Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ...

সন্ত্রাসের পাশাপাশি উন্নয়নও আছে বইকী

তৃণমূল আমলে বিডিও, এসডিও, ডিএম-রা হাতে অনেক ক্ষমতা পেয়েছেন, আবার মুখ্যমন্ত্রী নিজে নিয়মিত স্থানীয় প্রশাসনের কাজের তদারকি করছেন। এর ফলে উন্নয়নের গতি বেড়েছে। নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়বে, এটা স্বাভাবিক।গ ণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের একটা তাত্ত্বিক সম্পর্ক আছে। উন্নয়ন না হলে, ক্ষমতাসীন দল ঠিকঠাক কাজ করতে না পারলে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ সেই দলকে সাজা দেবেন আর উন্নয়ন হলে পুরস্কৃত করবেন, এটাই পুথিগত বিদ্যা।

সরজমিনে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রাম, ডিসেম্বর ২০১৫। ছবি: অমিত দত্ত

সরজমিনে। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রাম, ডিসেম্বর ২০১৫। ছবি: অমিত দত্ত

অভিরূপ সরকার
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৬
Share: Save:

গ ণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের একটা তাত্ত্বিক সম্পর্ক আছে। উন্নয়ন না হলে, ক্ষমতাসীন দল ঠিকঠাক কাজ করতে না পারলে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ সেই দলকে সাজা দেবেন আর উন্নয়ন হলে পুরস্কৃত করবেন, এটাই পুথিগত বিদ্যা। বাস্তবটা যদিও ঠিক পুথির কথা মতো চলে না, তবু, যত ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রই হোক না কেন, তার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে জনগণের কাছে নিয়মিত পরীক্ষা দিতেই হয়। টোকাটুকি করে সেই পরীক্ষায় হয়তো এক-আধ বার উতরে যাওয়া যায়, কিন্তু বছরের পর বছর সম্মানজনক নম্বর পাওয়া যায় না। মানুষের জন্য একেবারে কিছু না করতে পারলে, মানুষই একজোট হয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা এক দলের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আর এক দলের হাতে তুলে দিচ্ছেন, এমনটাই বার বার দেখা গেছে।

পশ্চিমবঙ্গ এর ব্যতিক্রম নয়। বামফ্রন্ট যখন প্রবল পরাক্রমে একটার পর একটা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফিরত, তখন অনেকে বলতেন, শুধুমাত্র ব্যাপক ভোট কারচুপির ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। কারচুপি যে হত না, এমন নয়। কিন্তু কারচুপির সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের গরিব মানুষদের জন্য প্রথম দিকে কিছু কাজও বামফ্রন্ট করেছিল। সেই পাট্টা, বর্গা, অধিক ফলনশীল বোরো চাষের বিস্তার বামফ্রন্টকে অনেক দিন পর্যন্ত ভোট-বৈতরণী পার করে দিয়েছে। আবার যখন একই বামফ্রন্ট শিল্পের নামে গরিব মানুষের জমি জোর করে কেড়ে নিতে শুরু করল, তখন হাজার সন্ত্রাস, হাজার ভোট কারচুপি করেও ক্ষমতা ধরে রাখা গেল না।

আবার একটা বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। অনেকে বলছেন, শুধুমাত্র সন্ত্রাস করেই তৃণমূল সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো জিতে এসেছে, এবং এই ভাবেই তারা ফের ক্ষমতায় ফিরে আসবে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সবই মিথ্যে, এমন কথা বলছি না। কিন্তু শুধুমাত্র ভোট-সন্ত্রাস করে তৃণমূল একটার পর একটা নির্বাচন জিতে চলেছে, এটাও ঠিক নয়। সত্যটা এই যে, ভোটদাতাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ স্বেচ্ছায় এবং খুশি হয়েই তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন। বস্তুত, চার দিকে কিছুটা উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন বলেই তাঁরা ক্ষমতাসীন দলকে ভোট দিচ্ছেন। দুর্ভাগ্যবশত, তৃণমূলের শাসনকালে যে-উন্নয়ন পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে, ঘটছে সেটা বিশেষ প্রচার পায় না। ছড়ানো-ছেটানো নানা দুর্ঘটনায় চাপা পড়ে যায়। ভোট সন্ত্রাসের পাশাপাশি এই উন্নয়নের একটা খতিয়ান না রাখলে রাজ্যের সার্বিক চিত্র সম্বন্ধে আমাদের ধারণাটা অসম্পূর্ণ এবং একপেশে থেকে যাবে।

কোন কোন পরিসংখ্যান দিয়ে উন্নয়ন মাপব? যে পরিসংখ্যান দিয়েই মাপি না কেন, সেটা বিশ্বাসযোগ্য হওয়া চাই। উন্নয়ন যেহেতু একটা পরিবর্তন, তাই উন্নয়নকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৃদ্ধি দিয়ে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এটা ঠিক যে, উন্নয়ন মানে শুধুমাত্র বৃদ্ধি নয়। কিন্তু বৃদ্ধি বাদ দিয়ে কখনওই উন্নয়ন হতে পারে না। বস্তুত, অনেক প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যথেষ্ট আয়বৃদ্ধি ঘটলে অনুন্নয়নের বাকি সমস্যাগুলোও নিজের থেকে কমে যাবে। আমরা তাই সার্বিক বৃদ্ধির দিকেই তাকাব। মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি ছাড়াও দেখব তৃণমূলের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা এই তিনটি মূল ক্ষেত্র কী হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধিহারগুলোর সঙ্গে বাম আমলের বৃদ্ধিহারগুলোকে তুলনা করব। বৃদ্ধিহার হিসেব করার জন্য সব থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র হল সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অর্গানাইজেশন বা সিএসও, যার দেওয়া পরিসংখ্যান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে সহজেই পাওয়া যায়। আমরা এখানে সেই পরিসংখ্যানই ব্যবহার করছি।

তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে ২০১১ সালের ২০ মে। তত দিনে নতুন আর্থিক বছর মাস দুয়েক গড়িয়ে গেছে। চার দিকটা বুঝে নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে করতে আরও বেশ কয়েক মাস লেগে যাওয়ার কথা। আমরা তাই আমাদের হিসেব থেকে ২০১১-১২ সালটা বাদ দিচ্ছি। এই বছরটা বামফ্রন্টেরও নয়, তৃণমূলেরও নয়, এটা একটা নিছক পালাবদলের বছর। ২০১২-১৩, ’১৩-১৪ ও ’১৪-১৫ এই তিন বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৃদ্ধিহারের নিরিখে আমরা তৃণমূল শাসনের মূল্যায়ন করব। প্রতি বছরের বার্ষিক বৃদ্ধি হিসেব করে তার একটা গড় আমরা সংলগ্ন সারণির চার নম্বর কলামে নথিবদ্ধ করেছি। তুলনার জন্য পাশাপাশি দুই নম্বর কলামে রেখেছি ২০১১-১২ সালটাকে বাদ দিয়ে তার আগের তিন বছরের গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার। তিন নম্বর কলামে আর একটু দীর্ঘমেয়াদি, বামফ্রন্ট জমানার শেষ ছয় বছরের গড়। দুই এবং তিন নম্বর কলামের সংখ্যাগুলো দিয়ে আমরা বাম শাসনের সাফল্য বা অসাফল্য বোঝাতে চাইছি।

দেখা যাচ্ছে, কৃষি, পরিষেবা এবং সার্বিক মাথাপিছু আয়, এই তিনটি ক্ষেত্রেই তৃণমূল আমলের গড় বার্ষিক বৃদ্ধিহার বাম জমানার তুলনায় বেশি। একে আমরা অবশ্যই দ্রুততর উন্নয়ন বলতে পারি। উৎপাদন শিল্প বা ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে দু’একটা কথা বলার আছে। প্রথমত, সারণি থেকে যদিও এটা দেখা যাচ্ছে যে তৃণমূলের রাজত্বকালে আগের তুলনায় শিল্পের বৃদ্ধি কম হয়েছে, কিন্তু এর জন্য তৃণমূল দায়ী না কি সারা ভারতের সম্প্রতি ঝিমিয়ে পড়া শিল্প-পরিবেশ দায়ী, এটা আদৌ পরিষ্কার নয়। হিসেব করে দেখতে পাচ্ছি, ২০০৫-০৬ থেকে ’১০-১১, ২০০৮-০৯ থেকে ’১০-১১ এবং ২০১২-১৩ থেকে ’১৪-১৫ এই তিনটি পর্যায়ে সারা ভারতে শিল্পের বৃদ্ধিহার ছিল যথাক্রমে ৮.৮৬%, ৭.৫% এবং ৫.৬৬%। এই সংখ্যাগুলিকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পবৃদ্ধি হারের পাশাপাশি রাখলে বোঝা যাবে, দুইয়ের মধ্যে স্পষ্ট যোগ আছে। বাম রাজত্বের অধিকতর বৃদ্ধির একটা বড় কারণ সারা ভারতের উন্নততর বৃদ্ধি। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক হ্রাসপ্রাপ্ত শিল্পবৃদ্ধি সারা দেশের শিল্প-মন্দার প্রতিচ্ছবি। উপরন্তু, বাম আমলের শেষ ছয় বছরে ও শেষ তিন বছরে সারা ভারতের শিল্পবৃদ্ধির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২.০৮% এবং ২.১৫% পিছিয়ে ছিল। তৃণমূল রাজত্বে ফারাক কমে দাঁড়িয়েছে ১.৪৮%।

দ্বিতীয়ত, উৎপাদন-শিল্পকে নথিবদ্ধ ও অ-নথিবদ্ধ এই দুটি ভাগে ভাগ করে নিলে দেখা যাবে বাম জমানার একেবারে শেষ দিকে নথিবদ্ধ শিল্প বেশ সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল। এই হার তৃণমূল আমলে এসে অনেক কমে গেছে। কিন্তু এই আমলে অ-নথিবদ্ধ শিল্পের বৃদ্ধিহার বাম আমলের তুলনায় বেড়েছে। কেউ বলতেই পারেন, উন্নয়নের আসল চেহারাটা নথিবদ্ধ উৎপাদন-শিল্পের বিকাশের মধ্যে দিয়েই ফুটে ওঠে, যেহেতু অ-নথিবদ্ধ শিল্পের তুলনায় এখানে উৎপাদনশীলতা ঢের বেশি। কথাটা এক দিক থেকে ঠিক। কিন্তু অন্য দিক থেকে দেখলে, অ-নথিবদ্ধ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত অসংখ্য ছোট ছোট সংস্থা সম্মিলিত ভাবে যত কর্মসংস্থান করে, নথিবদ্ধ শিল্পের অন্তর্গত বড় শিল্পগুলি তার সামান্য ভগ্নাংশও পারে না। অর্থাৎ অ-নথিবদ্ধ শিল্পের বিকাশ ঘটলে বহু বেকার ছেলে কাজ পায়, গরিব মানুষের হাতে কিছু টাকাপয়সা আসে, এই সব সাধারণ মানুষ, যাঁরা সংখ্যায় অনেক, খুশি হয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে ভোট দেন। এটাই পশ্চিমবঙ্গে ঘটছে।

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তৃণমূলের জমানায় মাথাপিছু আয়ের যে বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে সেটা সারা ভারতেই ঘটেনি তো? যদি তা ঘটে থাকে তা হলে সমালোচকরা বলবেন তৃণমূলের আলাদা কোনও কৃতিত্ব নেই, সারা ভারতের বৃদ্ধির ঢেউ পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছেছে মাত্র। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমরা পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সারা ভারতের মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার তুলনা করে দেখেছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০০৫-০৬ থেকে ২০১০-১১, বাম আমলের এই শেষ ছয় বছর পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার সারা ভারতের তুলনায় ধারাবাহিক ভাবে কম ছিল। ২০১১-১২ থেকে রাজ্যে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার বাড়তে শুরু করেছে, যদিও সারা ভারতের বৃদ্ধিহার তখনও নিম্নগামী। ২০১২-১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি সারা ভারতের গড় আয়বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে, এবং এখন অবধি সারা ভারতের বৃদ্ধিহারের ওপরেই রয়েছে। অর্থাত্, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির নিরিখে সারা ভারতের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। এর জন্য তৃণমূলকে খানিকটা কৃতিত্ব তো দিতেই হবে।

এই উন্নততর বৃদ্ধি কেমন করে সম্ভব হল? ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল একটা প্রশাসনিক সংস্কার করেছিল যেটা খুব একটা বিজ্ঞাপিত নয়। আগে, বামফ্রন্টের আমলে, স্থানীয় নেতারা স্থানীয় স্তরে কী কাজ করছেন সেটার ওপর তেমন কোনও নজরদারি ছিল না। স্থানীয় ব্যাপারে স্থানীয় নেতারাই ছিলেন শেষ কথা। ফলে নীচের স্তরে কী কাজ হচ্ছে, উপরমহল সেটা জানতে পারত না। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল স্তরের কাজের জন্য স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে, কিংবা আরও বেশি করে, প্রশাসনকে জড়িয়ে ফেলা হল। বিডিও, এসডিও, ডিএম-রা তৃণমূল স্তরের উন্নয়নের জন্য সরাসরি দায়বদ্ধ হয়ে পড়লেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এক দিকে যেমন এই প্রশাসনিক ব্যক্তিদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া হল, তেমনই অন্য দিকে বাড়ল এঁদের দায়বদ্ধতাও। এখন, শুধু যে নবান্ন’তে বসে মুখ্যমন্ত্রী এঁদের কাজকর্মের ওপর কড়া নজর রাখছেন তাই নয়, নিয়মিত জেলা সফরে গিয়ে সরাসরি এঁরা কী-কী কাজ করেছেন আর কী-কী কাজ করা বাকি আছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ান তিনি নিজের চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন।

এই নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির ফলে উন্নয়নের কাজে গতি এসেছে। গ্রামের মানুষের কাজের পরিবেশ, তা সেই কাজ কৃষি হোক, ক্ষুদ্রশিল্প বা পরিষেবা, আগের তুলনায় অনেক ভাল হয়েছে। মাথাপিছু আয়, কৃষি, পরিষেবা এবং অ-নথিবদ্ধ শিল্পের উচ্চতর বৃদ্ধিহারের মধ্যে এরই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি নির্বাচনের ফলের মধ্যেও।

ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট, কলকাতা’য় অর্থনীতির শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE