Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Editorial News

এই অশনি সঙ্কেতের অর্থ শাসক বুঝতে পারছেন তো?

তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের উপর নিগ্রহ রুখতে ১৯৮৯ সালে ওই আইন তৈরি করেছিল তৎকালীন রাজীব গাঁধী সরকার।

ইলাহাবাদে দলিত সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।

ইলাহাবাদে দলিত সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৬
Share: Save:

এই উপসর্গ বা এই সঙ্কেতগুলো কিন্তু গুরুতর এক সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দলিত সংগঠনগুলির বিক্ষোভ ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় অগ্ন্যুত্পাত ঘটাল। অন্তত পাঁচটি রাজ্য উত্তাল হল। একাধিক প্রাণহানির খবরও এল। দলিত শ্রেণি ঠিক কতটা ক্ষোভের আঁচে ফুটন্ত, দৃশ্যপটই তার সবচেয়ে বড় কথক। রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই এ এক অশনি সঙ্কেত। কিন্তু রাষ্ট্র যদি ভাবে, ক্ষোভটা শুধুমাত্র দলিত শ্রেণির মধ্যে পুঞ্জীভূত হচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে, সঙ্কেতটার পাঠোদ্ধারে বেশ খানিকটা গলদ রয়ে গেল।

ফেলে আসা বছরটার শেষ প্রান্তে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশ— গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন। রাষ্ট্রের এবং ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণের ভরকেন্দ্র আপাতত গুজরাত। স্বাভাবিক কারণেই শাসকের জন্য মর্যাদা রক্ষার লড়াই ছিল গুজরাতের ভোট। সে ভোটযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত শাসকেরই জয় হয়েছে। কিন্তু সেই জয়ে শাসকের হাসি চওড়া হয়নি, ম্লান হয়েছে বরং। গুজরাতের গ্রামীণ এলাকার এক বিস্তীর্ণ অংশ শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে, সে ক্ষোভের প্রতিফলন ভোটযন্ত্রেও দেখা গিয়েছে।

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাগরিকের ক্ষোভের আর এক সুবৃহত্ প্রকাশ দেখা গিয়েছে মহারাষ্ট্রে। বিরাট কৃষক মিছিল নাড়িয়ে দিয়েছে গ‌োটা মহারাষ্ট্রকে, গোটা দেশকেও। ভৌগোলিক হিসেব বলছে, নাসিক থেকে মুম্বই পর্যন্ত হেঁটেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু আসলে সে মিছিল পদচিহ্ন ছেড়ে গিয়েছে সুবিশাল ভারতভূমির এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্ত পর্যন্ত।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গ্রামীণ গুজরাতের ক্ষোভ বা মহারাষ্ট্রের কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে দেশজুড়ে দলিত সংগঠনগুলির ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ হয়তো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু যোগসূত্র দৃঢ় ভাবেই রয়েছে। এই বিক্ষোভগুলো আসলে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। একটা বঞ্চনার বোধ বা ধারণা চারিয়ে যাচ্ছে সেই সব ক’টি শ্রেণির মধ্যে, যাঁরা সুবিধাভোগী শ্রেণি হিসাবে পরিচিত নয়। গ্রামীণ ভারত, কৃষিজীবী ভারত, দলিত ভারত, অনগ্রসর ভারত— একযোগে যেন বঞ্চিত, অধিকারহৃত, অরক্ষিত বোধ করতে শুরু করেছে প্রত্যেকে। নাগরিকদের এক বিরাট অংশ নিজেকে এতখানি অনিরাপদ মনে করলে তা রাষ্ট্রের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। কারণ রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা টাল না খেলে নাগরিক এত অরক্ষিত বোধ করেন না।

আদালতের একটি রায় দলিত বিক্ষোভের মূল কারণ হয়ে উঠেছে। তফসিলি জাতি ও উপজাতির উপরে অত্যাচার রোধ করার জন্য যে আইন রয়েছে, সে আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে আদালত। দলিত সংগঠনগুলি তার প্রতিবাদেই দেশজোড়া বিক্ষোভে সামিল হল। এই ভারত বন‌্‌ধের প্রেক্ষাপটে আদালতের রায় থাকলেও লক্ষ্যবিন্দুতে কিন্তু সরকার। দলিতের অধিকার খর্ব হচ্ছে, দলিতের স্বার্থ অরক্ষিত হয়ে পড়ছে, কিন্তু সরকার তার প্রতিকার করতে পারছে না— এমন এক ধারণা চারিয়ে যাচ্ছে অনুচ্চারেই।

আরও পড়ুন: দলিত মিছিলে গুলি, নিহত ৯

আরও পড়ুন: মুখ ফেরালেন দলিতরাও, চাপে বিজেপি

কৃষকের উন্নতিকল্পে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। শস্যবিমা ঘোষিত হয়েছে। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক হিসাবে ফসল ফলানোর খরচের অন্তত দেড়গুণ অর্থ কৃষককে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কৃষক এখনও সে ভাবে এ সব সরকারি ঘোষণার সুফল পাননি। সবই কি তাহলে কথার কথা? কাজে কি কিছুই হবে না? প্রশ্ন জেগেছে কৃষকের মনে। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ক্ষোভের লক্ষ্যবিন্দুতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

গ্রামীণ জনসংখ্যার জন্যও একগুচ্ছ ফুল ছিল মোদীর ‘অচ্ছে দিন’ নামক স্তবকের। সরকারের বয়স যখন প্রায় চার বছর হতে চলল, তখন গ্রামীণ ভারত উপলব্ধি করছে, পুষ্পস্তবকের ফুল শুধুই আনুষ্ঠানিক শোভাবর্ধনের বস্তু। সে ফুল থেকে সৌরভ ছড়ায় না, সে ফুল নিষিক্ত হয় না, ফল ফলে না। স্বাভাবিক কারণেই গ্রামীণ ভারতের ক্ষোভ হয়েছে। ক্ষোভের লক্ষ্যবিন্দুতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

সাবধান হওয়ার জন্য আর খুব বেশি সময় কিন্তু নেই। এখনই সতর্ক না হলে শাসকের ভবিষ্যত্ টালমাটাল হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE