Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Racism

স্বাগত পরিবর্তন

কালো ও সাদার প্রভেদের শিকড় গভীরপ্রোথিত— কালো টাকা, কালো বাজার, কালা দিবস, এই সব শব্দ ব্যবহারেই কালোর প্রতি বিতৃষ্ণার সংস্কৃতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালো মানুষের অধিকার লইয়া গণআন্দোলনের ঢেউ অবশেষে ভারতেও পৌঁছাইল— ব্র্যান্ড ও বিপণনকৌশলের হাত ধরিয়া। বহুজাতিক সংস্থার বহুলবিক্রীত ক্রিমের নাম হইতে ‘ফেয়ার’ শব্দটি বিদায় লইবে, ঘোষণা হইয়াছে। বিবাহসংযোগ সম্পর্কিত কয়েকটি পোর্টালে পাত্র বা পাত্রীর বিবরণ অংশে গাত্রবর্ণ সংক্রান্ত কোনও তথ্য আর গৃহীত বা প্রকাশিত হইবে না। রূপচর্চার সামগ্রীর বিজ্ঞাপনে দ্রব্যের গুণমান বুঝাইতে নারীর ত্বক অনুজ্জ্বল কৃষ্ণবর্ণ হইতে উজ্জ্বল শুভ্রবর্ণে পরিবর্তিত হইল, এই দৃশ্যকল্পে যবনিকাপাতের সম্ভাবনাও শোনা যাইতেছে।

বিপণন মানুষের মনোজগতের দর্পণ। বিপণন সংস্থাগুলি মনের প্রকট ও প্রছন্ন বাসনা বা অভিপ্রায়গুলি লইয়া গবেষণা করিতে থাকে, এবং সেই সূত্রগুলি ধরিয়া ব্র্যান্ডের নামকরণ বা বিজ্ঞাপনের রূপরেখা নির্ধারিত হয়। পাদুকার বিজ্ঞাপনেও নারীর মোহময়তা, আমের নির্যাস বিক্রয়েও কামসূত্রের ব্যঞ্জনা তাহারই পরিণতি। নারীর এই পণ্যায়ন, বা কৃষ্ণাঙ্গীর প্রতি এই অবমাননা যে অনৈতিক, তাহা লইয়া প্রশ্ন থাকিতে পারে না। তবে বাজার নৈতিকতার মানদণ্ড অনুসারে চলে না, তাহার চালিকাশক্তি চাহিদা। সমাজ ফর্সা হইবার মলম চাহিয়াছে, বিবাহের বাজারে কন্যার গাত্রবর্ণের বিশেষ গুরুত্ব আছে, সেই কারণেই বাজার নৈতিকতার তোয়াক্কা না করিয়া এই পণ্য বা পরিষেবা জোগাইয়াছে। আমেরিকায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন হইয়াছে বলিয়াই যে সমাজের চাহিদাও পাল্টাইয়া গেল, তাহা নহে। কিন্তু, সেই আন্দোলন, এবং তাহার অনুসারী প্রতিবাদগুলি বাজারকে নৈতিকতার পথে ফিরিতে বাধ্য করিল, এই কথাটি বিশেষ রূপে স্মরণীয়। এখানেই সমাজের দায়িত্ব— বাজারের উপর নজর রাখা, তাহাকে নৈতিকতার গণ্ডিতে থাকিতে বাধ্য করা। সংস্থাগুলির এই সিদ্ধান্ত আরও একটি আশার সঞ্চার করে— তাহাদের সামাজিক গবেষণায় হয়তো ক্রেতার মনোবাসনার অভিমুখের পরিবর্তনের আভাস মিলিতেছে। সমাজের একটি অংশ হয়তো অবশেষে ত্বকের রঙের মোহ-অর্গল ছাড়িয়া উন্মুক্ত আকাশের তলে দাঁড়াইতে চাহিতেছে।

কালো ও সাদার প্রভেদের শিকড় গভীরপ্রোথিত— কালো টাকা, কালো বাজার, কালা দিবস, এই সব শব্দ ব্যবহারেই কালোর প্রতি বিতৃষ্ণার সংস্কৃতি। সমাজেও এই বর্ণব্যাধির শিকড় গভীর, তাহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হউক, বা ভারতে। কোথাও তাহা কালো মানুষের প্রতি বিরাগের দীর্ঘ ইতিবৃত্ত, কোথাও দলিতের প্রতি বঞ্চনার তামামি। করোনার এই মহাসঙ্কটেও বিভিন্ন শিবিরে নিম্নবর্গের মানুষের হস্ত হইতে কোনও রূপ খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করিবার জেহাদের খবর আসিতেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রতি বিদ্বেষ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িতেছে। এই বিভেদরেখা ধরিয়াই ভারতীয় রাজনীতির স্রোত বহিয়া চলে। অন্তত বিপণনের হাত ধরিয়া যদি বিপরীত মুখে চলিবার সম্ভাবনার সঞ্চার হয়, তাহা মন্দ কী? জনমানসে বিজ্ঞাপন ও বিবিধ ভোগ্যপণ্যের ব্র্যান্ডিং-এর প্রভাব কতখানি, সকলে জানেন। বিজ্ঞাপন মানুষের চাহিদা সর্বতো ভাবেই নির্মাণ করে। এই পরিস্থিতিতে বিপণনের দুনিয়া যদি নারীর গাত্রবর্ণকে অতিক্রম করিতে পারে, শুধু শরীরকেই মানুষ ভাবিবার কু-অভ্যাসটি ত্যাগ করিতে পারে— সমাজও পাল্টাইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Racism Fairness Cream
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE