Advertisement
১১ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

যৌন পেশাকে অন্যান্য জীবিকা নির্বাহের মতো একটি পেশা হিসাবে গণ্য করে যৌনকর্মীদের জন্য আইনি স্বীকৃতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দাবি, পতিতাপল্লিতে এডস ও মহামারী নিয়ন্ত্রণ, বারবনিতাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তথা মানবাধিকার প্রদান, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা এবং এই পেশায় দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করে চলেছে সর্বভারতীয় যৌনকর্মী সংগঠনগুলি।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

ওঁরা তো আমাদের ঘরের মেয়েই

যৌন পেশাকে অন্যান্য জীবিকা নির্বাহের মতো একটি পেশা হিসাবে গণ্য করে যৌনকর্মীদের জন্য আইনি স্বীকৃতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দাবি, পতিতাপল্লিতে এডস ও মহামারী নিয়ন্ত্রণ, বারবনিতাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তথা মানবাধিকার প্রদান, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা এবং এই পেশায় দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করে চলেছে সর্বভারতীয় যৌনকর্মী সংগঠনগুলি। একই দাবিতে বিভিন্ন সমাজ সংস্কারক সংস্থা এবং নারীবাদী সংগঠন বহু বার পতিতা উদ্ধার কর্মসূচি গ্রহণ করে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। অন্য দিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত ৭-৮ অগস্ট আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যৌনপেশায় নিযুক্ত মেয়েদের অধিকার রক্ষায় ব্রতী হতে হবে দুনিয়ার সব দেশকে। (‘শরীর কেনাবেচার অধিকার?’, শাশ্বতী ঘোষ, ১৫-৯)।

প্রসঙ্গত, যৌনকর্মীদের যাবতীয় দাবিদাওয়ার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে এঁদের শ্রমিকের সমমর্যাদা প্রদানে ১৯৯৭ সালে দিল্লির যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত সম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার আঠারো বছর বাদেও ওই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করেনি অতীতের এনডিএ এবং ইউপিএ আর বর্তমানে মোদী সরকারও।

এই প্রেক্ষাপটে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে শীর্ষ আদালত একটি নির্দেশ জারি করে তৎকালীন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকে জানিয়েছিল, স্বেচ্ছায় যাঁরা বারবনিতা বৃত্তিতে যুক্ত, সেই যৌনকর্মীদের কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে কেন্দ্রকে। যৌনকর্ম পেশা হিসাবে আইনসিদ্ধ না-হওয়ায় সে সময় ওই নির্দেশ নিয়ে ধন্দে পড়া তৎকালীন মনমোহন সিংহ সরকারের তরফে হলফনামা পেশ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আদালত পতিতাবৃত্তিকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে কি না। উত্তরে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, এই সংক্রান্ত আইনি অবস্থানের পরিবর্তন করা না-হলেও অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির নির্দেশটি যথারীতি বহাল থাকছে।

মনে হতে পারে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশটি স্ববিরোধী। কারণ, যে পেশা আইনের চোখে অবৈধ, তাকে দমন করাই তো যুক্তিযুক্ত। সে ক্ষেত্রে যৌনকর্মের মতো বেআইনি বৃত্তির নিরাপত্তা দানের বাধ্যতা বা দায়বদ্ধতা সরকারের থাকার কথা নয়। অন্য দিকে, সামাজিক ন্যায় তথা সাম্যের যুক্তিতে অবশ্যই তা থাকার কথা।

খেয়াল করা দরকার, প্রচলিত আইনে যৌনকর্মকে কার্যত অপরাধের সমপর্যায়ভুক্ত করে দেখানো হলেও এই পেশাটির এমনই ধরন, যার সঙ্গে অপরাধের অথবা অপরের অধিকার হরণের কোনও যোগসূত্র নেই। চুরি ডাকাতি বা রাহাজানির ক্ষেত্রে যেমন অন্যের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া বোঝায়, নদীতে আবর্জনা ফেললে যেমন নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর আঘাত বোঝায়, যৌন পেশার ক্ষেত্রে তেমন সরাসরি কারও ক্ষতি বা লোকসানের কোনও ব্যাপার নেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ অবশ্য বলতে পারে, এই পেশার সঙ্গে পরিবারের ভাঙন তথা স্ত্রীর অধিকার অপহরণের সম্ভাবনা থাকায় এর উপর আইনি ও নৈতিক খবরদারি থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু সেটা আসলে ঠুনকো অজুহাত।

বেশ্যা, বারবনিতা, বারবধূ, নগরনটী, গণিকা, পতিতা, দেহপসারিনি, রূপোপজীবিনী, জনপদবধূ কিংবা যৌনকর্মী— যে নামেই ডাকা হোক না কেন, পৃথিবীর আদিমতম পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিলারা আসলে আমাদের ঘরের মা বউ বোন। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুশাসনে অনবরত উৎপীড়ন ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে না-পেরে পরিশেষে এঁরা যৌন পেশায় যুক্ত হতে বাধ্য হন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যুগান্তর ও আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার রকমারি পরিবর্তন সত্ত্বেও দেহব্যবসা বন্ধ হয়নি। একে অন্যায় ও অনৈতিক ঘোষণা করে এই পেশার উপর রকমারি বাধানিষেধ আরোপ করার পরেও এটি সমানে সক্রিয়।

পশ্চিমি দেশে যৌনকর্মীরা সংগঠন গড়ে নিজেদের নিরাপত্তা খানিকটা মজবুত করলেও ভারতের মতো দেশে যৌনপেশাকে কেন্দ্র করে মূর্তিমান বিভীষিকার মতো বহাল রয়েছে মস্তান, দালাল, রাজনৈতিক নেতা ও আইনরক্ষকের অশুভ আঁতাঁত। তদুপরি নিষিদ্ধপল্লির সন্তানদের সুরক্ষার একান্ত অভাব এবং এই সব হতভাগ্যের স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষেত্রে অজস্র বাধা বিদ্যমান। তাই এ প্রশ্ন ওঠেই যে, কেন এই পেশাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হবে না?

মানসকুমার রায়চৌধুরী। কলকাতা-২৬

চার জন ছিলাম

‘বিজনকে মনে রেখে’ তথ্যচিত্রটি (কলকাতার কড়চা, ১৪-৯) সুপ্রিয় সেন একক ভাবে পরিচালনা করেননি। দায়িত্বে ছিলেন আরও তিন জন: শমিত বসুমল্লিক, তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়ন্ত চক্রবর্তী। আমি জনসংযোগের বিষয়টি দেখতাম। নির্মাণের পর তথ্যচিত্রটি যেহেতু একটি পরিবেশ আন্দোলনের জায়গায় পৌঁছতে শুরু করে তাই জনসংযোগের দায়িত্বটাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। এরই সুবাদে শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক এবং আইনি লড়াই। আইনি লড়াইয়ে নাগরিক মঞ্চ একটি বিশেষ ভূমিকা নেয়। তথ্যচিত্রটি এ দেশে খোলামঞ্চ ছাড়াও বিদেশে প্রথম প্রদর্শিত হয় ঢাকার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে। সুপ্রিয় এবং শমিতের সঙ্গে সেই উৎসবে (১৯৯৭) আমিও বাংলাদেশ গিয়েছিলাম।

অশোকতরু চক্রবর্তী। কদমতলা, হাওড়া

তবু ভাল

এক কিশোরের হারিয়ে যাওয়ার খবর চমকে দিল। (‘ছেলেটাকে চিনি...’, ১৩-৮) বাংলাদেশের ওই কিশোর এক মাদক পাচারকারীর পাল্লায় পড়ে ভারতে আসে। পরে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের সাহায্যে এক হোমে আশ্রয় পায়। হোমে তার উপর অকথ্য অত্যাচার হত। সেখান থেকেও পালিয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে অন্য এক হোমে আশ্রয় পেল সে। হোমটি তুলমনামূলক ভাবে ভাল। ওখানেই এক দিন একটি আনন্দবাজার পত্রিকা ছেলেটির হাতে এল। আর নিজের ছবি দেখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। ছেলেটি কিছুটা লেখাপড়া জানত। পরে সরকারি হস্তক্ষেপে তার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তবু তো এই ছেলেটি শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরতে পেরেছে। কত শিশুর সে সৌভাগ্য হয় না। এই করুণ অবস্থা কবে শেষ হবে?

অলি বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-৪৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE