মাসুদ আাজহারকে নিষিদ্ধকরণের প্রক্রিয়া ভেস্তে দিচ্ছে চিন।
বৃহৎ মানেই মহৎ নয়। এ সত্য অনেকেরই জানা। নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু চিন প্রমাণ দিল আবার।
বৃহৎ রাষ্ট্র চিন। আকারে বৃহৎ, জনসংখ্যায় বৃহৎ, অর্থনৈতিক শক্তিতে বৃহৎ, সামরিক শক্তিতে বৃহৎ। ভারত সাম্প্রতিক কালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বড় শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু চিন অনেকগুলো দশক আগেই সে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে, তার সুবাদে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদও পেয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পেলে এক বৃহত্তর এবং মহত্তর দায়িত্বশীলতার অংশভাকও যে হতে হয়, তা কিন্তু চিন উপলব্ধি করেনি আজও। গোটা পৃথিবী যখন সমবেত কণ্ঠে বলছে, মানবজাতির সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ আজ সন্ত্রাস, তখন চিন সন্ত্রাস-বিরোধী আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে রুখে দিচ্ছে!
মৌলানা মাসুদ আজহার। কুখ্যাত এক নাম, সন্ত্রাসের সমার্থক, আতঙ্কের কারবারি। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান তিনি, পঠানকোট-সহ ভারতে সংঘটিত একাধিক জঙ্গি হামলার মূল চক্রী তিনি। কারাগার থেকে তাঁকে মুক্ত করতে ১৯৯৯ সালে ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। এ হেন সন্ত্রাসবাদীকে নিষিদ্ধ করতে বার বার রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হচ্ছে ভারত। বার বার সমর্থন জানাচ্ছে আমেরিকা। সমর্থন জানাচ্ছে ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো নিরাপত্তা পরিষদের অন্য স্থায়ী সদস্যরাও। কিন্তু বার বার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে মাসুদ আাজহারকে নিষিদ্ধকরণের প্রক্রিয়া ভেস্তে দিচ্ছে চিন। ঋতু-নির্বিশেষ মিত্র পাকিস্তানকে খুশি রাখতে অতীতে চিন একাধিক বার জইশ-প্রধানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রয়াস আটকে দিয়েছে। সাম্প্রতিকতম প্রয়াসটিও তারা আটকে দিল।
মাসুদ আজহারের সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষিত। সেই সংগঠনের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও মাসুদ আজহারকে কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না, সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নিশ্চয়ই বেজিং-এর কাছে নেই। কিন্তু ভেটো প্রয়োগ করার জন্য কোনও প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই। অতএব, অবাধে ভেটোর অপপ্রয়োগ চলছে।
বৃহৎ শক্তিকেও আন্তর্জাতিক সমীকরণ মথায় রেখে চলতে হয়, এ কথা সত্য। মিত্র পাকিস্তানকে খুশি রাখার দায় চিনের রয়েছে, সে কথাও না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু আজকের পৃথিবী যে সন্ধিক্ষণে উপনীত, সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কোনও দায়ই কি সন্ত্রাসকে রোখার দায়ের চেয়ে বড়?
আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রেখে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মৌখিক বার্তা চিন দিয়েই থাকে। কিন্তু বার বার মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসবাদীর রক্ষাকবচ হয়ে উঠে তারা প্রমাণ করে দেয়, সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা তাদের নেই।
চিনের এই ভেটো উপমহাদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ফেরানোর পথে খুব বড় অন্তরায় হয়ে থাকবে তো বটেই। চিনের এই ভেটো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দানা বাঁধতে থাকা আন্তর্জাতিক লড়াইটাকেও দুর্বল করবে।
মহৎ হওয়া সব বৃহতের পক্ষে সম্ভব নয় মানা গেল। কিন্তু বৃহৎ দায়িত্ব পেলে দায়িত্বশীল তো হতেই হয়। সেটুকু উপলব্ধিও যদি না থাকে চিনা নেতৃত্বের, তা হলে বিষয়টা চিনের পক্ষেও কম দুর্ভাগ্যজনক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy