Advertisement
১৮ মে ২০২৪

গণতন্ত্র কিন্তু তার নিজস্ব নিয়মেই প্রবাহিত হয়

বিরোধীর জোরাল অস্তিত্বেই শাসকের জয়যাত্রার মন্ত্র নিহিত, তাদের নিশ্চিহ্ন করার মধ্যে নেই— এই কথাটা শাসকেরা যত দ্রুত বোঝেন, ততই তাদের মঙ্গল। এই দেশের গণতন্ত্রকে নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সে তার নিয়মেই চলবে, যাবতীয় অনিয়মকে চূর্ণ করেই।

মুর্শিদাবাদের শেষ কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা দখল করে অভিষেকের ঘোষণা, কংগ্রেসের দুর্গ শেষ।—ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদের শেষ কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা দখল করে অভিষেকের ঘোষণা, কংগ্রেসের দুর্গ শেষ।—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভিতটি যে বরাবরই নিতান্ত দুর্বল, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফও। অবধারিত ভাবে তুলনাটা এসেই পড়ে। এবং অতি নিন্দুকেও স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়, চিত্রটা ভারতে সার্বিক অর্থে বিপ্রতীপ। গণতন্ত্রের ভিত্তিটি আমাদের দেশে অনেক গভীরেই প্রোথিত।

এই সগৌরব ঘোষণাটি যে আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়, তার বিবিধ কারণের অন্যতম প্রধান হল, সংসদীয় রাজনীতির প্রাঙ্গনে বিরোধীর অস্তিত্বকে দর্শনগত ভাবেই স্বীকার করা। স্বাধীনতা উত্তর কালে শাসকেরা যখনই এই সত্যটিকে অস্বীকার করতে চেয়েছেন, তখনই হাত পুড়েছে তাদের। ফলে, সংবিধানের প্রণেতারা যে দূরদর্শিতায় বিরোধীর স্বীকৃতির উপর জোর দিয়েছেন, ধারাবাহিক বাধ্যবাধকতায় এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সেই গাছের গোড়ায় জল-মাটি দিয়ে এসেছেন।

ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল দর্শনটির এই সূত্র অতএব ‘বিরোধীদের দূরবীণ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না’ এই সদম্ভ ঘোষণার অনুমোদন দেয় না। দুর্ভাগ্য এটাই, শাসকেরা ভুলে যান কখনও কখনও। একের পর এক জেলা পরিষদ, পুরসভা, পঞ্চায়েত দখল করছে এখন তৃণমূল কংগ্রেস। মানুষের বিপুল রায়ে ক্ষমতায় ফেরার পরেও, বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে এনে সংখ্যায় নগন্য কিছু বিরোধী দুর্গ দখলের প্রয়োজনীয়তা কী, সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। পন্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশিই। তারই যেন উত্তর দিলেন দখল-অভিযানের অধিনায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদের শেষ কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা দখল করে তাঁর ঘোষণা, কংগ্রেসের দুর্গ শেষ। দূরবীণ দিয়েও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না কংগ্রেসকে।

ইতিহাস নিয়ে যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁরা মনে করিয়ে দেবেন, পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম এই ধরনের কথা বললেন এমনটা নয়। ঠিক এই বক্তব্য, একই সুর ৩৪ বছরের বাম জমানায় বহু বাম নেতার মুখেই শোনা গিয়েছে। শোনা গিয়েছে আরামবাগে– গোঘাটে– কেশপুরে–গড়বেতায়, মানুষের রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে রায়ের দণ্ড নিজেদের হাতেই তুলে নিয়েছিলেন বাম জমানার ওই নেতারা। নিষ্ঠুর ইতিহাস জানিয়ে দেবে ঠিক ওই অঞ্চলগুলোতে বামেরা কী ভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার জায়গায় পৌঁছেছেন। গণতন্ত্র তার নিজস্ব নিয়মে, নিজস্ব স্রোতে প্রবাহিত থেকেছে। কৃত্রিম বাঁধ কিছু দিন প্রবাহকে আটকাতে পারে, তার পর বিপুল স্রোতে তার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই পরিণতি। অবধারিত।

বিরোধীর জোরাল অস্তিত্বেই শাসকের জয়যাত্রার মন্ত্র নিহিত, তাদের নিশ্চিহ্ন করার মধ্যে নেই— এই কথাটা শাসকেরা যত দ্রুত বোঝেন, ততই তাদের মঙ্গল। এই দেশের গণতন্ত্রকে নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সে তার নিয়মেই চলবে, যাবতীয় অনিয়মকে চূর্ণ করেই।

শাসক ইতিহাসের শিক্ষা নেয়? শিক্ষা নেবে তৃণমূল কংগ্রেস?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Abhishek Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE