আন্দোলন না হাঙ্গামা
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রীর তাণ্ডব কী ভাবে অসীম চট্টোপাধ্যায়ের (‘নৈরাজ্যবাদী ভ্রষ্ট আন্দোলন নয়’, ৩-৯) কাছে ষাটের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্র আন্দোলনের প্রতি দায়বদ্ধতাজাত মনে হয়? ধুন্ধুমার সৃষ্টিকারী কতগুলি ছেলেমেয়ের আচরণে ষাট দশকের আর একটা দিশাহীন আন্দোলনের ছায়া দেখে অসীমবাবু কোন ‘অপরিসীম মায়ায় আচ্ছন্ন’ হতে চান তা-ও তিনিই বলতে পারবেন।
ছাত্রছাত্রীদের আচরণ সম্পর্কে অসীমবাবু লিখেছেন, তা ছিল ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ ছাত্র আন্দোলনের অংশ। ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ বলতে বোঝায় আপনা হতে প্রকাশিত। কিন্তু তার সঙ্গে অভব্যতা বা অসভ্যতার সম্পর্ক থাকবে কেন?
অসীমবাবু যতই বলুন, ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে স্লোগান দেওয়া দেওয়াল লিখন, পোস্টার বিশাল মিছিলের কলেজ প্রদক্ষিণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে অচলায়তন ভেঙে প্রেসিডেন্সিতে ‘নতুন ঐতিহ্য’ গড়ে ওঠে, সেই অবাঞ্ছিত ঐতিহ্য আসলে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির বিস্তার ছাড়া আর কিছু নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে চলবে সে বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের কোনও নির্ণায়ক ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা দু’বছর বা চার বছরের সাময়িক শিক্ষার্থী। তাদের কীসে ভাল হবে সে কথা ভাবার জন্য আছেন অধ্যাপকেরা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা যা উপভোগ করতে পারেন তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও সৌহার্দ্য। সেই সারস্বত সংসর্গের খোঁজ এখনও প্রেসিডেন্সিতে মিললেও মিলতে পারে।
মনোজ ঘোষ। কলকাতা-৬১
॥ ২ ॥
কৃষ্ণা বসু (‘প্রথম ধাক্কাটা ছিল নকশাল আন্দোলনের’, ৩-৯) স্বপ্নের অবতারণা করেছেন, ‘কোনও এক পুণ্য প্রভাতে সকল রাজনৈতিক দল মিলিত ভাবে ঘোষণা করবে আজ থেকে আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে হাত তুলে নিলাম।’ এ তো সব দেশে, সব কালেরই শিক্ষককুলেরই স্বপ্ন। বিশেষত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যখন শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করে। তবে, শিক্ষাক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবেদক যে মত প্রকাশ করেছেন তা কি সত্যিই সংকীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে?
তিনি লিখেছেন, ‘এ কথা সর্বজনবিদিত যে, সে আমলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ায় ভাইস চ্যান্সেলর প্রিন্সিপাল থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী যাই হোক না কেন, কর্মদক্ষতা নয়, দলীয় আনুগত্য ছিল মাপকাঠি।’ কথাটা আমার মতো রাজ্যের হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ভূতপূর্ব সাংসদের এমন উক্তি আগামী প্রজন্মকে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার গুণমান সম্পর্কেও সন্দিহান করে তুলতে পারে। যদিও, আশার কথা, লেখক তাঁর বহু কৃতী ছাত্রছাত্রীর উত্তরণের কথাও উল্লেখ করেছেন, যাঁরা কিন্তু ওই বিশেষ সময়ের প্রতিনিধি!
লেখকের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, সত্যই কি তিনি বিশ্বাস করেন ওই চৌত্রিশ বছরে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি ছিল দলীয় আনুগত্য? দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর আমাদের রাজ্যে যাঁরা এই মহান পেশায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা সকলেই কি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের দলদাস?
নিলয়কুমার সাহা। কলকাতা-৫১
বিরল মানুষ
রাষ্ট্রপতি আবদুল কালামের বিদায় যেন প্রিয়জনের চলে যাওয়া। মানুষটির মুখে সুন্দর হাসি লেগেই থাকত। সে হাসির সঙ্গে আনন্দের এক নিবিড় সংযোগ। স্কুলকলেজের ছেলেমেয়েরা তাঁর খুব প্রিয় ছিল। সকলের সঙ্গে আপন মানুষের মতো মিশতেন। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর ছুটি ঘোষণা করতে নিষেধ করেছিলেন, বলেছিলেন সে দিন আরও বেশি করে কাজ করতে। কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে কিছু করবে, যদিও তিনি তা কতটা চাইতেন জানি না। তবে আমাদের উত্তরপ্রজন্মের জন্য তেমন কিছু করা জরুরি।
অলি বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-৪৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy