কর্নাটকের ভোট মিটিয়াছে। পেট্রোল-ডিজেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী হইয়াছে। কিন্তু, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের সদর দফতরে কর্তারা বুঝি টের পাইয়াছেন, কর্নাটক শেষ কথা নহে, অগ্নিপরীক্ষা ২০১৯-এ। তেলের দাম যদি লাগামছাড়া হয়, গণদেবতা সন্তুষ্ট হইবেন না। অতএব, অমিত শাহ জানাইয়া দিলেন, আর দুই তিন দিনের মধ্যেই তেলের দাম কমিবে। নাগরিক বলিবেন, দাম কমিবে ভাল কথা, আহ্লাদের কথা, কিন্তু সেই সংবাদ অমিত শাহ দিতেছেন কেন? অমিত শাহ কে? তিনি বিজেপি সরকারের আরাধ্য হইতে পারেন— দুর্জনে বলিয়া থাকে, তাঁহার আশীর্বাদ না লইয়া মন্ত্রীরা নাকি কলমের খাপ খোলেন না। তিনি বিজেপির প্রধান সেনাপতি হইতে পারেন, নরেন্দ্র মোদীর মুখ্য পারিষদও হইতে পারেন— কিন্তু সরকারি ভাবে তাঁহার পরিচয়টি কী? তিনি দেশের আর পাঁচ জন সাধারণ নাগরিকের তুল্য বই আর কিছুই নহেন। সরকারে, অথবা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাঁহার কোনও পরিচিতি নাই। তাহা হইলে, দেশবাসীকে তেলের দাম বিষয়ে আশ্বাসটি তিনি কোন এক্তিয়ারে দেন? নাগরিক সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে, সরকারের নিকট আবেদন জানাইতে পারে, দাবিও করিতে পারে। কিন্তু, সরকার কী করিবে, সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিবার এক্তিয়ার জনসাধারণের নাই। অতএব, অমিত শাহেরও নাই। তিনি একটি বিপজ্জনক অনধিকার চর্চা করিতেছেন। দল এবং সরকারের মধ্যে ফারাক না রাখিতে পারাই সেই বিপদ। পশ্চিমবঙ্গ তাহা অতীতেও জানিয়াছে, এখনও জানিতেছে।
কোনটি দলের পরিসর, আর কোনটি সরকারের, রাজ্যে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিআইএম তাহা বিস্মৃত হইয়াছিল। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট হইতেই সরকার পরিচালিত হইত। প্রমোদ দাশগুপ্ত হইতে অনিল বিশ্বাস, প্রথাটি এমনই দীর্ঘ যে দল আর সরকার যে দুইটি পৃথক অস্তিত্ব, এই কথাটিই রাজ্যবাসী একদা ভুলিতে বসিয়াছিলেন। দিল্লিতে বিজেপি সেই পথেই চলিতেছে। অমিত শাহ দলে সর্বশক্তিমান হইতেই পারেন, কিন্তু তিনি সরকারের অংশ নহেন। তাঁহার দল এবং কেন্দ্রীয় সরকার অদ্বৈত নহে। বস্তুত, ভারতীয় সংবিধানে অতি নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র ভিন্ন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বেরই উল্লেখ নাই। রাজনৈতিক দলগুলির সর্বগ্রাসী উপস্থিতির সম্মুখে এই কথাটি অলীক ঠেকিতে পারে, কিন্তু সাংবিধানিক বিচারে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রধান হিসাবে অমিত শাহ তিলমাত্র বাড়তি গুরুত্বও পান না। দল তাঁহার অঙ্গুলিহেলনে চলিতে পারে, কিন্তু সেই অধিকারটি তাঁহাকে সরকারের সমতুল করিয়া তোলে না। সরকার তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করিবে কি না, এই কথাটি বলিবার কোনও অধিকার, অতএব, তাঁহার থাকিতে পারে না।
তাঁহারা সনিয়া গাঁধীর উদাহরণটি হইতেও শিখিতে পারেন। ইউপিএ আমলে সনিয়াই সরকার পরিচালনা করেন, তৎকালীন অশোক রোডের অফিস হইতে বিজেপির ছোটব়ড় নেতারা প্রাত্যহিক এই অভিযোগ করিতেন। অতএব, এখন তাঁহারা প্রশ্ন করিতে পারেন, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া যাহা পারিতেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তাহা পারিবেন না কেন? সত্য হইল, সনিয়ার অধিকার ছিল, কারণ প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় ছিল। তিনি জাতীয় উপদেষ্টা পর্ষদের সভানেত্রী ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি সরকার দ্বারা স্বীকৃত ছিল। তাহার ঘোষিত কাজই ছিল সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। সনিয়া সেই অধিকারেই কথা বলিতেন। অমিত শাহকে তাঁহার দল তেমন কোনও স্বীকৃতি দেয় নাই। তবে, এখনও সময় আছে। নীতি আয়োগের ন্যায় ধর্ম বা জিরাফ, কিছুতেই না থাকা কোনও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে অমিত শাহকে বসাইয়া দিলেই হয়। কিন্তু, যত দিন না তাহা হইতেছে, সরকারের সিদ্ধান্ত শাহ ঘোষণা না করিলেই মঙ্গল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy