খাবারের মান?
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চৈতন্যপুরে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বিশ্ব স্থাস্থ্য দিবস উপলক্ষে মিড ডে মিলের ব্যাপারে ‘ফুড সেফটি’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দুই ডেপুটি সিএমওএইচ, হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইত্যাদি বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি।
কিন্তু যাঁরা মিড ডে মিলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত অর্থাৎ যাঁরা খাবার তৈরি করেন, পরিবেশন করেন, খাদ্যদ্রব্য রক্ষণাবেক্ষণ করেন, সেই সব রান্নার লোক এবং শিক্ষা প্রতিনিধিদের এই আলোচনাসভায় ডাকা হল না কেন? এঁরাই ভাল বলতে পারবেন খাদ্যদ্রব্য তৈরি, পরিবেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণে কী কী অসুবিধা হচ্ছে, সরকারের তরফে কী কী গাফিলতি আছে, রান্নার চাল-ডাল এবং তরিতরকারি পুকুরে ধোয়া এবং রান্নাবান্না হয় কি না, রান্নার পর খাদ্যদ্রব্য কোথায় এবং কী ভাবে রাখা হয়, ইত্যাদি।
খাবারের ‘গুণমান’-এর কথা বলা হয়েছে। সরকার থেকে ছাত্রছাত্রী পিছু ৩.৬৯ টাকা এবং ১০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ করা আছে। ৩.৬৯ টাকায় কি ডাল তেল নুন মশলা তরিতরকারি এবং সপ্তাহে একটা করে ডিম দেওয়া সম্ভব এই বাজারে? এই পয়সায় টাটকা জিনিস আসবে কোথা থেকে? স্বাভাবিক ভাবে কম দামের জিনিস কেনার প্রবণতা থাকবে, যা খেলে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে।
বিনোদবিহারী মণ্ডল। ধারিন্দা, তমলুক
এবং কলকাতা
কলকাতার নজিরবিহীন প্রাধান্যের কথা বড় একটা উচ্চারিত হয় না। ‘শহর মানে কি শুধু কলকাতা’ (১৬-৪) সে অর্থে ব্যতিক্রমী লেখা। পড়তে গিয়ে হুগলির রাধানগর সম্পর্কে অনেক কাল আগে লেখা সারদাচরণ মিত্রের একটা লাইন মনে পড়ল—‘‘ ম্যালেরিয়া জ্বর ও তদপেক্ষা ক্ষতিকর কলিকাতার আকর্ষণী শক্তি রাধানগরকে অরণ্যে পরিণত করিতেছে’’ আসলে শহর মানে বঙ্গসন্তানের কাছে শুধুই কলকাতা। বিনয় ঘোষ যে বাংলার বিদ্বৎ সমাজ লিখলেন তা তো কলকাতার বিদ্বৎ সমাজ। নীহাররঞ্জন রায় আক্ষেপ করতেন—‘বাঙালির আধুনিক চিন্তা এই শহরেই সীমাবদ্ধ’। বিশ শতকের প্রথমার্ধেও ‘‘গ্রামাঞ্চলে আমরা সাধারণত অন্নপায়ী বঙ্গভাষী, স্তন্যপায়ী জীব, জন-দশেকে জটলা করি তক্তপোশে বসে’’ ডাক্তার বদ্যি থেকে সন্তানের এডুকেশন — শেষ আশ্রয় কলকাতা (না হয় দাক্ষিণাত্য)। মফস্সলের ‘সিভিল লাইফ’ ওরফে অফিসপাড়ার ছবিটা সবর্ত্র প্রায় এক সাইকেল স্ট্যান্ড ‘ফুল’। ওষুধ দোকান লাগোয়া খুপরিতে মাসের প্রথম বা শেষ কোনও ‘বার’-এ আগত ‘কলিকাতার বিশিষ্ট’ কোনও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুকে দেখানোর ভিড়। রাতে সব সুনসান।
ভিন রাজ্যে রাজধানী না-হলেও কোয়ম্বত্তূর, সম্বলপুর বা ইনদওরের মতো বহু জনপদ পুরোদস্তুর শহর। এখানে মফস্সলি শহরগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কোনও উদ্যোগ কখনও গৃহীত হয়েছে বলে মনে পড়ে না। কিছু কমপ্লেক্স শপিং মল এতেই কি শহর হয়ে যায়? নীরদ চৌধুরী যে এক গ্রামীণ শহর সম্পর্কে একদা লিখেছিলেন— একটা সাইক্লোনই গ্রাম আর শহরের পার্থক্য নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট। তা থেকে ছবিটা কতটা বদলেছে? সুকমার সিংহ সাতাশ বছর আগে ‘How urban is urban West Bengal?’ নামে লেখা এক প্রবন্ধে এই সব ‘অপ্রিয়’ বিষয় লিখেছিলেন। পরিণতিতে আন্দুল পেরোলেই আজও ধানখেত। আর শুধু সরকারি উদ্যোগের অভাব বললেই সব চোকে না। মানসিকতার বদলটাও জররি। এই যে কলকাতার সীমানা (তস্য তস্য সীমানা হলেও সই) ছাড়িয়ে আবাসন নির্মাণ, যে ভাবে হোক কলকাতার একটা আশ্রয় চাই (কারণটাও গুরুত্ব সহকারে ভাববার বিষয়)— সেটাও গৌণ নয়। বাঙালির এই কলকাতা-নির্ভর জীবন মফস্সল শহরগুলোর কলকাতার ‘অন্ধ অনুকরণ’ পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলোর প্রসারিত না-হতে পারার অন্যতম কারণ। কিছু হতে হলে কলকাতার সঙ্গে সংযোগ রাখতেই হবে। এটার রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হল না। ফকিরমোহন সেনাপতি তো বালেশ্বরে বসেই বিখ্যাত হয়েছিলেন। তা হলে কেন কলকাতা, কলকাতা এবং কলকাতা?
শেখর ভৌমিক। কলকাতা-৫৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy