Advertisement
২১ মে ২০২৪

স্বাধীনতা ৭০

স্বাধীনতা মানে দেশের কী চাই, কী পেলে দেশের ভাল, তা বুঝে সিদ্ধান্ত করার ক্ষমতা। জাতীয় আয় বাড়লেই কি দেশের ভাল? স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রার মান, কোন মাপকাঠিতে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ভারত? সাত দশক আগের তুলনায় ধনীরা আজ যতখানি ভাল আছেন, দরিদ্ররাও কি ততটাই? না কি, আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে অসাম্যও বেড়েছে? ভারতের উন্নতি মাপার ছ’টি তাৎপর্যপূর্ণ সূচক।স্বাধীনতা মানে দেশের কী চাই, কী পেলে দেশের ভাল, তা বুঝে সিদ্ধান্ত করার ক্ষমতা। জাতীয় আয় বাড়লেই কি দেশের ভাল? স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রার মান, কোন মাপকাঠিতে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ভারত? সাত দশক আগের তুলনায় ধনীরা আজ যতখানি ভাল আছেন, দরিদ্ররাও কি ততটাই? না কি, আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে অসাম্যও বেড়েছে? ভারতের উন্নতি মাপার ছ’টি তাৎপর্যপূর্ণ সূচক।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫০
Share: Save:

গো টা দুনিয়ায় গড়ে ব্যক্তির স্বাস্থ্য-ব্যয়ের ৮০ শতাংশই রাষ্ট্রের খরচ। ভারতে ছবিটা প্রায় উল্টো। দরিদ্রতম মানুষটির এই ব্যয় সামলানোর সামর্থ্য নেই, তাই স্বাস্থ্য পরিষেবার অনেকখানিই থেকে যায় তাঁর নাগালের বাইরে। ভারতে স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের ৪.৬৯ শতাংশ খরচ হয়। গোটা দুনিয়ায় এই গড় ৯.৯৭ শতাংশ। স্বাস্থ্যক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ সরকারের অধিকারে থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে ঢের তর্ক হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে মতও প্রচুর। কিন্তু, যত ক্ষণ না উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান, তত ক্ষণ গরিব মানুষও সেই হাসপাতালে যথার্থ পরিষেবা পান না, এই সত্যটি ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট।

আয়ের অসাম্য বাড়ছে। ১৯৯১ সালের সংস্কারের পর জাতীয় আয়ে দরিদ্রতম দশ শতাংশ মানুষের ভাগ কমেছে, অর্থাৎ সংস্কারের আর্থিক সুফল বেশি পেয়েছেন সম্পন্নরাই। তবে, ১৯৯২ সাল থেকে ভারতের জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার বছরে চার শতাংশ থেকে দশ শতাংশের সীমায় থেকেছে, গোটা দুনিয়ায় এক চিন ছাড়া অন্য কোনও দেশে যা হয়নি। অর্থাৎ, বৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু, ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও চিনের মাথাপিছু জাতীয় আয় ভারতের সঙ্গে মোটামুটি তুলনীয় ছিল, এখন তা যথাক্রমে ভারতের প্রায় ছয় ও আড়াই গুণ।

১৯৪৭ সালের পর গত সাত দশকে ভারতে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ২০০ গুণ— ১৩৬২ মেগাওয়াট থেকে ২,৭১,৭২২ মেগাওয়াট। সমাজতন্ত্র মানে সোভিয়েত এবং বিদ্যুৎ, এটা রঙ্গের কথা বটে, কিন্তু গ্রামে-গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়া সত্যই উন্নয়নের পথে একটা বড় ধাপ। আলো থাকায় শিক্ষার প্রসার বাড়ে, স্বাস্থ্য পরিচর্যার উন্নতি হয়, সেচব্যবস্থার উন্নতি হয়, টিভি-ইন্টারনেটের সংযোগ বাড়ে। গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছলে মানব উন্নয়নে প্রভাব বহুমুখী, বহুগুণ। দেশের বেশির ভাগ গ্রামেই বিদ্যুৎ পৌঁছেছে বটে, কিন্তু দিনে কত ক্ষণ বিদ্যুৎ থাকছে, ভোল্টেজের ওঠাপড়া কতখানি? উত্তর আশাপ্রদ নয়।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য বলছে, ভারতের গ্রামাঞ্চলে প্রতি ১০০০ দরিদ্র পরিবারের ৭৬১টিতেই জ্বালানি হল কাঠকুটো। মাত্র ১৫টি পরিবারে এলপিজি আসে। দরিদ্র পরিবার মানে, আয়ের নিরিখে দেশের সর্বনিম্ন ১০-২০% শ্রেণিতে থাকা মানুষ। ধনী মানে ৯০-১০০% শ্রেণির মানুষ। কাঠকুটোয় রান্না মানে জ্বালানি কুড়োতে অনেক সময় খরচ, ফলে মহিলাদের অন্য আর্থিক কাজ করার উপায় থাকে না। কাঠকুটোয় রান্না থেকে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, এমনকী ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। রোগের কারণে কর্মদক্ষতা কমে, কর্মদিবস নষ্ট হয়, পরিবারের আয়ের পরিমাণ কমে। ক্ষতি শিশুদেরও। এই অভাব স্কুলে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, ফলে ভবিষ্যতের রোজগারের সম্ভাবনাও কমে। এটাই কাঠকুটোর দুষ্টচক্র।

আজকের নবজাতকটি ৬৫ বছর বয়সে পৌঁছবে, তার গড় সম্ভাব্যতা তার জীবন-মানের একটা গুরুত্বপূর্ণ সূচক। নাগরিকের প্রত্যাশিত আয়ু নির্ভর করে শুধু দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্র নয়, আয়, সক্ষমতা, পরিবেশ, সব কিছুর উপরেই। ১৯৪৭ সালে এ ক্ষেত্রে ভারতের খুব কাছে থাকা চিন এখন বেশ কিছুটা ওপরে। দক্ষিণ কোরিয়াও। তবে, ভারতও অনেকখানি এগিয়েছে।

শুধু গবেষণাপত্রের সংখ্যায় নয়, গুণগত মানের দিক থেকেও ভারত বহু পিছিয়ে। অন্য গবেষকদের কাজে প্রভাব ফেলতেও পিছিয়ে ভারতীয়রা। ভারতে একটি পেটেন্টের আবেদনপত্র জমা পড়লে চিনে পড়ে ৩১টি! অর্থাৎ, ভারতের গবেষণাক্ষেত্র এখনও আন্তর্জাতিক মানের অনেক পিছনে। শুধু উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, ভারত পিছিয়ে আছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষাতেও। প্রাথমিকে ভারতে শিক্ষক পিছু ছাত্রের সংখ্যা ৩২-এর বেশি, চিনে ১৭।
মাধ্যমিক স্তরে অনুপাতগুলি যথাক্রমে ৩১ ও ১৫।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Independence Day Post Edit 70th Independence Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE