রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা অন্য অনেক অর্থ খোঁজার চেষ্টা করবেন। অনেক তির্যক ব্যাখ্যার অবতারণা হয়তো হবে। কিন্তু কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরটাতে বৃহস্পতিবার রাজনীতি আর রাজধর্মের যে সহাবস্থান দেখা গেল, সংসদীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য তা অত্যন্ত ইতিবাচক একটি ছবি।
তৃণমূলের সরকারের সঙ্গে আরও কঠিন সঙ্ঘাতের বার্তা দিয়ে বাংলার রাজধানীতে আছড়ে পড়ল বিজেপির বিক্ষোভ। একই দিনে এবং প্রায় একই সময়ে দেশের রাজধানীতে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশাসনিক বিষয়ে আলোচনা হল, কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে রাজ্যের দাবিদাওয়া তুলে ধরা হল। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে তৈরি হল, তা নিয়ে কোনও সংশয় থাকার কথা নয়।
নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রী। রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই, জাতীয় রাজনীতির পরিসরেও মোদী এবং মমতার দল অত্যম্ত প্রকট ভাবে যুযুধান অবস্থানে। ২৫ মে, ২০১৭ ছিল এমন এক তারিখ, যে তারিখে মমতা-বিরোধিতার স্বর আরও উপরে তুলতে গোটা বাংলা থেকে মোদীর দলের কর্মী-সমর্থকরা হাজির হয়েছিলেন কলকাতায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক তাতে কোনও ভাবেই বিঘ্নিত হল না। আসলে মোদীর সঙ্গে মমতার নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হল। দু’জনেই বোঝালেন, গণতান্ত্রিক কাঠামোয় রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত বিরোধ যতটা বাস্তব, প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাও ততটাই সত্য। তাঁরা বোঝালেন, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি-তৃণমূল টানাপড়েনের অনেক ঊর্দ্ধে।
আবার বলছি, রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা অন্যতর ব্যাখ্যা খুঁজে বার করতেই পারেন। অ-বিজেপি এবং অ-তৃণমূল রাজনৈতিক শিবিরগুলো বলতেই পারে, সঙ্ঘাতের ছবি আদ্যন্ত সাজানো, গোপন সমঝোতার ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সে ধরনের মন্তব্য বা ব্যাখ্যা সত্যিই অতিসরলীকরণ হয়ে যাবে। যাবতীয় বিবাদ যদি সাজানোই হত, তা হলে কলকাতার সঙ্ঘাতের তারিখেই দিল্লিতে বৈঠক নির্ধারিত হত না। সংশয় এড়ানোর স্বার্থেই সে পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া হত।
সাম্প্রতিক রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব ভীষণ ভাবে প্রকট। তা নিয়ে উদ্বেগও আমাদের বিস্তর। কিন্তু সে সবের মাঝেও যদি ইতিবাচক কোনও নিদর্শন তৈরি হয়, তা হলে প্রশংসা তার অবশ্যই প্রাপ্য। গণতন্ত্রের পক্ষে তা স্বাস্থ্যকরই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy