাজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হাত দেওয়া চলে না। ১৬/১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যরাতে যাদবপুর ক্যাম্পাসে পুলিশি তত্‌পরতায় সেই স্বাধিকার ভঙ্গ করা হয়েছে। পুলিশ যদি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সে কাজ করে থাকে, তা হলে স্বাধিকার ভঙ্গের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের উপরেও বর্তায়। কর্তৃপক্ষের কাজেকর্মে যেন করদ রাজ্যের মালিকানার আদল ফুটে না ওঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তো আমাদের ছাত্রছাত্রীই বটে। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হওয়া তাদের অনিবার্য ভবিতব্য কেন হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE