পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল জঙ্গি হানায় নিহত পঞ্জাব পুলিশের পরিজনবর্গকে সমবেদনা জানাইবার সময় একটি তথ্য উল্লেখ না করিয়া পারেন নাই: পঞ্জাব এত গুরুতর জঙ্গি হানা দেখিতেছে প্রায় পনেরো-ষোলো বৎসর পর। সেই কারণেই পুলিশি নিরাপত্তা সেখানে এত ঢিলাঢালা। এক কালের সদা-আক্রান্ত সদা-অস্থির পঞ্জাব যে এই ঢিলামির বিলাসিতা করিতে পারিতেছিল, সে রাজ্যের পক্ষে ইহা সুসংবাদ বটে। তবে, বিলাসিতার অবকাশ ঘুচিল। গুরদাসপুরে হানার রকম দেখিয়া কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যুগপৎ প্রতীতি জন্মিয়াছে, জম্মু-কাশ্মীরের পর এ বার পঞ্জাবের পালা। প্রতীতিটি সাম্প্রতিক হইলেও আশঙ্কাটি পুরাতন। এ আশঙ্কা বেশ কিছু কাল গোয়েন্দা বিভাগের আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করিতেছিল। গত জুন মাসের খালিস্তানি হানার পিছনেও আইএসআই এবং পাক জঙ্গি গোষ্ঠীর সমর্থন সন্দেহ করা হইয়াছিল। তবু কেন পুলিশের গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল না? তবু কেন থানায় অস্ত্রেরও এতখানি কমতি ছিল? ইহা কেবল বিস্মিত নাগরিকের বিপন্ন জিজ্ঞাসা নহে, জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা পর্যন্ত পঞ্জাব পুলিশের রিসোর্স বা সংসাধনের এই হাল দেখিয়া ক্ষোভ প্রকাশ না করিয়া পারেন নাই। আশা করা যায়, গুরদাসপুর এই অত্যাবশ্যক প্রস্তুতির দিকে পঞ্জাবকে আগাইয়া দিল। ইহার মধ্যেই সে রাজ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনের ক্র্যাকডাউন শুরু হইয়া গিয়াছে, ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী পঞ্জাবের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই দিল্লিতে প্রেরিত হইয়াছে।
প্রতিরক্ষার স্ট্র্যাটেজি বা পদ্ধতির দিক হইতে এই মুহূর্তে ভারতে ইহাই সর্বাপেক্ষা জরুরি। জিপিএস-প্রাপ্ত তথ্যটি সাধারণ বুদ্ধিতেও প্রত্যাশিত: কাশ্মীর ফ্রন্ট ছাড়িয়া বেআইনি অনুপ্রবেশ আপাতত পঞ্জাবের দিকে ঘুরিতেছে। প্রথম কারণ, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা অনুপ্রবেশকারীদের কাছে আর লোভনীয় নাই। ভারতের তরফে প্রবল অস্ত্রীকরণ ও সেনা মোতায়েনের চাপে ক্রমেই তাহাদের উত্তরে আন্তর্জাতিক সীমানার দিকে সরিতে হইতেছে। এই সীমানাটি একে ভৌগোলিক দিক দিয়া অত্যধিক দুর্গম, তাহাতে আবার ভারতীয় বাহিনী এই অভিমুখেও শক্ত প্রহরার ব্যবস্থায় ব্যস্ত। কাশ্মীর-সীমান্তে জঙ্গি-সন্দেহে সংঘর্ষ ও পারস্পরিক নিধনের অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা যেমন ভারতের পক্ষে সুখবর নয়, জঙ্গি কর্মপদ্ধতির দিক হইতেও সুবিধাজনক নয়। সুতরাং পঞ্জাব। জম্মু-পাঠানকোট অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত কেবল সমতলের সিধা রাস্তা নয়, স্থানে স্থানে হাইওয়ে হইতে দশ কিলোমিটারেরও কম। স্থলসীমান্তের সঙ্গে জলসীমান্তও এখানে বহু দূর বিস্তৃত, ইরাবতী নদীর শাখা-উপশাখার কারণে।
আরও একটি বিষয়। দেশভাগের পর হইতেই পঞ্জাব-সীমান্ত বেআইনি কার্যক্রমের পীঠস্থান হিসাবে যথেষ্ট ছিদ্রময় থাকিয়াছে। মাদকদ্রব্য চলাচল, জাল মুদ্রার প্রচার ও প্রসার এই সীমান্তের অনেক দশকের ঐতিহ্য। জঙ্গি গোষ্ঠী চাহিলে এই কর্মজালিকাকে নিজেদের স্বার্থে ও লক্ষ্যে সহজেই ব্যবহার করিতে পারে। খালিস্তানি অস্থিরতাও সম্প্রতি বাড়িয়াছে। সীমান্তের ও পার হইতে তাহাদের জন্য কতটা ও কী প্রকার উৎসাহ আসিতেছে, তাহা এখনও প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু যুক্তি বলিতেছে, এই অস্থির পরিস্থিতিকে কাজে লাগাইবার সর্বরকম প্রয়াস প্রতিপক্ষের দিক হইতে না করাই আশ্চর্য। তালিবান যেমন পশ্চিম পাকিস্তানের সোয়াট অঞ্চলের পরিস্থিতিকে নিজেদের ‘কাজে’ লাগাইতে ব্যস্ত, পঞ্জাবের পশ্চিমাঞ্চলের অশান্ত পরিবেশও একই ভাবে পাক জঙ্গিদের ‘কাজে’ লাগিবে। এত যুক্তি-তথ্যের সমাহার সত্ত্বেও পঞ্জাব এ যাবৎ ‘ঢিলাঢালা’, খবর ইহাই। হানা ঘটিলে বুদ্ধি বাড়ে। ভারতের ইহাই ভবিতব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy