Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

শিক্ষা, রোজগার বাড়লে পণের দাবি কমে না। একেবারে ঠিক কথা। পণ চাওয়া বা না-চাওয়া পুরোপুরি একটি মানসিক বিষয়। পণপ্রথার বলি বছরে বছরে বাড়ছে।

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

পণ দেবে না বললেই হবে?

শিক্ষা, রোজগার বাড়লে পণের দাবি কমে না। একেবারে ঠিক কথা। পণ চাওয়া বা না-চাওয়া পুরোপুরি একটি মানসিক বিষয়। অশিক্ষিত ও কপর্দকশূন্য পাত্র বা পাত্রের বাড়ির লোকজন পণ চাইতে আগ্রহ না-ও দেখাতে পারেন, যদিও কিছু অর্থাগম হলে পরিবারের সুরাহা হয় কিংবা পরিবারটিকে টিকে থাকতে সাহায্য করা হয়, তবুও বরের আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান এত বেশি যে টাকা চেয়ে ছোট হতে চায় না (‘বরপণ নয়, মেয়েকে বরং জমি-বাড়ি দিতে পারেন’, ৯-৩)। পক্ষান্তরে, শিক্ষিত ব্যবসায়ী বা চাকুরিজীবীরা বরং খুব সহজেই পণ আদায় করে নেন ভাবী কনের দেখাশোনা করার গ্যারান্টি দিয়ে। এঁরা পণপ্রথার বিষময় ফল নিয়ে নিবন্ধ লিখতে পারেন, আকাশে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে পণবিরোধী স্লোগান দিতে পারেন, চাইলে সরকারের কাছে বিয়ের আগে অ্যাফিডেভিট দাখিল করতে পারেন যে, কোনও অবস্থায় কোনও মতেই পণ দেব না, কিন্তু নিজের বেলায় পণ নিতে ছাড়েন না। রীতিমতো দরকষাকষি করে যত বেশি সম্ভব আদায় করে নেন এবং বিয়ের পরেও নানা কৌশলে ও অজুহাতে টাকাপয়সা, বিষয়সম্পত্তি আদায় করেন শ্বশুরবাড়ি থেকে।

পণপ্রথার বলি বছরে বছরে বাড়ছে। কেন? কেউ নিজেকে আর্থিক দিক থেকে ছোট ভাবতে চাইছে না। পিওনের চাকরি করা পাত্র ভাবছেন গেজেটেড অফিসারের বউয়ের যদি ২৫ ভরি সোনা থাকতে পারে, তবে আমার বউয়ের কেন থাকতে পারে না? আমার না থাকুক আমার শ্বশুর, শালাদের তো আছে, তাদের মেয়েকে-বোনকে আমি বিয়ে করে উদ্ধার করেছি। ওই অফিসার আর আমি দু’জনেই গ্র্যাজুয়েট। আমার বউ আর ওঁর বউ দু’জনেই একই স্কুলে-কলেজে পড়ত, আমার বউ বরং পড়াশোনা, গানবাজনা, কথাবার্তায় বেশি চালাকচতুর। তবে আমি কেন পিছিয়ে থাকব? আমার ছেলেকেও ভর্তি করব ওঁর ছেলেকে যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করাবে, সেখানেই। আমি পারিনি তো কী হয়েছে, আমার ছেলে ঠিক পারবে ওঁর ছেলেকে হারিয়ে দিতে। আমার ছেলেকে আমি সবচেয়ে নামী ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে দেব। মাল্টিজিমে আর সুইমিং পুলে ভর্তি করে দেব। নামকরা সব টিউটররা এসে পড়িয়ে যাবেন। কলকাতার নামী স্কুলে ভর্তি করাব। একটা ওয়েল-ফার্নিশড ফ্ল্যাট বুক করতে হবে। হস্টেলে রাখব না। ছেলে আর ছেলের মা গিয়ে থাকবে। আমি উইক-এন্ডে যাব। টাকাপয়সার কথা চিন্তা করলে হবে? কেরিয়ার ইজ কেরিয়ার, নো কম্প্রোমাইজ। আরে বাবা আমার শ্বশুরমশাইয়ের প্রচুর টাকা। দেবে না বললেই হবে? রেগুলেটর তো আমার হাতে। চাপ দেব, আর টাকা ঝরবে।

শুধু পাত্র নয়, অনেক সময় পাত্রীই চাইছেন বাপের বাড়ি থেকে যতটা সম্ভব বেশি আদায় করে নিতে। বলা যায় না বাবা-মায়ের অবর্তমানে দাদা-বউদিরা কী রূপ ধারণ করেন। তা ছাড়া সম্পত্তি ভাগবাঁটোয়ারা খুব সহজ ও মসৃণ কাজ নয়। জমি-বাড়িঘর ব্যাগে করে নিয়ে আসা যায় না শ্বশুরবাড়িতে। সবাই মিলে ঠকিয়ে হাতে কিছু নগদ দিয়ে চিরতরে বিদায় দিয়ে দেবে। তার চেয়ে ঢের ভাল বিয়ের সময় ও তার পর পর যতটা পারা যায় আখের গুছিয়ে নেওয়া।

পণ না নিয়ে গেলে শ্বশুরবাড়িতে নিন্দে হয়— কেমন হা-ঘরের মেয়ে এনেছ বিয়ে করে, একেবারে ‘খালি গায়ে’ পাঠিয়েছে! বাবার সম্পত্তি দাবি করলে বাপের বাড়িতে নিন্দে হয়— কী সেয়ানা মেয়ে দেখেছ? এত দিন গান্ডেপিন্ডে খেলদেল, এত খরচ করে বিয়ে দেওয়া হল, তাতে পেট ভরল না, যেই বাপ চোখ বুজল আর অমনি দাবিপত্তর নিয়ে হাজির। এতগুলো ভাই রয়েছে, ভাইপো, ভাইঝিরা রয়েছে, এদের ভবিষ্যতের কথা একটি বার মাথায় এল না?

মেয়ের বিয়ের জন্য যদি বেশির ভাগ জমি বিক্রি করতে হয় তা হলে প্রাপ্ত টাকা বিয়ের অনুষ্ঠানে বা বরপণ বাবদ খরচ না করে যদি সমপরিমাণ জমি মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি বা মেয়ের পছন্দমত কোনও জায়গায় মেয়ের নামে জমি/ফিক্সড ডিপোজিট কিনে দেওয়া যায় তা হলে বেশি কার্যকর হয়। আর যদি নিজেদের গ্রামেই জমি রাখতে হয়, তা হলে বিয়ের দিন মেয়ের নামে দলিল তুলে দিলে ভাল হয়। এ ক্ষেত্রে যদি সরকার করের হার কম করেন বা একেবারেই মকুব করে দেন, তা হলে বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।

তবে যা-ই করা যাক না কেন, পাত্র বা পাত্রপক্ষ নানা অছিলায় কিছু লোটার ধান্দায় থাকে।

সুহাস রায় বেলেডাঙ্গা, নদিয়া

সেই তিমিরেই

কৃষ্ণেন্দু সান্যালের ‘টক শো, ফেসবুক, তার পর?’ (১৮-৩) পড়তে পড়তে একটি ঘটনার কথা মনে এল। ঘটনাটি আমাদের গ্রামের একটি অল্পবয়স্ক ষাঁড়কে নিয়ে। গ্রামের কিছু চ্যাংড়া–ছিঁচকে লোক এক দিন মজা পাওয়ার লোভে বাঁশের মাথায় আগুন লাগিয়ে ষাঁড়টিকে রাস্তায় রাস্তায় তাড়া করে। এবং তারই মধ্যে ষাঁড়টির যৌনাঙ্গে আগুন লাগিয়েও দেয়। অবলা পশু, আজও তাকে সেই ক্ষত যৌনাঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে গ্রামের পথে পথে। এ সবের পাশাপাশি মজা ও রসিকতার ছলে গ্রামের কত মেয়ে যে বাড়ির পুরুষ আত্মীয়স্বজন এবং পাড়ার রসিক দাদাদের যৌনক্ষুধার শিকার হয় তার তো কোনও ইয়ত্তা নেই। লক্ষণীয়, এই শিকার কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষ, নারী ও অবলা পশুরাই হয়। হচ্ছেও।

আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কতটা চারিত্রিক ও মানসিক উন্নতি ঘটছে, সে বিষয়ে এ বার ভেবে দেখার প্রয়োজন।

তন্ময় দেবনাথ কলকাতা-১০৩

ভদ্রলোক

ইস্কুলে মাস্টারমশাইরা শাসন করার সময় প্রায়ই বলতেন ‘তোমরা যা-ই করো না কেন, একটা কথা সর্বদা মনে রাখবে তোমরা ভদ্দরলোকের ছেলে।’ এখন বুঝি মাস্টারমশাইরা যে অর্থে ‘ভদ্রলোক’ শব্দটি উচ্চারণ করতেন তার সঙ্গে আভিধানিক অর্থের বিশেষ একটা মিল নেই (‘টক শো, ফেসবুক তার পর?’, ১৮-৩)। অভিধানে ভদ্রলোক বলতে বোঝায় যিনি ধনী, সফল, সুশিক্ষিত, একটি বিশেষ সামাজিক শ্রেণিভুক্ত এবং সমাজে যাঁর অবস্থান বিশেষ সম্মানের। মাস্টারমশাইদের কাছে বোধ হয় এই সম্মানের ব্যাপারটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আবার সেই সম্মানবোধের সঙ্গে ওতপ্রোত মিশে থাকে একটি বিশেষ আচরণবিধি ও জীবনবোধ, সেটাই ভদ্রলোকের সাংস্কৃতিক দ্যোতনা। ভদ্রলোক মানেই বড়লোক হতে হবে, এমন নয়। কিন্তু পেটে বিদ্যে থাকা চাই। আর থাকা চাই সেই মূল্যবোধ, যা তাকে ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ, ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে তারতম্য করতে শেখায়। সংক্ষেপে সে-ই ভদ্রলোক, যে সাধারণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, কিন্তু চিন্তা ও মননের ক্ষেত্রে উচ্চমার্গীয়। চার পাশে তাকালে এই ভদ্রলোকেদের বিশেষ একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না আজ। আক্ষরিক অর্থেই তারা প্রায় অবলুপ্ত প্রজাতি।

শোভনলাল চক্রবর্তী কলকাতা-৯৪

মনুষ্যেতর কেন

‘টক শো, ফেসবুক...’ (১৮-৩) রচনায় মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীদের বলা হয়েছে ‘মনুষ্যেতর প্রাণী’। আমার প্রশ্ন: ওই প্রাণীরা যে মানুষের থেকে ‘ইতর’, সেটা ঠিক করা হল কিসের নিরিখে? আর সেটা যতক্ষণ না জানা যায়, ওদের নির্বিচারে ‘মনুষ্যেতর’ বলতে থাকা কি ঠিক?

প্রসঙ্গত, বহু দিন আগেই সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল ওদের জন্য সুন্দর একটি শব্দ ব্যবহার শুরু করেছিলেন। সেটা হল ‘না-মানুষ’।

ভাস্কর রায় কলকাতা–৭৭

ভ্রম সংশোধন

২৫ মার্চ আনন্দবাজার পত্রিকার ‘কলকাতা উত্তর’ এবং ‘কলকাতা দক্ষিণ’-এর পাতায় খড়দহ উড়ালপুল সংক্রান্ত খবরে একটি রাস্তার নাম পূর্ণানন্দ সরণি লেখা হয়েছে। এটি পুণ্যানন্দ সরণি হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE