কেহ যদি ভুলিয়াও ভাবেন যে পকোড়া ভাজাই প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কর্মসংস্থানচিন্তা, অরুণ জেটলি তাঁহাকে বাজেট বক্তৃতার একটি প্রতিলিপি পাঠাইয়া দিতে পারেন। সেই বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে, প্রসঙ্গ হইতে প্রসঙ্গান্তরে কর্মসংস্থানের কথা। প্রভিডেন্ট ফান্ডে মহিলাদের জন্য ছাড়ের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা কর্মসংস্থানের সুরে বাঁধা, কর্পোরেট ট্যাক্সের হার কমাইয়া আনাও তাহাই। এমনকী, কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়াইবার প্রস্তাবটির যুক্তিকেও অরুণ জেটলি অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগে ব্যাখ্যা করিয়াছেন। অনুমান করা চলে, ২০১৪ সালের জুমলা ২০১৯-এ হানা দিয়াছে— এখন মুখরক্ষা না করিলেই নহে। বৎসরে সওয়া কোটি নূতন চাকরি দূরে থাকুক, কর্মসংস্থান বাড়িলেই আপাতত যথেষ্ট। তবে, অর্থমন্ত্রীর বাজেটকে তাঁহার কর্মসংস্থান বিষয়ক দুশ্চিন্তার প্রকাশ হিসাবে দেখিলে ভুল হইবে। প্রস্তাবগুলি ভাঙিয়া দেখা বিধেয়, কোথায় কোন উদ্দেশ্য লুকাইয়া আছে।
অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছেন, মহিলা কর্মীদের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাকে বেতনের ১২ শতাংশ হারেই প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা করিতে হইলেও কর্মীরা প্রথম তিন বৎসর আট শতাংশ হারে টাকা জমা করিলেই চলিবে। অর্থমন্ত্রী উবাচ, ইহার ফলে মহিলাদের হাতে ব্যয়যোগ্য আয়ের পরিমাণ বাড়িবে, অতএব অধিকতর সংখ্যক মহিলা চাকরি করিতে চাহিবেন। বেতনের চার শতাংশ টাকার অঙ্কটি এমন পরিমাণ নহে যাহাতে দলে দলে মহিলা চাকরি খুঁজিতে ছুটিবেন। কিন্তু, অর্থমন্ত্রীর নিকট অঙ্কটি তাৎপর্যপূর্ণ। ধরা যাউক, এক নবনিযুক্ত মহিলা কর্মীর মাসিক বেতন ১০০ টাকা। বেতনের ১২% প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাইলে তিন বৎসর পর সুদে-আসলে তাঁহার জমিত মোট প্রায় ৫০০ টাকা। বেতনের ৮% জমাইলে তাঁহার জমিবে ৩২৬ টাকা। তিন বৎসর পর তিনি ১২% হারেই টাকা জমাইবেন। কিন্তু, প্রথম তিন বৎসর ৮% হারে টাকা জমাইলে ৩৫ বৎসরের চাকরিজীবনের শেষে প্রতি ১০০ টাকায় মোট ফারাক হয় দুই হাজার টাকার অধিক। অর্থাৎ, কাহারও প্রথম বেতন ১০,০০০ টাকা হইলে প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাঁহার প্রাপ্যের পরিমাণ মোট দুই লক্ষ টাকা কম হইবে। পুরোটাই সুদ। অর্থাৎ, কর্মসংস্থানের নামে অর্থমন্ত্রী সুদের বোঝা কমাইতেছেন।
কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ৩০ শতাংশ হইতে ২৫ শতাংশে নামাইয়া আনাকেও অর্থমন্ত্রী কর্মসংস্থান বাড়াইবার পথ হিসাবে দেখিয়াছেন। কর কমিবার ফলে ব্যবসায়ীর লাভ বাড়িলে তিনি আরও বেশি উৎপাদন করিবেন, অতএব নূতনতর কর্মীও নিয়োগ করিবেন। ট্রিক্ল্ ডাউন তত্ত্বেরও এমন নির্লজ্জ নিদর্শন খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন। অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ছা়ড় দিবেন, কিন্তু নাম করিবেন কর্মসংস্থানের— এই দ্বিচারিতাটি বড় বেশি প্রকট। অথবা, মোবাইল ফোনসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক বাড়াইবার সিদ্ধান্তটি। তাহাতে নাকি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র লাভ, কর্মসংস্থানেরও। অর্থমন্ত্রীও জানেন, ইদানীং ভারতের বাজারে বিক্রয় হওয়া ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ফোনগুলির নির্মাণের শেষ ধাপটুকু বাদে বাকি সমস্তটা কোন দেশে হয়। কর্মসংস্থান লইয়া দেশবাসীর উদ্বেগের সহিত সস্তা জাতীয়তাবাদের মিশেল বেচিয়া হয়তো তাঁহার রাজনীতির লাভ হইবে। কিন্তু কর্মসংস্থানহীন জনগোষ্ঠীর? তাহাদের কি পকোড়াই ভবিষ্যৎ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy