Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Indian Stock market

নতুন সম্বতে কোন পথে ভারতের শেয়ার বাজার? সুসংবাদ দেবে অদূর ভবিষ্যৎ?

ভারতের শেয়ার বাজারে এখন সঙ্কট অনেক। কিন্তু এ দেশ কি পারবে সে সব কাটিয়ে উঠতে?

শেয়ার বাজারের সব থেকে পরিচিত সূচকগুলি এক বছরে জায়গা পরিবর্তন করেনি।    

শেয়ার বাজারের সব থেকে পরিচিত সূচকগুলি এক বছরে জায়গা পরিবর্তন করেনি।     প্রতীকী ছবি।

টি এন নাইনান
টি এন নাইনান
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২ ১০:০১
Share: Save:

গত বছর দীপাবলির সময় এই কলাম লিখতে বসে একটা কথা মনে হচ্ছিল। শেয়ার বাজার বোধ হয় তার উড়ান শুরু করেছে। তার আগের বছরে কোভিড অতিমারিতে খানিক বিপর্যস্ত বাজারের গত বছর ৪০ শতাংশ অর্থাৎ দুই ডিজিটের বৃদ্ধি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। নতুন বিক্রমাব্দ ২০৭৮-এ মনে হয়েছিল শেয়ার বাজারে কিছু সংশোধন দেখতে পাব অথবা অন্তত পক্ষে ২০৭৭ সম্বতের বিভিন্ন অতিমাত্রিক বিষয়কে এই বছর কোনও স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসতে পারবে। পরে দেখা গেল, বিষয়টা কম-বেশি তেমনই ঘটেছে। শেয়ার বাজারের সব থেকে পরিচিত সূচকগুলি সেই জায়গাতেই আছে, যেখানে তারা এক বছর আগে ছিল।

২০২১-এর অক্টোবর মাসে এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার মধ্যে অবশ্যই কোনও অতিলৌকিক ক্ষমতার দরকার পড়েনি। কারণ, সেই সময় বাজার বেশ ফুলেফেঁপেই উঠেছিল। এ কথাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, মুদ্রাস্ফীতির শুরুতে সুদের হারও বৃদ্ধি পাবে। এমনকি, যদি ইউক্রেন-যুদ্ধকে পাশ কাটিয়েও বিষয়টিকে দেখা যায়, তো বোঝা যাবে, বাজার থেকে টাকা নির্গত হতে শুরু করেছিল। তার আগের বছর যা ঘটেছিল, তা এর ঠিক বিপরীত। বাজারে টাকা প্রবেশ করেছিল অনেক বেশি মাত্রায়। কিন্তু এ-ও একইসঙ্গে অবধারিত ভাবে সত্য যে, ‘রিটেল বিনিয়োগকারী’দের (যাঁরা সাধারণত ব্রোকারের কাছ থেকে শেয়ার বা অন্য ধরনের লগ্নিপত্র কেনেন, অর্থাৎ অপেশাদার বিনিয়োগকারী) সামনে যেখানে সহজ কিছু বিকল্প পথ উন্মুক্ত থাকা উচিত ছিল। সেখানে সুদের হারের ক্রমবৃদ্ধির এক পর্বে বন্ডের দামও বাড়ে, রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায় ‘ওভারহ্যাং সাপ্লাই’ (যে অবস্থায় কোনও পণ্য বিক্রয় হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয় না) বজায় থাকে। সোনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, দু’বছরের মূল্যবৃদ্ধির পর তা এক স্থিতাবস্থায় এসেছে। এখন সোনার দাম দু’বছর আগে যা ছিল, তা-ই। শেয়ারের মতো সোনাও ঠিক পূর্ববর্তী পর্বের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে হজম করতে সময় নিয়েছে। সম্ভবত বিকল্পের অভাবই ‘রিটেল বিনিয়োগকারী’দের মিউচুয়াল ফান্ড মারফত ইকুইটির বাজারে অর্থ বিনিয়োগে বাধ্য করে, যখন ‘পোর্টফোলিয়ো বিনিয়োগকারী’রা (যাঁরা নির্দিষ্ট কালপর্বে শেয়ার ইত্যাদির দাম বাড়বে— এই বিষয়টির সাপেক্ষে লগ্নি করেন না) মুখ থুবড়ে পড়েন।

শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সব থেকে ভরসাজনক অংশটি হল এই যে, এমন বাজারের পক্ষে দু’বছর ধরে অপেক্ষারত থাকার বিষয়টি বিরল। গত দশকে দেখা গিয়েছিল, চলতি বছরের আগেরটিতেই একটি সম্বত বছরের মধ্যেই বাজার বেশ খানিকটা অধোগতি প্রাপ্ত হয়েছিল। যাই হোক, সাধারণ এক সাবধানবাণী আরও স্বাভাবিক ভাবে উচ্চারণ করা হয়। জানানো হয়, ভবিষ্যতের কর্মকাণ্ডকে অতীত দ্বারা নির্ধারণ করা সঙ্গত নয়। কারণ, এর পিছনে রয়েছে অগণিত অনিশ্চয়তা। যার মধ্যে প্রধান হল ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি, এই যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব এবং এই যুদ্ধের পারমাণবিক চরিত্র গ্রহণের অনস্বীকার্য প্রবণতা। যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থ ডলারের দিকে লক্ষ্য রেখে ধাবিত হয়, তবে টাকার মূল্যহ্রাসের ফলে সৃষ্ট ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ঘাটতি থেকে ভারতের শেয়ারের দামের উপর ক্রমাগত চাপ আসতেই থাকবে।

বাণিজ্যের দেশীয় অভিমুখে কর্পোরেট লভ্যাংশ এখনও বাড়তির দিকে। কিন্তু বিক্রয়ের সাপেক্ষে দেখলে বোঝা যায়, লভ্যাংশের পরিমাণগত জায়গাটি মুদ্রাস্ফীতিজনিত পরিবেশে বেশ চাপের মধ্যেই রয়েছে। সুদের হার খুব শীঘ্রই তার ঊর্ধ্বগতি-চক্রের সীমায় গিয়ে পৌঁছাবে। এর ফলে বিকল্প হিসাবে ঋণের বাজারের প্রতি আকর্ষণ (অথবা বিকর্ষণও) তুলনামূলক ভাবে কমবে। উপভোক্তাদের খরচের মাত্রা যে বেড়েছে, সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই ভাবে উজ্জীবনের লক্ষণ দেখা গিয়েছে ব্যাঙ্কঋণের ক্ষেত্রে। কিন্তু ভারতের উভমুখী গতিসম্পন্ন অর্থনীতিকে (যে অর্থনীতির একটি ক্ষেত্রের শিল্প বা বাণিজ্য অন্যটির চাইতে দ্রুত গতিতে বাড়ে) বিগত কয়েক বছর ধরে নির্ধারণকারী ‘কে ফ্যাক্টর’ (মূলত ভোক্তাজগতের ভিত্তিগত বিষয়টি) বিভিন্ন বাজারে ক্রিয়া করতে শুরু করেছে (উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, দামি গাড়ির বিক্রি অপেক্ষাকৃত সস্তা গাড়ির বিক্রির সাপেক্ষে দ্রুতগতি পাওয়ার ঘটনা)।

ইতিমধ্যে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে বৃদ্ধির গতি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে, কিছুটা মন্দাবস্থার লক্ষণ ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি তেল রফতানিকারকদের তরফে উৎপাদনব্যয় হ্রাসের প্রেক্ষিতে তেলের দামের ব্যাপারে আশানুরূপ স্বস্তি মেলেনি। এ নিয়ে ভারতের পক্ষে উচ্ছ্বাস প্রকাশের মতো তেমন কোনও আন্তর্জাতিক সহায়তাও পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি কমে আসায় রফতানির দিকটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও দুর্দিন আসতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। সরকারের তরফে তার অর্থনৈতিক নীতিতে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা থেকে সচেতনতাই প্রত্যাশা করা যায়। যদিও প্রাক্‌-নির্বাচনী বাজেটে বেশ কিছু খরচের দিক এড়ানো সম্ভব নয়।

সব দিক মাথায় রেখে এ কথা বলা যায় যে, ভারত তার অর্থনীতির গতিতে বেপরোয়া ভাব কমিয়ে কিছুটা মধ্যম তরঙ্গ বজায় রেখে চলবে। কিছু দিনের জন্য এমনও দেখা গিয়েছিল, যখন ব্যক্তিগত বিনিয়োগ অর্থনীতির নিয়ন্তা হয়ে ওঠার উপক্রম করেছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অপেক্ষাই সার হয়েছে। বিশেষ ফল ফলেনি। এর দ্বারা বাজারের মূল রশি ধরে রাখা যায়। কিন্তু তা কেবল সামনের দিকেই নজর রাখে। পিছনে ফেরার কোনও অবকাশ সে ক্ষেত্রে থাকে না। সুতরাং যখন বাজারের অন্তঃসারশূন্য প্রান্তসীমা, যেখানে ‘ইউনিকর্ন’রা (১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের স্টার্ট আপ ব্যবসায়ীরা) বিবদমান, সে দিকে নজর রেখেছিল যেখানে ভাটির টান ক্রমেই ফুটে উঠছিল। সুতরাং নতুন লগ্নি সম্ভব হলে বাজারের অন্ত্যভাগও অনেকখানি সহনশীল হয়ে উঠে হয়তো কোনও সুসংবাদ এনে চমকে দিতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Stock market shares Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE