Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

রাজনীতির লড়াই

রাজনীতির স্রোতে দুই-একটি বাঁধ না দিতে পারিলে তাহা যে প্লাবন ডাকিয়া আনিতে পারে, নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত টের পাইতেছেন। বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষিত হইবার পর তাঁহার প্রথম জনসভায় নরেন্দ্র মোদী প্রশ্ন করিয়াছিলেন, ‘এক পদ, এক অবসরভাতা’র দাবিটি আসলে কী? সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সেই দাবির মূল কথাটি তিনি তখন জানিতেন কি না, অথবা জানিয়া লইয়াছিলেন কি না, তাহা অজ্ঞাত।

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

রাজনীতির স্রোতে দুই-একটি বাঁধ না দিতে পারিলে তাহা যে প্লাবন ডাকিয়া আনিতে পারে, নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত টের পাইতেছেন। বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষিত হইবার পর তাঁহার প্রথম জনসভায় নরেন্দ্র মোদী প্রশ্ন করিয়াছিলেন, ‘এক পদ, এক অবসরভাতা’র দাবিটি আসলে কী? সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সেই দাবির মূল কথাটি তিনি তখন জানিতেন কি না, অথবা জানিয়া লইয়াছিলেন কি না, তাহা অজ্ঞাত। কিন্তু, দাবিটিকে তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাইয়া ফেলিলেন। ইউপিএ-র প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি যে দাবিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলিয়াছিলেন, নরেন্দ্র মোদী তাহাকেই স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুত হইলেন। এখন তিনি ব্যাকফুটে খেলিতেছেন। কিন্তু, দাবিটির ঢেউ ক্রমে উত্তালতর হইয়াছে। সেই ঘোলা জলে মাছ ধরিতে অনেকেই নামিয়া পড়িয়াছেন। যে প্রশ্নটি সম্পূর্ণত প্রশাসনিক ছিল, তাহাকে আদ্যন্ত রাজনৈতিক প্রশ্নে রূপান্তরিত করিয়া প্রধানমন্ত্রী নিজেরও উপকার করিলেন না।

অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের দাবি, তাঁহাদের অবসরগ্রহণের তারিখ যবেই হউক না কেন, সম-পদাধিকারীদের পেনশনের পরিমাণ সমান হইতে হইবে। অর্থাৎ, ১৯৯৫ সালে যিনি অবসর লইয়াছেন, তাঁহার পেনশন যেন ২০০৯ সালে অবসৃত সম-পদাধিকারীর পেনশনের সমান হয়। ১৯৭৩ সালে তৃতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ মানিয়া ইন্দিরা গাঁধী এই ব্যবস্থাটি বাতিল করিবার পূর্বে সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে ‘এক পদ, এক অবসরভাতা’-র নীতিই চালু ছিল। এখন তাহাকে ফিরাইয়া আনিতে হইলে পেনশন ব্যবস্থার কেঁচেগণ্ডূষ করিতে হয়। শেষ মাসের বেতন অনুযায়ী অবসরভাতার পরিমাণ নির্ধারণ করিবার নীতিটি বিসর্জন দিতে হয়। তাহাতে দুই গোত্রের সমস্যা। এক, পেনশন বাবদ ব্যয়বরাদ্দ এক ধাক্কায় এতখানি বাড়িবে যে তাহা অরুণ জেটলির রাতের ঘুম এবং রাজকোষের স্বাস্থ্য নষ্ট করিবার জন্য যথেষ্ট। দুই, সেনাবাহিনীর জন্য এমন নীতি চালু হইলে তাহা অন্যান্য সরকারি কর্মীদের প্রতি বৈষম্য হইবে। তাঁহারাও তখন ন্যায্যতই এই অধিকার দাবি করিবেন। অর্থাৎ, অর্থনীতির উপর দ্বিতীয় দফার খাঁড়ার ঘা। সহজবোধ্য কারণেই ‘এক পদ, এক অবসরভাতা’র নীতিটি সরকারের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নহে। এই প্রশ্নে ইউপিএ সরকার যাহা বলিয়াছিল, নরেন্দ্র মোদীরও তাহার বাহিরে অন্য কিছু বলিবার নাই।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৫ বৎসর পূর্বে অবসরগ্রহণ করা কোনও মেজর জেনারেলের পেনশন যদি সদ্যঅবসরপ্রাপ্ত কোনও কর্নেলের পেনশনের তুলনায় কম হয়, তবে তাহা সেই মেজর জেনারেলের অপমান। পেনশনের পরিমাণের সহিত যে সম্মান জড়িত নহে, এই কথাটি স্পষ্ট ভাবে বলা প্রয়োজন। সকল সরকারি কর্মীর ক্ষেত্রে যে নিয়ম প্রযোজ্য, প্রাক্তন সেনারাও সেই নিয়মেরই অধীন হইবেন। যে নিয়মে আর পাঁচ জনের পেনশন বাড়ে, তাঁহাদের ক্ষেত্রেও তেমনই হইবে। প্রশ্নটি রাজনীতির নহে, প্রশাসনিক। যে জাতীয়তাবাদের আবেগে ভর করিয়া প্রশ্নটি রাজনীতির মঞ্চে উঠিয়া আসিয়াছে, তাহা বিপজ্জনক। সেনাদের জীবনের ঝুঁকি বেশি, তাঁহারা দেশরক্ষার কাজ করেন, সত্য। কিন্তু, সেই সত্যটিকে আবেগজর্জর রাজনীতি বানাইবার প্রয়োজন নাই। বরং, তাঁহাদের জন্য যথেষ্ট বিমা ইত্যাদির ব্যবস্থা হউক। সেনাবাহিনীর কর্মী বলিয়াই তাঁহাদের জন্য পৃথক নিয়ম বানাইতে হইবে, এমন দাবি না তোলাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE