ব র্ধমান জেলা প্রশাসন স্থির করিয়াছেন, সরকারি কর্তারা এক একটি সরকারি স্কুলকে ‘দত্তক’ গ্রহণ করিবে। নিয়মিত পাঠদান, পরিবেশ ও পরিকাঠামোর উন্নতি, স্কুলপড়ুয়াদের জন্য সরকারি প্রকল্পগুলির সুষ্ঠু রূপায়ণ, এই সকল বিষয়েই নজরদারি করিবেন ভারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। আপাতত ঊনসত্তরটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলের জন্য ‘অভিভাবক’ নির্দিষ্ট হইতেছে। প্রচেষ্টাটি অভিনব, সন্দেহ নাই। বিশেষত জেলা স্তরে এমন উদ্যোগ পূর্বে পরিলক্ষিত হয় নাই, তাহা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও স্বীকার করিয়াছেন। স্কুল এখন আর কেবল শিক্ষাদানের প্রতিষ্ঠান নহে। শিশুর সামাজিক সুরক্ষা এবং সার্বিক বিকাশের দায়িত্ব স্কুলের উপর ন্যস্ত করিয়াছে শিক্ষার অধিকার আইন। যে শিশু স্কুলে না আসিয়া রোজগারে বা গৃহশ্রমে নিযুক্ত রহিয়াছে, তাহাকে স্কুলের সহিত সংযুক্ত করিবার কাজটিও স্কুলের। আবার যথাযথ সময়ে ব্যাগ, বই, জামা-জুতা বিতরণ, পুষ্টিসাধন, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও স্কুলেরই কর্তব্য। যাহার অর্থ, নানা সরকারি প্রকল্প আসিয়া মিলিতেছে স্কুলে। অতএব শিক্ষকদের অনেকটা সময় প্রশাসনিক কাজে ব্যয় হইতেছে। তাঁহাদের সহযোগী হিসাবে প্রশাসনের কোনও কর্তা থাকিলে শিক্ষকদের সুবিধা হইবে, সে সম্ভাবনা যথেষ্ট।
আবার স্কুলের শিক্ষকদের ফাঁকি কিংবা গাফিলতি শুধরাইবার কাজটি প্রধানত স্কুল পরিদর্শকদের হইলেও, বাস্তব ইহাই যে শিক্ষক সংগঠনগুলির রাজনৈতিক প্রাবল্যের জন্য পরিদর্শকদের ভূমিকাটি সংকুচিত হইয়া পড়িয়াছে। শিক্ষকের নিকট জবাবদিহি চাহিয়া পরিদর্শক নিগৃহীত হইয়াছেন, এমন ঘটনাও অবিদিত নহে। দাবি করা যাইতে পারে, স্কুল পরিদর্শন ব্যবস্থাটিকে ফের জোরদার করা হউক। কিন্তু দলীয় রাজনীতি তাহা হইতে দিবে, তাহার আশা কম। অতএব অবস্থা বুঝিয়া ব্যবস্থা করিতে হইবে। এক জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তা স্কুলের কাজে নজর রাখিতেছেন জানিতে পারিলে সংগঠনের ছত্রছায়ার ভরসায় না থাকিয়া শিক্ষকরা কাজে মনোযোগী হইবেন, এমন সম্ভাবনাও উড়াইয়া দেওয়া যায় না। অতএব বর্ধমান জেলাশাসক এই দত্তকপ্রথা চালু করিলে জেলার পড়ুয়াদের উন্নতি হইবারই সম্ভাবনা।
প্রশ্ন অন্যত্র। স্কুলগুলির প্রতি নজর রাখিবার কথা স্থানীয় মানুষের। স্কুল পরিচালন কমিটিতে তাঁহাদের প্রতিনিধি থাকিবে, স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভা স্কুলগুলির পরিকাঠামো নির্মাণে ও পরিবেশ উন্নয়নে অংশীদার হইবে, ইহাই সরকারি বিধি। প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের ক্ষেত্রে শিক্ষার অধিকার আইন নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছে, কী রূপে স্কুল পরিচালন কমিটি নির্মিত হইবে এবং কী তাহার কার্যপরিধি। কিন্তু এই রাজ্যে সে সকল নির্দেশ পালিত হয় নাই। স্কুলগুলির পরিচালন কমিটি আইনি পদ্ধতিতে গঠিত হয় নাই। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের সহিত স্কুলের সংযোগটি কার্যক্ষেত্রে স্পষ্ট নহে। কোথাও শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে অভিভাবক, পঞ্চায়েত প্রতিনিধির সহিত যোগাযোগ রাখেন, কোথাও রাখেন না। ফলে স্কুল নির্মাণ হইতে প্রকল্পের রূপায়ণ, সকল কাজই প্রধান শিক্ষককে নিজ দায়িত্বে করাইতে হইতেছে। ইহার ঝুঁকি কম নহে। দুর্নীতির ঝুঁকি, মিথ্যা অভিযোগে শিক্ষকদের হেনস্তার ঝুঁকি। সরকারি আধিকারিক স্কুল পরিচালন কমিটির বিকল্প হইতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy