Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

নামমাত্র

যে কাজ এত দিনে সম্পূর্ণ হইবার কথা, তাহা করিতে সরকার যে ব্যর্থ হইয়াছে, সেই সত্যটিকে ভুলাইতেই কি এত সমারোহ? ২০০৫ সালে সরকার দেশের সকল গৃহস্থালিতে বিদ্যুৎ পৌঁছাইবার কাজ শেষ করিবার লক্ষ্য ধার্য করিয়াছিল ২০১০ সাল।

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখিয়া সুকুমার রায় চমৎকৃত হইতেন। তাঁহার চরিত্রেরা সকাল-বিকাল নাম পালটাইত। সকালে রামতাড়ু, বিকালে আলু-নারকোল। ঠিক তেমনই, ২০০৫ সালে যে প্রকল্পের নাম ছিল ‘রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুতীকরণ যোজনা,’ ২০১৫ সালে তাহা হইল ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ জ্যোতি যোজনা’, আবার ২০১৭ সালে ‘সৌভাগ্য।’ সরকারি কর্তারা বলিবেন, নূতন প্রকল্পটির লক্ষ্য গৃহস্থালি, পূর্বেরটি লক্ষ্য করিয়াছিল গ্রাম। তাঁহারা ভুলিয়াছেন, রাজীব গাঁধীর নামাঙ্কিত প্রকল্পটিতে দুইটি লক্ষ্যই ছিল। যে কাজ এত দিনে সম্পূর্ণ হইবার কথা, তাহা করিতে সরকার যে ব্যর্থ হইয়াছে, সেই সত্যটিকে ভুলাইতেই কি এত সমারোহ? ২০০৫ সালে সরকার দেশের সকল গৃহস্থালিতে বিদ্যুৎ পৌঁছাইবার কাজ শেষ করিবার লক্ষ্য ধার্য করিয়াছিল ২০১০ সাল। ২০১৭ সালে ফের সেই কাজেরই লক্ষ্য ধার্য হইল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর। অর্থাৎ রামতাড়ু যাহা পারে নাই, আলু-নারকোল তাহা পারিবে। না পারিলেও চিন্তা নাই, হিজিবিজবিজ আছে। অবশ্য পূর্বের তুলনায় নূতন যোজনার কিছু পার্থক্যও রহিয়াছে। রাজীব গাঁধীর নামাঙ্কিত যোজনার ৯০ শতাংশ অর্থ দিত কেন্দ্র, ‘সৌভাগ্য’ যোজনায় কেন্দ্র দিবে ৬০ শতাংশ। রাজ্যগুলির মন্দভাগ্য।

বৈদ্যুতীকরণ যে দরিদ্র পরিবারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রোজগারে উন্নতি আনিয়া উন্নয়নে সহায়তা করে, তাহা প্রতিষ্ঠিত তথ্য। আলোর জন্য কেরোসিনের ব্যবহার কমিলে দূষণও কমিবে। অতএব বরাদ্দের অঙ্ক যেমনই হউক, খরচের যৌক্তিকতা প্রশ্নাতীত। প্রশ্ন অন্যত্র। ২০১২ সালে গ্রামীণ বৈদ্যুতীকরণ প্রকল্পটির মূল্যায়ন করিয়া দেখা গিয়াছিল, বাড়িতে বিদ্যুৎ আসিলেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ-ছাঁটাই এবং অপ্রতুল ভোল্টেজের জন্য দরিদ্র পরিবারগুলির রোজগারে বা জীবনযাত্রার মানে প্রত্যাশিত উন্নয়ন আসে নাই। অর্থাৎ দরিদ্র গৃহস্থালিতে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎসংযোগ দিয়াও লাভ হয় নাই, ভরতুকির অর্থ কার্যত নষ্ট হইয়াছে। ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্পেও বিদ্যুতের মান বা সরবরাহ লইয়া কোনও প্রতিশ্রুতি নাই, কেবল সংযোগের সংখ্যা বৃদ্ধিই লক্ষ্য। অতীতের ভুল হইতে শিক্ষাগ্রহণের প্রত্যাশা দুরাশা।

বিদ্যুৎসংযোগ উন্নয়নের একটি সূচক, উন্নয়নের হিসাব নহে। নেতারা বিদ্যুৎসংযুক্ত গৃহস্থালির সংখ্যাবৃদ্ধি প্রচার করিতেই পারেন, কিন্তু পরিসংখ্যানে চিঁড়া ভিজিবে না। প্রশ্ন উঠিবে, নাগরিক পরিষেবার যে কাজগুলি সমাধা হইবার কথা, তাহার জন্য কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নূতন নূতন প্রকল্পের ঘোষণার প্রয়োজন কী? যাহা ছিল ‘গ্রামীণ জীবিকা মিশন,’ মোদী তাহা করিলেন ‘দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা’, আবার এ রাজ্যে তাহাই ‘আনন্দধারা।’ যাহা ছিল ‘নির্মল ভারত অভিযান,’ তাহাকে মোদী করিলেন ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান,’ রাজ্যে তাহা ‘নির্মল বাংলা।’ কংগ্রেস আমলের ‘স্বাবলম্বন যোজনা’ এখন ‘অটল পেনশন যোজনা।’ এমন নজির কম নাই। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, মোদী মোট তেইশটি প্রকল্পের নাম বদলাইয়াছেন। সুকুমার রায়ের পাঠক বোধ করি কিঞ্চিৎ শঙ্কিত। ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’-র নাম বদলাইয়া ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ হইয়াছে। ইহার পর কি আবাসন প্রকল্পের নাম ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ রাখা হইবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

development Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE