শত্রু যতই শক্তিশালী হউক না কেন, ইচ্ছা থাকিলে যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব। অতি অসম যুদ্ধেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদিও স্মরণ করাইয়া দিয়াছে যে যুদ্ধ এখনও বাকি, বড় জোর একটি লড়াইয়ে জেতা গিয়াছে, তবুও ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নাইজেরিয়ার সাফল্য তাৎপর্যপূর্ণ। টানা ছয় সপ্তাহ সেখানে কেহ ইবোলায় আক্রান্ত হন নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশটিকে ইবোলা-মুক্ত ঘোষণা করিয়াছে। নাইজেরিয়া যে ভাবে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়িয়াছে, তাহাকেই ‘মডেল’-এর স্বীকৃতি দেওয়া হইতেছে। পন্থাটির মধ্যে কোনও অভিনবত্ব নাই, বরং তাহা কাণ্ডজ্ঞানের অনুসারী। রোগের প্রাদুর্ভাবমাত্র নাইজেরিয়ার সরকার সর্বশক্তিতে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। আক্রান্ত ব্যক্তির সহিত সাক্ষাৎ হইয়াছে, এমন মানুষদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হইয়াছে। মোট কথা, কোথাও রোগটিকে মাটি ছাড়া হয় নাই। যে কোনও মহামারীর মোকাবিলাতেই এই সক্রিয়তা আবশ্যক।
তবে নাইজেরিয়া যাহা পারিয়াছে, লাইবেরিয়া, গিনি, সিরা লিয়নের ন্যায় পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা-আক্রান্ত দেশগুলির পক্ষে তাহা অতি দুঃসাধ্য। সেই দেশগুলি অতি দরিদ্র। অর্থনীতির কিছু প্রাথমিক মাপকাঠিতেই তাহা স্পষ্ট হইবে। ক্রয়ক্ষমতার সাম্যের নিরিখে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের হিসাবে নাইজেরিয়া দুনিয়া ১২৫তম স্থানে আছে (তুলনার খাতিরে উল্লেখ করা যাউক, ভারত তাহার এক ধাপ ন ীচে)। লাইবেরিয়ার স্থান ১৮১তম, গিনি ১৭৯তম। অর্থনীতির আয়তন ছবিটিকে আরও স্পষ্ট করিবে। ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে নাইজেরিয়ার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ ৯৭২.৬ বিলিয়ন ডলার। লাইবেরিয়ার ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা আফ্রিকার অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কাজেই, নাইজেরিয়ার সহিত পশ্চিম আফ্রিকার অন্য দেশগুলির সামর্থ্যের তুলনা হয় না। এই লড়াইয়ে অর্থের জোর থাকা আবশ্যক। এবং, সেই কারণেই আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ হইয়া দাঁড়ায়। উন্নত দেশগুলির ভূমিকাও। মহামারী যে ভিসার অপেক্ষায় থাকে না, ইবোলা সেই কথাটি আরও এক বার স্পষ্ট করিয়া দিয়াছে। কাজেই, বিশুদ্ধ পরার্থপরতার প্রয়োজন নাই, নিছক স্বার্থের তাড়নাতেই পশ্চিম আফ্রিকার সামর্থ্যহীন দেশগুলিকে সর্বপ্রকার সাহায্য করা বিধেয়। উন্নত দুনিয়া সেই কাজটি নিষ্ঠার সহিত করিয়াছে বলিলে সত্যের কিঞ্চিৎ অপলাপ হইবে।
ইবোলার প্রকোপ যত ক্ষণ আফ্রিকার ভৌগোলিক পরিধিতে সীমাবদ্ধ ছিল, তত ক্ষণ প্রথম বিশ্ব তাহাকে তেমন গুরুত্ব দেয় নাই। ভাইরাসটি প্রথমে স্পেন এবং তাহার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দরজায় কড়া নাড়ায় দুনিয়া বুঝিয়াছে, তাহাকে আর ভুলিয়া থাকা চলিবে না। ইবোলার ভাইরাসও এই দফায় কিঞ্চিৎ বিচিত্রগতি হইয়াছে। এই প্রথম ভাইরাসটি মূলত শহরাঞ্চলে আক্রমণ শানাইয়াছে। যেহেতু রোগটি হাওয়ায় ছড়ায় না, তাহা স্পর্শবাহিত, ফলে শহরে তাহার বিস্তার দ্রুততর হইয়াছে এবং তাহা দ্রুত এক দেশ হইতে অন্য দেশে যাত্রা করিয়াছে। গত চার দশকে ইহাই ইবোলার তীব্রতম আক্রমণ। মহামারীর প্রাবল্য হয়তো এক সময় কমিবে। কিন্তু, তাহার শিক্ষাটি বিস্মৃত হইলে চলিবে না। অনুন্নত দুনিয়ার জন্য উন্নত দেশগুলির কর্তব্য আছে। সমৃদ্ধি ব্যক্তিগত হইতে পারে, মহামারী সর্বজনীন। তাহার প্রতিরোধের দায়িত্বও স্ব-স্ব স্কন্ধের ক্ষমতানুসারে স্বেচ্ছায় বহন করাই বিধেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy