Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

সুযোগ হইতে সাবধান

সাহসী ব্যক্তির প্রতি ভাগ্যদেবী সত্যই সদয় হন কি না, সে বিষয়ে তর্ক থাকিতে পারে, তবে ভাগ্যদেবী সদয় হইলে সাহসী হওয়া অবশ্যই সহজ হয়। নরেন্দ্র মোদী তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ মাসে যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিতে পারেন নাই বটে, তবে এখনও তাঁহার নিকট সাহসী সংস্কারের আশা করিবার কারণ আছে।

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

সাহসী ব্যক্তির প্রতি ভাগ্যদেবী সত্যই সদয় হন কি না, সে বিষয়ে তর্ক থাকিতে পারে, তবে ভাগ্যদেবী সদয় হইলে সাহসী হওয়া অবশ্যই সহজ হয়। নরেন্দ্র মোদী তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ মাসে যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিতে পারেন নাই বটে, তবে এখনও তাঁহার নিকট সাহসী সংস্কারের আশা করিবার কারণ আছে। এবং, অন্তত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি ভাগ্যলক্ষ্মীর প্রাথমিক আশীর্বাদ পাইয়াছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়মের দাম কমিয়াছে। বস্তুত, কাকতালীয় ন্যায়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ গড়িয়া ঠিক এই পাঁচ মাসেই— প্রায় সিকিভাগ— কমিয়াছে। প্রধানমন্ত্রী এই সুযোগ হাতছাড়া করেন নাই, তিনি ডিজেলের ভর্তুকি তুলিয়া দিয়া তাহার দামকে বাজারের হাতে ছাড়িয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন। বিশ্ব বাজারে পেট্রোলিয়মের দাম বেশি থাকিলে ভর্তুকি রদ করা কঠিন হয়, কারণ তাহাতে দেশে ডিজেলের দাম চড়িয়া যায়, অর্থনীতিতে তাহার প্রতিকূল প্রভাব পড়ে, শাসকের জনপ্রিয়তায় আরও বেশি। তাহা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকার জ্বালানির বাজারে ক্রমশ বিনিয়ন্ত্রণ আনিতেছিল। নরেন্দ্র মোদীর সৌভাগ্য, তিনি আন্তর্জাতিক বাজারের আশীর্বাদে ধন্য হইয়া ডিজেলের বিনিয়ন্ত্রণ পর্বটি সম্পূর্ণ করিয়াছেন এবং, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে, এই ‘সংস্কার’-এর ষোলো আনা কৃতিত্ব আত্মসাৎ করিয়াছেন। খুব বেশি সাহসও ইহার জন্য খরচ করিতে হয় নাই। মনমোহন সিংহ হয়তো ভাবিতেছেন, যাহার যেমন কপাল!

প্রশ্ন হইল, পেট্রোলিয়মের আকস্মিক মূল্যহ্রাসের ফলে অন্য অনেক দেশের মতোই ভারতের সামনে যে সুযোগ আসিয়াছে, ভারত তাহার সদ্ব্যবহার করিতে পারিবে, না এই পড়িয়া পাওয়া চোদ্দো আনা বাজে খরচ করিয়া ফেলিবে? সুযোগটি মূল্যবান। ভারতে আমদানির মোট খরচের তিন ভাগের এক ভাগ তেলের দাম মিটাইতে চলিয়া যায়, সুতরাং এই মূল্যহ্রাসের প্রত্যক্ষ সুফলই বিরাট। কিন্তু পরোক্ষ লাভও কোনও অংশে কম নহে। কৃষি, পরিবহণ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প— জ্বালানির দাম কমিলে কার্যত সমস্ত ক্ষেত্রে সাশ্রয় হয়। পাইকারি মূল্য সূচক ক্রমাগত দ্রুত বাড়িয়া চলিবার পরে গত কয়েক মাসে প্রশমিত হইয়াছে, তাহার পিছনে জ্বালানির বাজারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত যদি তেলের দাম কম থাকে, মূল্যবৃদ্ধির হারও সংযত থাকিবার সম্ভাবনা আছে। সে ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাইবার বহুপ্রতীক্ষিত পর্বও শুরু করিতে পারিবে। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী সে জন্য সওয়াল করিয়াছেন।

পেট্রোলিয়মের এই মূল্যহ্রাস কত দিন বহাল থাকিবে, তাহা লইয়া সংশয় আছে। ইহার পিছনে দুইটি ঘটনার প্রধান ভূমিকা। এক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব এবং সম্প্রতি লিবিয়া হইতে তেলের জোগান বাড়িয়াছে। দুই, প্রধানত ইউরোপের বাজারে মন্দার ফলে তেলের চাহিদা কম। জোগান অদূর ভবিষ্যতে কমিতে পারে, বিশেষত পশ্চিম এশিয়ায় রাজনৈতিক অশান্তির পরিস্থিতি সর্বদাই অনিশ্চিত। চাহিদায় বড় রকমের স্ফীতির সম্ভাবনা কম, কিন্তু মন্দার কারণে মূল্যহ্রাস কখনওই অবিমিশ্র আনন্দের কারণ হইতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে ভারতের কর্তব্য, পেট্রোলিয়মের বাজারে অনুকূল পরিস্থিতিকে সাময়িক সুযোগ হিসাবেই গ্রহণ করা এবং তাহার সদ্ব্যবহার করা। সদ্ব্যবহারের যথার্থ উপায়: সরকারি ব্যয়সংকোচ, পরিকাঠামোর উন্নয়নে সেই ব্যয়ের ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির আয়োজন। জ্বালানির দাম কম থাকিলে এই কাজগুলি সম্পন্ন করা তুলনায় সহজ। আবার, বিপরীত দিকে, জ্বালানির দামে ছাড় মিলিবার ফলে সরকারের উপর ব্যয়সংকোচের চাপ কমিয়া যাইতে পারে, তাহার ফলে অপচয়ের প্রবণতা বাড়িতে পারে। সুতরাং নরেন্দ্র মোদীকে বিশেষ ভাবে সাবধান থাকিতে হইবে। বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হইবে। সাহস পরের কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE