Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

নিউটন ও হ্যালি যা করেছিলেন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

নিউটন ও হ্যালি যা করেছিলেন

পথিক গুহ (‘চমত্‌কার দৈত্য’, রবিবাসরীয়, ১৬-৩) লিখেছেন, ‘প্রিন্খিপিয়া ম্যাথমেটিকা’র নতুন সংস্করণে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বশেষ তথ্য সংকলনের জন্য নিউটন অ্যাস্ট্রোনমার রয়াল ও গ্রিনউইচ মানমন্দিরের অধিকর্তা জন ফ্ল্যামস্টিডের কাছ থেকে তাঁর সংগ্রহ করা গ্রহ-তারার চলনের তথ্য চান এবং ফ্ল্যামস্টিড তা দিতে রাজি না-হওয়ায় নিউটন পদাধিকার বলে তাঁকে রয়াল সোসাইটি থেকে বহিষ্কৃত করেন।

আসল ঘটনা ছিল কিন্তু কিছুটা অন্য রকম। জন ফ্ল্যামস্টিড সারা জীবন ধরে নক্ষত্রসমূহের নতুন মানচিত্র তৈরি করেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সব মানচিত্র দেখার জন্য সে সময়ের বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঔত্‌সুক্য জাগে। ১৬৭৫ সালে ফ্ল্যামস্টিড অ্যাস্ট্রোনমার রয়াল হওয়ার পর আশা করা হয়, তিনি তাঁর আহৃত যাবতীয় তথ্য বিজ্ঞানী মহলের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। কিন্তু তিনি সব সময় বলতেন, তাঁর পরীক্ষানিরীক্ষায় আরও পরিমার্জনের প্রয়োজন এবং তিনি কিছুই প্রায় প্রকাশ করেননি। নিউটন ১৭০৩ সাল থেকে ছিলেন রয়াল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ফ্ল্যামস্টিডের অফিসে গেলে ফ্ল্যামস্টিড তাঁকে কথা দেন, তাঁর কাজ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। তার বেশ কয়েক বছর পরে ফ্ল্যামস্টিড তাঁর পর্যবেক্ষণের যাবতীয় তথ্যের অনুলিপি এবং গ্রহনক্ষত্রের তালিকার খসড়া রয়াল সোসাইটিকে দেন এবং জানান যে, তালিকাটি তখনও প্রকাশের উপযোগী হয়নি।

নিউটনের বন্ধু বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ভূপদাথর্র্বিদ, গণিতজ্ঞ ও আবহবিদ এডমন্ড হ্যালি ১৬৭৫ এবং ১৬৭৬ সালে অক্সফোর্ড ও গ্রিনউইচ ফ্ল্যামস্টিডের সঙ্গে কাজ করেন। অনেক দেরি হচ্ছে দেখে নিউটন হ্যালিকে ফ্ল্যামস্টিডের ক্যাটালগ প্রকাশের ভার দেন। মনে রাখতে হবে, হ্যালির ক্রমাগত উত্‌সাহে নিউটন শেষ পর্যন্ত ‘প্রিন্খিপিয়া...’ বইটি লেখেন এবং হ্যালি প্রিন্খিপিয়া সম্পাদনা করেন ও প্রকাশের ব্যয়ভারও বহন করেন।

প্রথমে Historia Coelestis Britannica নামে একটি অসম্পূর্ণ তালিকা ১৭১২ সালে প্রকাশিত হয় এবং পরে সম্পূর্ণ তালিকা তিন খণ্ডে ১৭২৫ সালে প্রকাশিত হয়। যার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। ওই তালিকায় উত্তর গোলার্ধের যে মানচিত্র আঁকা হয় তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এক হাজার থেকে তিন হাজারের মতো নক্ষত্রও। ফ্ল্যামস্টিডের এই বিশাল কাজে বিজ্ঞানীরা আনন্দিত হন ও তাঁর প্রশংসা করেন। হ্যালি নিজে তালিকাটি প্রকাশের ব্যাপারে গোড়া থেকেই তাঁকে অবহিত করলেও ফ্ল্যামস্টিড হ্যালি ও নিউটনের উপর এমনই অসন্তুষ্ট হন যে প্রকাশিত তালিকার যতগুলো কপি তিনি হাতে পান সবগুলোই সকলের সামনে পুড়িয়ে ফেলেন। ফ্ল্যামস্টিডের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে হ্যালি দক্ষিণ গোলার্ধের ৩৮১টি নক্ষত্রের অক্ষাংশ ও দ্রামিঘা-সহ অন্যান্য বিবরণ ১৬৭৯ সালে প্রকাশিত তাঁর Stellarum Australium বইটিতে তালিকাভুক্ত করেন।

মনোজ ঘোষ। কলকাতা-৬১

প্রতিবেদকের উত্তর

‘আসল’ ঘটনা ‘অন্য রকমের’ বলতে পত্রলেখক কী বলতে চেয়েছেন? নিউটন ফ্ল্যামস্টিড কাজিয়ায় ফ্ল্যামস্টিডই দোষী? তা হলে যে বলতে হয় না, তা সত্যি নয়। এ ক্ষেত্রে ‘আসল’ ঘটনা অন্য রকম। ওঁদের দু’জনের কেউই ধোয়া তুলসীপাতাটি নন, তবে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ানোয় নিউটন ছিলেন বেশি দক্ষ। অবশ্য, সে কাজে তিনি যে সমসাময়িক গবেষকদের চেয়ে অনেক বেশি সফল হয়েছিলেন, তার মূলে ছিল তাঁর খ্যাতি এবং প্রতিপত্তি। নিউটন-ফ্ল্যামস্টিড কাজিয়া বিশ্লেষণ করেন যে সব বিশেষজ্ঞ, তাঁরা বাদ দেন না শৈশবে দু’জনের তিক্ত অভিজ্ঞতার দিকটি। নিউটন জন্মের আগে পিতৃহারা, শৈশবে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত। ফ্ল্যামস্টিড তিন বছর বয়সে মাতৃহারা, বাবার অত্যাচারের শিকার এবং যৌবনকাল থেকে বাতরোগে আধা-পঙ্গু। বঞ্চনার ক্ষত গভীর দাগ ফেলেছিল দু’জনের মনে। নিজেদের খ্যাতি আঁকড়ে ধরায় দু’জনেই ছিলেন সদা ব্যগ্র।

ফ্ল্যামস্টিডের সঙ্গে নিউটনের ঝগড়ার পিছনে যাঁর ভূমিকা অনেকখানি, তিনি এডমন্ড হ্যালি। ফ্ল্যামস্টিড মারা যাওয়ার পর যিনি তাঁর পদে আসীন হন। হ্যালি অন্যের গবেষণা আত্মসাত্‌ করেছেন, ফ্ল্যামস্টিড এই অভিযোগ করার পর থেকে তার সঙ্গে হ্যালির শত্রুতার সূত্রপাত। হ্যালির প্রভাব থেকে নিউটনকে বের করে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ফ্ল্যামস্টিড। এরপর নানা কারণে ওঁদের দু’জনের মধ্যে বিবাদ বাড়ে। ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় আকাশে ধূমকেতু লক্ষ করে নিউটন যখন বলেন যে সেটি আগে দেখা যায়নি, তখন ফ্ল্যামস্টিড দাবি করেন, ওটি পুরনো ধূমকেতু। যা কয়েক মাস আগেই আকাশে উদয় হয়েছিল। ১৬৮৭ সালে ‘প্রিন্‌খিপিয়া’ প্রকাশিত হওয়া মাত্র ফ্ল্যামস্টিড অভিযোগ করেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন গ্রিনউইচ মানমন্দির থেকে যে পরিমাণ তথ্য নিউটন পেয়েছেন, সে তুলনায় ওই বইতে যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়নি। এ সব ছাড়াও নিউটন-ফ্ল্যামস্টিড কাজিয়ার মূলে ছিল একটা মতাদর্শগত সংঘাত। ফ্ল্যামস্টিড, যাঁর আকাশ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা ছিল গর্ব করার মতো, তিনি দাবি করতেন যে, বিজ্ঞানে বেশি মূূল্যবান হল পরীক্ষানিরীক্ষা। আর নিউটন মনে করতেন, বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল তত্ত্ব। খনি থেকে সোনা সংগ্রহ না অলংকার বানানো কোনটা বেশি দামি। সে ব্যাপারে দু’জনে দু-রকম মন্তব্যও করেছিলেন। আর, ১৭২৫ সালে তিন খণ্ডে নক্ষত্রপঞ্জি প্রকাশের যে তথ্য পত্রলেখক পেশ করেছেন, তার পিছনের ইতিহাসও তো কলঙ্কিত। ফ্ল্যামস্টিড মারা যান ১৭১৯ সালে। তার আগে ১৭১৭ সালে ওই নক্ষত্রপঞ্জির জন্য এক দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছিলেন তিনি। যাতে ছিল নিউটন এবং তস্য সুহৃদ হ্যালির হাতে তাঁর নিগ্রহের কাহিনি। ১৭২৫ সালে যখন ছাপা হল বই, তখন লেখকের ধরাধামে না-থাকার সুযোগ নিয়ে ওই ভূমিকা থেকে তাঁদের অপছন্দের অংশ বেবাক ছেঁটে দেন হ্যালি ও নিউটন!

যান্ত্রিক

সমরেশ মজুমদারের আক্ষেপ (‘আমার সকাল ফুরিয়ে গেল’, ১২-৪) প্রসঙ্গে জানাই, এই অবস্থার প্রধান কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যান্ত্রিক উন্নতি। কাকভোরে বাড়ির অন্দরমহল ব্যস্ত হয়ে উঠত গোয়ালঘর, রান্নাঘর, হেঁসেল আর উঠোন দালান পরিষ্কার নিয়ে। আজ তো আমরা বর্গফুটে বাস করি আর দিনগত পাপক্ষয় করি। সকাল রোজই অকালে ফুরিয়ে যায়। পড়ে থাকে দাহকর্ম শেষে বা মহালয়ায় গঙ্গাস্নান।

পল্টু ভট্টাচার্য। রামরাজাতলা, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE