বর্ষশেষে অপারেশন বর্গার শোভন সংস্করণ পাওয়া গেল। কৃষিজমিতে বর্গাদারদের অধিকারে সরকারি সিলমোহর লাগাইয়াছিল বামফ্রন্ট সরকার। কলিকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় শহরের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জনসভার জন্য চিহ্নিত করিয়া নূতন ইতিহাস গড়িতে প্রবৃত্ত। বামফ্রন্টের অপারেশন বর্গার ফলে ভাগচাষিরা উপকৃত হন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির সমস্যা বাড়ে এবং রাজনীতি বিশ বাঁও জলে পড়িয়া যায়, এখনও তাহা হইতে উদ্ধার পায় নাই। শোভনবাবুর মস্তিষ্কতরঙ্গের পরিণামে কলিকাতার বিশেষ কোনও ক্ষতি হইবে বলিয়া মনে হয় না, কারণ কলিকাতার আর ক্ষতি হইবার মতো বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নাই। কিন্তু উদ্ভটনাট্যের মাত্রায় মেয়র তাঁহার দলনেত্রীর সহিত পাল্লা দিতে পারেন, তাহা এতদ্দ্বারা প্রমাণিত। তিনি হয়তো মনে করেন, এই মহানগরটি তাঁহার নিজস্ব সম্পত্তি, তিনি যাহাকে ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা সভা করার অনুমতি দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন।
এই মহানাগরিক জমিদারির গূঢ় উদ্দেশ্যটি অনুমান করা কঠিন নহে। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপিকে সভা করার অনুমতি না দিয়া আদালতের নির্দেশে হাত এবং মুখ পোড়ানো মহানাগরিক এ ভাবেই সম্ভবত তাঁহার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতে সচেষ্ট। অন্যথা একদা ‘জাতশত্রু’ বামপন্থীদের খাদ্য আন্দোলনের শহিদ স্মরণের জন্য সিদো-কানহো ডহর এবং নেতাজি জয়ন্তীর জন্য রেড রোডে নেতাজি মূর্তির পাদদেশ নির্দিষ্ট করিয়া দিলেও কংগ্রেস এবং বিজেপির সভার জন্য শহরের কোনও প্রান্তই তিনি মঞ্জুর করিলেন না কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বীক্ষায় বিজেপিকে ঠেকাইতে বামেদের কাছে টানার যে আগ্রহ, মেয়রের পাট্টা বিলির ধরনেও তাহা সম্যক প্রতিফলিত। এই বিলি-বণ্টন যাহাতে আদালতের হস্তক্ষেপে কাঁচিয়া না যায়, তাহা নিশ্চিত করিতে রাজ্য বিধানসভায় নূতন আইন পাশ করার কথাও বলা হইতেছে। তবে এ যাবত্ শাসক দলের পাশ করা অধিকাংশ আইনের মতো এটিও আদালতগ্রাহ্য হইবে কি না এবং অসাংবিধানিক বিবেচনায় খারিজ হইবে কি না, সেই সংশয়ও থাকিতেছে। বর্তমান শাসক দল তথা প্রশাসনের নেতানেত্রীরা আইনকানুনের কতটুকু জানেন বা বোঝেন, তাহা লইয়া গভীর সংশয় আছে। তাই মেয়র-প্রস্তাবিত নূতন আইনের গ্রাহ্যতা লইয়া সংশয় স্বাভাবিক।
মহানাগরিক অবশ্য তাহাতে ঘাবড়াইবার পাত্র নহেন। তিনি তো তাঁহাকে মুখ্যমন্ত্রী সর্বসমক্ষে লীলাভরে সুইমিং পুলের জলে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিলেও ঘাবড়ান নাই, কৃতজ্ঞ ও লাজুক হাসিতে মুখমণ্ডল বিভাময় করিয়া রাখেন। কিন্তু নেতাজি জয়ন্তীর সভাটি বামেদের হাতে ছাড়িয়া দেওয়াটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হইল? এ দিকে যে রাজ্য জুড়িয়া নেতাজি ও বিবেকানন্দের ছবির সহিত মমতার ছবি দিয়া লক্ষ-লক্ষ পোস্টার ছাপানো হইতেছে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বঙ্গীয় সংস্কৃতি ও মনীষার কোনও অংশই কাহাকেও ছাড়িতে প্রস্তুত নহেন। বাঙালিকে আপন রাজনৈতিক প্রয়োজনে জাগাইবার তাগিদে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামকীর্তন তাঁহার পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী হইতে পারে। মেয়র নেতাজির মূর্তির সম্মুখবর্তী মহাস্থানটি এই বাজারে বামপন্থীদের ছাড়িয়া দিলেন, সর্বাধিনায়িকার আগাম অনুমতি লইয়াছেন তো? নহিলে এ বার হয়তো ইকো পার্কের জলাশয়ে এই শীতে গলা অবধি ডুবিয়া হাসিতে হইবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy