কেন আজও
শিশির মজুমদার (‘৩৪ বছরেও...’, সম্পাদক সমীপেষু, ২১-৯) উত্তর বাংলায় পিছিয়ে পড়া গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। প্রশ্ন রেখেছেন, ৩৪ বছরেও কেন নিরক্ষরতা ঘুচল না। বর্তমান প্রতিবেদকের দীর্ঘ ৩২ বছরের বেশি সময় শুধু উত্তর বাংলায় নয়, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর অঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম পেশাগত কারণে থাকার সুবাদে মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা হয়েছে।
১৯৮৩’তে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চাকরি নিয়ে ২০১৫’র মাঝামাঝি অবসর পর্যন্ত চার জেলার সহস্রাধিক গ্রামে কাজ করেছি। মনে পড়ে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ৩০০ কিমি দূরে বদলি হয়ে ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসের সকালে তখনকার পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর ব্লকের শকুন্তলা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা উদ্বোধন ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা। ২২ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে বিদ্যুৎ নেই। পাকা সড়ক দূরের কথা, কাঁচা সড়ক পর্যন্ত নেই। একটা ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হল। কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন ব্যাঙ্কের বই খুলতে। ঋণ নিতে। আদিবাসী মানুষ টিপসই দিয়ে পাশবই খুলে যাচ্ছেন। লেখাপড়া করা লোক দুরবিন দিয়ে খুঁজতে হয়।
৩২ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আজও দেখছি নিরক্ষর মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় চরম হতাশার করুণ দুর্দশা। দীর্ঘ চারটি জেলায় ব্যাঙ্কের (বদলি) চাকরির অবসরকালীন অবস্থায়ও দেখলাম হাজার হাজার টিপসই দেওয়া আমানত। ঋণগ্রহীতা হয় টাকা জমা দিচ্ছেন, তুলছেন বা ঋণ নিচ্ছেন। আমি একা নই, গ্রামে যাঁরা ব্যাঙ্কের গ্রামীণ শাখায় চাকরি করেছেন বা এখনও করছেন তাঁদের প্রত্যেকের একই অভিজ্ঞতা। ডিজিটাল ইন্ডিয়া হোক, ইন্টারনেট প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে বসে বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বানাক, কিন্তু নিরক্ষরতার অভিশাপ কবে দূর হবে?
কুণালকান্তি দে। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy