Advertisement
০২ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সিএজি কেন

কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) নামক প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিস্তর খ্যাতি অর্জন করিয়াছে। সেই খ্যাতির একটি অংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সংবাদমাধ্যমের অত্যুৎসাহের ফল, কিন্তু সেই প্রশ্ন আপাতত মুলতবি থাকুক। এক্ষণে জিজ্ঞাস্য, কোনও বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার হিসাব পরীক্ষা কি এই প্রতিষ্ঠানের আদি কর্তব্যতালিকার অন্তর্গত?

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২২
Share: Save:

কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) নামক প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিস্তর খ্যাতি অর্জন করিয়াছে। সেই খ্যাতির একটি অংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সংবাদমাধ্যমের অত্যুৎসাহের ফল, কিন্তু সেই প্রশ্ন আপাতত মুলতবি থাকুক। এক্ষণে জিজ্ঞাস্য, কোনও বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার হিসাব পরীক্ষা কি এই প্রতিষ্ঠানের আদি কর্তব্যতালিকার অন্তর্গত? সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়াছে, যে টেলিকমিউনিকেশন সংস্থাগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত আয় বণ্টনের চুক্তিতে আবদ্ধ, সিএজি তাহাদের হিসাব পরীক্ষা করিতে পারিবে। টেলিকমিউনিকেশন ক্ষেত্র লইয়া দুর্নীতির যে কুনাট্য সাম্প্রতিক কালে রচিত হইয়াছে, তাহাতে সংশয় হইতেই পারে যে হয়তো দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করিয়াই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী নিজেদের পকেট ভরিতেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়টিকে এই অবিশ্বাসের প্রেক্ষিতে দেখাই শ্রেয়। বোঝা যায়, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি স্বার্থগোষ্ঠীর পারস্পরিক পৃষ্ঠ কণ্ডূয়ন কী বিষবাষ্প সৃষ্টি করিয়াছে। কিন্তু, আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন, সত্যই কি সিএজি-কে এই ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার দেওয়া ভিন্ন আর কোনও উপায় নাই? আর কোনও ভাবে কি দেশের আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নহে?

সিএজি এই হিসাব পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নহে। প্রথম কথা, বেসরকারি সংস্থার উপর সরকারি নজরদারি চাপাইয়া দেওয়ার এই দৃষ্টান্ত ভারতের বিনিয়োগ পরিবেশের ক্ষতি করিতে পারে। এমনিতেই ভারতে ব্যবসা করা বেশ কঠিন কাজ। তাহার উপর আরও একটি লালফিতার ফাঁস চাপিলে বহু সংস্থাই হয়তো ভারতে বিনিয়োগ করিতে চাহিবে না। বিশেষত, পরিকাঠামোর ন্যায় ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগই যখন সময়ের দাবি, তখন এই নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপনের ফল সুদূরপ্রসারী হইতে পারে। দ্বিতীয়ত, চরিত্রগত ভাবে সিএজি কি এই গোত্রের হিসাব পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত? তাহার কাজ সরকারি প্রকল্পগুলি ঘোষিত রূপরেখা বজায় রাখিয়া চলিতেছে কি না, তাহা দেখা। তৃতীয়ত, প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুসারে সিএজি-র হিসাব পরীক্ষা একপাক্ষিক। যাহার হিসাব পরীক্ষা করা হইতেছে, তাহার নিজের বক্তব্য পেশ করিবার কোনও অবকাশ এই প্রক্রিয়ায় নাই। পদ্ধতিটি সরকারি ক্ষেত্রে চলিতে পারে, কিন্তু বেসরকারি সংস্থার হিসাব পরীক্ষার কাজে তাহা নিতান্তই বেখাপ্পা নয় কি?

কোনও বেসরকারি সংস্থা যাহাতে সরকারকে না ঠকাইতে পারে, তাহাও নিশ্চিত করিতে হইবে বইকী। কিন্তু, সেই হিসাব পরীক্ষা করিবার জন্য বিভিন্ন অডিট সংস্থা আছে। সরকারের তালিকাভুক্ত সংস্থাকে দিয়া হিসাব পরীক্ষা করানোই নিয়ম। যদি দেখা যায়, কোনও হিসাব সংস্থা কারচুপি করিতেছে, তাহাদের বিরুদ্ধে অতি কঠোর ব্যবস্থার নিদান আইনেই রহিয়াছে। প্রয়োজনে কঠোরতর আইন হউক। হিসাবে গোলমালের আশঙ্কা থাকিলে সিবিআই-এর ন্যায় তদন্তকারী সংস্থার হাতেও দায়িত্ব আরোপ করা যাইতে পারে। কিন্তু, তাহা কেবল গোলমালের আশঙ্কা থাকিলে তবেই। টেলিকমিউনিকেশন ক্ষেত্রের নজরদারি সংস্থার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হউক। যে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ উঠিলে অভিযোগকারীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা হউক এবং অভিযোগটিকে গুরুত্ব দেওয়া হউক। অনেক পথই আছে। একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণী কাঠামোটিও যথাযথ হওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE