কাহারও প্রাণের উপর তাঁহার নিজেরও অধিকার আছে কি না, সেই বিষয়ে দার্শনিক তর্ক চলিতে পারে। বস্তুত, সেই তর্কের কোনও মীমাংসা নাই। কিন্তু, চিকিৎসার অতীত কোনও অসুস্থতায় নামমাত্র বাঁচিয়া থাকা কোনও মানুষের জীবন শেষ করিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্তটি যে অন্য কাহারও থাকিতে পারে না, সে বিষয়ে তর্ক নাই। অতএব, সেই সম্ভাবনা নির্মূল করিতে সাবধান হওয়াই বিধেয়। প্যাসিভ ইউথনেজিয়া বা স্বরচিত ইচ্ছাপত্র অনুসারে ইচ্ছামৃত্যু অনুমোদন সংক্রান্ত আইন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার সাবধান হইয়াছে। আইন-প্রস্তাব তৈয়ারি হইতেছে—কেহ যদি সজ্ঞানে লিখিত ভাবে জানাইয়া রাখেন যে, জীবনদায়ী ব্যবস্থার উপর নির্ভর করা ভিন্ন বাঁচিয়া থাকা অসম্ভব এমন অসুখে আক্রান্ত হইলে যেন তাঁহাকে আর বাঁচাইয়া রাখা না হয়— একমাত্র তখনই হাসপাতাল ইচ্ছামৃত্যু কার্যকর করিবার সিদ্ধান্ত লইতে পারে। তবে, সেই ইচ্ছাপত্রটিও একটি কমিটিকে দিয়া যাচাই করাইয়া লইতে হইবে। কেহ মিথ্যা ইচ্ছাপত্র জমা করিলে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা অবধি জরিমানা হইতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনাতেই প্যাসিভ ইউথনেজিয়ার ক্ষেত্রে ভারত কঠোরতর আইনের পথে হাঁটিতেছে।
এই সাবধানতা জরুরি। বিশেষত ভারতে, যেখানে যে কোনও আইনের ফাঁকফোকর গলিয়া স্বার্থসিদ্ধির ধারা সমানে চলিতেছে। জীবনদায়ী যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল মানুষের ন্যায় অসহায় আর কে? তাঁহার প্রতিটি নিঃশ্বাস আক্ষরিক অর্থেই অন্যের সাহায্যে চলে। অনেক ক্ষেত্রেই এমন হইতে পারে, সেই মানুষটির মৃত্যু কাহারও পক্ষে অতি লাভজনক। ইচ্ছামৃত্যুর প্রক্রিয়াটিতে যদি যথেষ্ট নজরদারির ব্যবস্থা না থাকে, তবে অসৎ হাসপাতাল এবং দুষ্ট চিকিৎসকদের সাহায্যে মানুষটিকে মারিয়া ফেলা নিতান্তই সহজ কাজ। বস্তুত, তাহা আইনসংগত খুনের রাস্তা খুলিয়া দিবে, তেমন আশঙ্কা উ়়ড়াইয়া দেওয়া যায় না। অতএব, মিথ্যা নথি জমা করিলে কড়া শাস্তির আশঙ্কা থাকা বিধেয়। কেহ আপত্তি জানাইতে পারেন যে এত কড়া আইন তৈরি হইলে কেহ আর কোনও মানুষের ইচ্ছাপত্রটিকে মর্যাদা দিয়া তাহার জীবন শেষ করিবার ঝুঁকি লইবেন না, ফলে আইন তৈরি হওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছামৃত্যু অসম্ভবই থাকিবে। আশঙ্কাটি অহেতুক নহে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা এতই জরুরি যে তাহার জন্য কোনও মূল্য চুকাইতে হইলে সেই সম্ভাবনা মানিয়া লওয়া ভিন্ন উপায় নাই।
তবে, প্রক্রিয়াটি এইখানেই থামাইয়া দিলে চলিবে না। অ্যাকটিভ ইউথনেজিয়া বা রোগীর সম্মতি ব্যতিরেকেই তাঁহার জীবন শেষ করিবার সিদ্ধান্তের অধিকার চিকিৎসকদের দেওয়া চলিতে পারে কি না, সেই তর্কটি চালাইয়া যাইতে হইবে। তাহার জন্য আরও বেশি সাবধানতা প্রয়োজন, আরও সতর্ক থাকিতে হইবে। সেই প্রক্রিয়া কঠোরতর হওয়াই বিধেয়। কিন্তু, অধিকারটি নীতিগত ভাবে অস্বীকার করা দুষ্কর। সজ্ঞান ইচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত করিবার সচেতনতা কয় জনের আছে, সেই প্রশ্ন উঠিতেই পারে। কিন্তু কেহ সেই সিদ্ধান্ত করেন নাই বলিয়া তাঁহার মুক্তির অধিকার থাকিবে না— এমন কোনও বাঁধাধরা নীতি কি ন্যায্য? অরুণা শানবাগ নিজের জীবন দিয়া তাহা জানাইয়া গিয়াছেন, এই প্রশ্নের উত্তর সহজে মিলিবে না। তবু, সন্ধান অব্যাহত থাকুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy