বিহারের মতিহারিতে জর্জ অরওয়েলের সম্মানে একটি জাদুঘর নির্মিত হইবে, বিহার সরকার ইহার জন্য ষাট লক্ষ টাকা মঞ্জুর করিয়াছেন। অরওয়েল মতিহারিতেই জন্মাইয়াছিলেন, ১৯০৩ সালে। প্রায় এক বত্সর এই স্থানে বাস করিয়া, মাতার সহিত ইংল্যান্ড চলিয়া যান। আর বাজেটের সূত্রে এই তথ্য সর্ববিদিত, ভারত সরকার বল্লবভাই পটেলের একটি মূর্তি নির্মাণের জন্য মঞ্জুর করিয়াছেন ২০০ কোটি টাকা। এই মূর্তি স্ট্যাচু অব লিবার্টিকেও উচ্চতায় ছাড়াইয়া যাইবে। মোদী ভোটের প্রচারে বারংবার পটেলের প্রতি তাঁহার সমীহের কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন। সেই মর্যাদার পূর্ণ অবয়ব প্রদানে ভারতীয় নাগরিকের এতগুলি টাকা ব্যয় করা হইবে। অতীতের মনীষীগণকে শ্রদ্ধা জানাইবার মধ্যে জাতির কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, নিজ শিকড়ের প্রতি সমীহ ইত্যাকার মহান বৃত্তি নিহিত রহিয়াছে। কিন্তু যখন এক হতদরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশে এই শ্রদ্ধাকাণ্ড উদযাপিত হয়, অগ্রাধিকারের প্রশ্ন আসিয়া পড়ে। যে মানুষ খাইতে পাইতেছে না, পরনে শতচ্ছিন্ন বস্ত্র পরিধান করিয়া শীতে ও লজ্জায় কুঁকড়াইয়া যাইতেছে, সে অকস্মাত্ কর্জ করিয়া গুরুজনের স্বর্ণমুকুট গড়াইলে, তাহার কাণ্ডজ্ঞান সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করা কঠিন। আবার যে মানুষটি পড়াশুনা করিবার জন্য পুস্তক কিনিতে পারিতেছে না, সে প্রবল ব্যয়ে স্বর্গত পিতার তৈলচিত্র আঁকিবার বরাত দিলে, তাহাও হাস্যকর। এই মূর্তি নির্মাণের টাকা লইয়া কেবল যে কোটি কোটি মানুষের ক্ষীণপ্রাণ অস্তিত্বকে সম্মানজনক অবস্থায় লইয়া যাইবার প্রয়াস করা যাইত তাহাই নহে, বহু ছাত্রের হস্তে কম্পিউটার পৌঁছাইয়া দেওয়া যাইত, আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যালয় গঠন করা যাইত। বর্তমানকে ন্যূনতম ঠেকনা দিতে পারিলে, ভবিষ্যতের বীজ শৃঙ্খলিত ভাবে রোপণ করা হইলে, তবেই অতীতকে মাল্যদানের কথা ভাবিলে ভাল হইত।
যে দেশে প্রায় সর্বত্রই যুক্তি অপেক্ষা আবেগকে আলিঙ্গন করিবার প্রচলন, অতীতচারিতা স্বাভাবিক ভাবেই সিংহাসনারূঢ়। অতীতের কথা বলিতে আমাদের চক্ষু ও বক্ষ ভরিয়া উঠে, কারণ বর্তমান লইয়া ব্যস্ত হইলে, তাহা শুধরাইবার কিঞ্চিত্ দায়ও স্কন্ধে লইতে হয়। যখন কেহ কাজ করিয়া চলেন, তাঁহাকে বিশেষ সম্মান বা সমর্থন প্রদান আমাদের রক্তে নাই; যেই তিনি মরিয়া গেলেন, তাঁহার মর্মরমূর্তির বেদি কয় ফুট উচ্চ হইবে সেই তর্কে আমাদের নিদ্রা অদৃশ্য। এই বীরপূজা অতি সুবিধাজনক, কারণ, ইহার মাধ্যমে প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরিবর্তে অবান্তর বিষয় লইয়া আড়ম্বরের দ্বার খুলিয়া যায়। বিদ্যাসাগরের আদি বাটীতে কেন লঙ্কার গুদাম খুলিল, রবীন্দ্রনাথের কৈশোরের কাঁকই কেন উধাও হইল তাহা লইয়া ভারতীয়গণের চিন্তার অবধি নাই। অন্য দিকে, নিজ অঞ্চলের উন্মুক্ত নর্দমা কেমন করিয়া আবৃত হইবে, তাহা লইয়া মস্তিষ্ক আদৌ খাটিতে রাজি নহে, কারণ ওই বিষয়ে কাব্য ও অতিনাটকের সুযোগ নাই, উপরন্তু সমস্যাটি সত্যকার শ্রমের সম্ভাবনাও উন্মোচন করিতে পারে। কর্মবিমুখ ও বাক্যস্ফীত দেশকে কে বুঝাইবে, অতীত-মনীষীগণকে শ্রদ্ধা জানাইতে গেলে, তাঁহারা যে সুস্থ সুন্দর মানবসমাজের স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, সেইটি বাস্তবে রূপায়িত করিতে হইবে। ভারতে প্রত্যেকের অন্ন, জল, চিকিত্সার বন্দোবস্ত নাই; সাক্ষর, সপ্রতিভ নবপ্রজন্ম নাই; নগরগুলিও অন্যান্য অগ্রগণ্য দেশের মহানগরের ন্যায় উজ্জ্বল নহে। এই দেশে উন্নয়নই তো যথাযথ দৌড় শুরু করে নাই। এইগুলির ব্যবস্থা হইলে, তখন মানুষকে ইতিহাসের পাঠ দেওয়া যাইবে। মতিহারির অধিকাংশ মানুষ জানেন না, জর্জ অরওয়েল কে। পটেল কত বড় ব্যক্তি তাহা বুঝাইতে গেলে, প্রবল উন্নয়ন করিয়া, এই সকলই তাঁহার দর্শানো পথে হইয়াছে বিবৃতি দিলেই হইত। একটি রাষ্ট্র যখন তাহার মূল কর্তব্যগুলি না সারিয়া বিগ্রহবিলাসে মন ও অর্থ ঢালিয়া দেয়, প্রাতে উঠিয়াই মহাপুত্তলিখেলা শুরু করে, তাহার আত্মপ্রবঞ্চনাটি মূর্ত হইয়া মানচিত্রে বিশাল ছায়া ফেলিয়া দাঁড়ায়।
য ত্ কি ঞ্চি ত্
ব্রাজিল সম্পর্কে পাবলিকের ধারণা স্বচ্ছ: পুরুষরা সারা ক্ষণ থাইয়ে ২৩১ বার বল নাচিয়ে চলেছে, সুন্দরী তন্বীরা সারা ক্ষণ বিকিনি পরে নেচে চলেছে। কিন্তু কই, গ্যালারিতে তো অবিরত আইটেম নাম্বারের দেখা পাওয়া গেল না! দিব্যি কলকেতার শপিং মলের সমান দৃশ্য। খেলার অর্ধেক মাটি। পরের বার বিশ্বকাপ রাশিয়ায়। সেখানে তো অ্যায়সা ঠান্ডা, গোলকিপারকে বোধহয় মাংকি ক্যাপ পরে নামতে হবে। তা হলে এ বছর এমন ফাঁকিবাজির ক্ষমা হয়? ওরই শাস্তি ৭-১!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy