Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

শরণার্থী মানে কী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০০:২৪
Share: Save:

সম্প্রতি ‘শরণার্থী’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ শব্দ দুটি নিয়ে রাজ্য ও দেশ জুড়ে অকথা-কুকথার এক কুনাট্যে অংশগ্রহণ করেছেন নেতা-নেত্রীগণ। তাঁরা তাঁদের সুবিধা মতো শব্দ দুটির ব্যাখ্যা করেছেন। যেহেতু এঁরা রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী হিসাবে নিজেদের দাবি করেন তাই শব্দ দুটির ঠিক অর্থ তাঁদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত সনদের ১৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এক জন ‘উদ্বাস্তু’ বা শরণার্থী’ হলেন A person who owing to a well founded fear of being persecuted for reasons of race; religion; nationality; membership of a particular social group or political opinion; is outside the country of his nationality; and is unable to or owing to such fear is unwilling to avail himself of the protection of that country or return there because there is a fear of persecution.. (Adopted on 28th july 1951 by the United Nations Conference of Plenipotentiaries on the Status of Refugees and Stateless Persons) উক্ত সনদে আরও বলা হয়েছে, উপরোক্ত পাঁচটি কারণ ছাড়া অন্য কোনও কারণে কেউ অন্য দেশে ঢুকলে তাঁকে উদ্বাস্তু বা শরণার্থী বলা যাবে না। অন্য কোনও কারণে কেউ নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে প্রবেশ করলে তাঁকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবেই চিহ্নিত করতে হবে। পূর্ববাংলা (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে কোটি কোটি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইত্যাদি ধর্মের মানুষেরা ধর্মীয় কারণেই অত্যাচারিত হয়েছেন, দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে তাঁদের। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী তাই তাঁরা শরণার্থী।

ভারত পাকিস্তানের মধ্যে দুটি চুক্তি হয়েছে এ সংক্রান্ত। প্রথম চুক্তিটি (নেহরু-লিয়াকত চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়েছিল ৮ এপ্রিল ১৯৫০। পরবর্তী কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের মধ্যে নেহরু-নুন চুক্তি হয়েছিল। দুটি চুক্তিতেই বলা হয়েছিল স্ব স্ব দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হলে যে দেশে তাঁরা প্রবেশ করবেন সেই দেশে তাঁদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী, পূর্ব বাংলা থেকে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষদের শরণার্থী হিসাবে গণ্য করতে হবে। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে কোনও মুসলমান ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ভারতে আসেননি, এসেছেন অন্য কারণে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অথবা উপরোক্ত দুটি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত মুসলমানরা তাই অনুপ্রবেশকারী।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ সংক্রান্ত আরও একটি চুক্তি হয় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে, যা ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত। ভারত চুক্তির ধারাগুলি মানলেও পাকিস্তান আর বাংলাদেশ এগুলি কখনও মানেনি।

তাই আমাদের রাজ্যের নেতৃবৃন্দের কাছে বিশেষ ভাবে কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের দলছুট তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ, ‘দেশভাগ’, ‘হিন্দু-মুসলিম সমস্যা’ ‘শরণার্থী’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ ইত্যাদি বিষয়ে মন্তব্য করার আগে বিষয়গুলি একটুু জেনে নিন। একটু ইতিহাস পড়ুন, নিজেদের দলেরও ইতিহাস পড়ুন, নিজেদের দলের ভূমিকা জানুন, তার পর মন্তব্য করুন।

বিনয়ভূষণ দাশ। গোপজান, মুর্শিদাবাদ

দুটি কথা

স্বপন সরকার (‘অনড় নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী বাছলেন...’, ২০-০৫) লিখেছেন, ‘এই প্রথম কোনও দলিত বা মহাদলিত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে চলেছেন।’ কথাটা ঠিক নয়। দলিত দুসাদ জাতির ভোলা পাসোয়ান শাস্ত্রী ১৯৬৮, ’৬৯ ও ’৭১-এ (তিন বারই খুব কম সময়ের জন্য, মোট ৩৩৫ দিন) মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৭৯-৮০ সালে রামসুন্দর দাসও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন (৩০৩ দিন)। তিনিও দলিত চামার জাতির।

দ্বিতীয়ত, জিতনরামের জাতি মুসহর, মুষাহার (মুষা-আহার) নয়। মুস্ (< মূষিক) অর্থাৎ ইঁদুর, হর অর্থাৎ হরণ করা। মুসহর জাতির লোকরা ফসলের খেতে ইঁদুরের গর্তে জমানো ফসল খুঁড়ে বের করে অর্থাৎ ইঁদুরের খাদ্য হরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অবশ্যই তাঁরা মূষিক আহার করেন, কিন্তু সে তো অন্য জাতির লোকরাও করে থাকেন। এখানে ‘হর’ কথাটা তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE