ভুয়া খবর বা ‘ফেক নিউজ’ বিভ্রান্তি, বিদ্বেষ ছড়াইয়া সমাজকে বিপন্ন করিতেছে। বিশেষত ডিজিটাল মাধ্যমে ইহা অপ্রতিরোধ্য হইয়া উঠিয়াছে। কী প্রকারে ডিজিটাল মাধ্যমে ভুয়া খবর প্রতিরোধ সম্ভব, সেই প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া কঠিন। সম্প্রতি একটি উদ্যোগ লইয়াছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ। প্রায় দুই হাজার সংস্থা একত্র হইয়া প্রধান দুইটি ডিজিটাল সংস্থার সহিত আলোচনায় বসিবার প্রস্তাব দিয়াছে। এই বিষয়ে আইনি বাধা (অ্যান্টি-ট্রাস্ট আইন) অতিক্রম করিতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনও প্রার্থনা করিয়াছে সংবাদ সংস্থাগুলি। তাহাদের অভিযোগ, খবরের নির্বাচন ও প্রদর্শন বিষয়ে ওই প্রধান সংস্থাগুলি যে সব বিধি নির্মাণ করিয়াছে, তাহার জন্যই ভ্রান্ত খবর এত সহজে প্রচারিত হইতেছে। খবরের মান্যতা লইয়া সংশয় জাগিতেছে, সকল খবরের প্রতিই সন্দিহান হইয়া উঠিতেছেন পাঠকরা। একমাত্র প্রতিকার, সকল সংবাদসংস্থা মিলিয়া ডিজিটাল মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনে যথাযোগ্য বিধি আরোপ।
সংবাদমাধ্যমের উপর আঘাত বরাবরই আসিয়াছে, কিন্তু সচরাচর তাহা আসিয়াছে বাহির হইতে। অসহিষ্ণু রাষ্ট্র, রুষ্ট নেতা, বিত্তোদ্ধত বণিক, বিবিধ ক্ষমতাবান ব্যক্তি সাংবাদিকদের ভয় দেখাইয়া চুপ করাইতে চাহিয়াছে। কিন্তু এখন আঘাত আসিতেছে সংবাদ-ব্যবসায়ের অভ্যন্তর হইতে। ডিজিটাল মাধ্যম যত জনপ্রিয় হইতেছে, ততই বিজ্ঞাপন টানিতেছে। সংবাদপত্রের ডিজিটাল সংস্করণ নির্মাণ করা হইলেও বাণিজ্যিক ভাবে সেগুলিকে সফল করা দুঃসাধ্য হইতেছে। দুই প্রধান ডিজিটাল সংস্থা সংবাদজগতের অধিকাংশটাই দখল করিয়াছে। সংবাদ পরিবেশন তাহাদের বিশাল ও বিচিত্র ব্যবসায়ের একটি অংশ মাত্র। পাঠক পাইতে সাবেকি সংবাদ সংস্থাগুলিকে উহাদের উপর নির্ভর করিতে হইতেছে, এবং তাহাদের সকল শর্ত মানিতে হইতেছে। তাহাতে খবর সংগ্রহের মতো ব্যয়সাধ্য কাজটি সংবাদপত্রগুলির উপর বর্তাইয়াছে, কিন্তু বিজ্ঞাপন হইতে আয়ের ভাগ তাহাদের মিলিতেছে না।
ইহা শুধু বাণিজ্যিক সমস্যা হইলে তাহা লইয়া সমাজের মাথা ঘামাইবার প্রয়োজন থাকিত না। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার চরিত্র বদলাইয়া যাইবে, যাহারা দ্রুত বদলাইতে পারিবে তাহারাই টিকিবে, অন্যরা বাতিল হইবে, ইহাই দস্তুর। কিন্তু বিষয়টি যখন সংবাদ, তখন বৃহত্তর সমাজ, এমনকী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকেও চিন্তা করিতে হইবে বইকি। যথাযথ এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সংবাদ সকলের নিকট না পৌঁছাইলে তাহা নাগরিক এবং রাষ্ট্র, উভয়ের পক্ষেই মস্ত সংকট তৈয়ারি করে। বিজ্ঞাপন না পাইয়া বহু ছোট ছোট স্থানীয় সংবাদপত্র বন্ধ হইয়াছে। অপর দিকে, সংবাদসংস্থাগুলির আয় কমিয়া আসায় সাংবাদিকের সংখ্যা কমিতেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দফতরের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত পনেরো বৎসরে সাংবাদিকদের পদ কমিয়া অর্ধেক হইয়াছে। ইহার অর্থ, প্রশ্ন করিবার, উত্তর খুঁজিবার মানুষ কমিতেছে। বিশেষত বৃহৎ শহরগুলির বাইরে, ছোট শহর, আধা-শহর ও গ্রামাঞ্চল সংবাদের বৃত্তের বাহিরে পড়িতেছে। নাগরিকের নিকট নিজের চার পাশের জরুরি খবরগুলি হয় অজানা, অথবা তাহা জানিতে হইবে সোশ্যাল মিডিয়ার মান্যতাহীন সূত্র হইতে। গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy