ঐতিহ্য, সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিন
লালদিঘি এলাকা নব সাজে সজ্জিত অবস্থায় নববর্ষে সাধারণ মানুষের কাছে আত্মপ্রকাশ করল। খুবই আনন্দের সংবাদ হলেও সম্পূর্ণ খুশি হতে পারছি না। কারণ, সামগ্রিক ভাবে এই হেরিটেজ অঞ্চলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
বিবাদী বাগের পূর্ব দিকে ইতিমধ্যেই পলিথিন ছাউনি দিয়ে জবরদখল করে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। এ রাজ্যে এক অদ্ভুত নৈরাজ্য চলছে। প্রথমে অন্য দেশ, অন্য রাজ্য থেকে এক দল মানুষ যত্রতত্র বসে পড়ে সংসার পাতছে। তার পর তাঁদের সরাতে গেলেই বিরোধী নেতারা পুনর্বাসনের দাবি তুলে, হইহই করে আন্দোলন করে রাজ্যের পায়ে কুড়ুল মেরে বাংলার সর্বনাশ করে যাচ্ছে। ঢাকুরিয়া স্টেশনে লাইনের ধারের বস্তি দেখলেই বোঝা যাবে সমস্যার শিকড় কত গভীরে।
বিবাদী বাগ ও ধর্মতলা এলাকা সম্পূর্ণ হকার-মুক্ত করা দরকার। এদের উচ্ছেদ করে ধর্মতলার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের চরিত্র ফিরিয়ে আনা জরুরি। এলাকাটি এদের দখলে চলে গেছে, এরা বাংলার ক্ষতি করেই চলেছে, এদের ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও রাজস্ব আদায় হয় না, উপরন্তু রাজপথ ঝুপড়ি-কবলিত হওয়ায় বিদেশিদের কাছে বদনাম হয়।
রাজভবনের বাউন্ডারি রেলিংয়ের পাশে অজস্র প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস ও নোংরা পড়ে থাকে, কেউ পরিষ্কার করে না। রাজভবনের উত্তর দিকের সৌধগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধূলিমলিন, রংচটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে। রাজভবনের পাশের জমিতে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের সামনে এক শিশু উদ্যানের উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যপাল শ্যামলকুমার সেন ১৯৯৯ সালে। এখন সেই উদ্যানও আবর্জনার স্তূপ।
এই এলাকার আলোকস্তম্ভ, সৌন্দর্যায়নের বিভিন্ন জিনিস চুরি হয়ে যায়। চোর ধরাও পড়ে না, শাস্তি হয় না। কলকাতার ঐতিহ্যমণ্ডিত এই এলাকার সামগ্রিক চেহারার দ্রুত উন্নতি প্রয়োজন।
স্বপনকুমার গোস্বামী কলকাতা-২৭
কারা লাভবান
চাষিদের খাজনা মকুবের বার্তায় গ্রামের সাধারণ দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষজন, যাঁদের জীবন ও সংসার মাত্র কয়েক কাঠা কিংবা বিঘা জমির ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো তাঁরা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। কিন্তু এর পাশাপাশি এক শ্রেণির মানুষরাও (যাঁরা চাষিদের জমি লিজ দেন) বহুল পরিমাণে লাভবান হবেন। কিন্তু গ্রামবাংলার বহু চাষি আছেন যাঁরা সাধারণত গ্রামের সচ্ছল পরিবারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে চাষবাস করেন। এ ক্ষেত্রে সেই চাষিদের কোনও লাভ হবে না। দশ বছর আগে জমির মালিকের সঙ্গে সে যে চুক্তিতে জমি চাষ করতেন, আজও সেই চুক্তিতেই চাষবাস করবেন। বরং মাঝখান থেকে খাজনা না দিয়ে মুনাফা লুটবে জমির মালিকেরা। এবং যে সকল ধনবান চতুর জমির মালিকরা বছরের পর বছর নানা ফন্দিফিকির করে জমির প্রচুর খাজনা এড়িয়ে গেছেন, তাঁরাও সরকারে এই ঘোষণা শোনার পর এক প্রস্থ নাচানাচি যে করে নিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যা-ই হোক, রাজ্যের আয় কমিয়ে সরকারের এমন ঘোষণা তথাকথিত জমির মালিকদের (যাঁদের চাষের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই) মুনাফা লুটবার সুযোগ করে দিলেও বাংলার বড় অংশের চাষিদের যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপড়েন থেকে বাঁচিয়েছে, তা স্পষ্ট বলা চলে।
তন্ময় দেবনাথ কলকাতা-১০৩
জরিমানা হোক
রোজই বাড়ির থেকে ৫ মিনিট দূরে বাগুইআটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরি। আরও হাজার হাজার যাত্রী রোজ এই বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করেন। বছরখানেক আগে স্থানীয় বিধায়কের তরফে বাগুইআটি-সহ ভিআইপি রোডের প্রায় প্রতিটি বাসস্টপে পাকাপোক্ত ছাউনি করে দেওয়া হয়। অন্য জায়গায় যাত্রীরা বাসস্টপে দাঁড়ালেও, বাগুইআটি এবং কেষ্টপুরে কেউ বাসস্টপে দাঁড়ান না। ফলে বাসগুলিও থামছে অনেক আগে। অকারণ যানজট হচ্ছে। উল্টোডাঙা অভিমুখে বাগুইআটি থেকে যে রাস্তাটি বাঁ দিকে অশ্বিনীনগরের দিকে চলে যাচ্ছে, সে দিকে ৩০সি, ৩০সি/১ এই দু’টি বাস চলাচল করে। ঠিক তেমনই কেষ্টপুর বাজার পর্যন্ত যায় ১২সি/২ বাস। দু’টি রাস্তাই যেখানে ভিআইপি রোডে মিশছে, ঠিক সেই জায়গাতে অন্যান্য বাস দাঁড়ানোয় সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। দরকার হলে, বাসস্ট্যান্ডে না–দাঁড়ানো যাত্রীদের অথবা বাসগুলির জরিমানা করা হোক।
অভীক রায় কলকাতা-৫৯
মাথার দাম!
রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে শালীনতাবোধ ক্রমশ লোপ পেতে বসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর মাথার দাম ঘোষণা তো তালিবানি মানসিকতার প্রকাশ। যাঁরা এই ধরনের কদর্য ফতোয়া জারি করেন, তাঁরা আর যা-ই হোক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে হিংসার কোনও ঠাঁই নেই। দেখেশুনে তো মনে হচ্ছে, দেশটাকে মধ্যযুগে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা চলছে। আর উন্নততর গণতন্ত্রের পরিবর্তে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা দানা বাঁধছে।
সুভাষ ঘোষ হাজরা পাঁচথুপি, মুর্শিদাবাদ
গেরুয়া তাণ্ডব!
কোনও দল বা তার নীতি ভাল না খারাপ, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রত্যেকের দাবি বা ধারণা, তাঁর মতটাই ঠিক। নির্বাচনে ভোটাররা সে ব্যাপারে রায় দিয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু বিজেপি-বিরোধিতা সমানে চলছে। ‘হনুমান উৎসবে গেরুয়া তাণ্ডব’ (১২-৪) শিরোনামের খবরটিতে গেরুয়ারা তাণ্ডব করেছে, সে রকম তো কিছু পেলাম না! উলটে তাদের মিছিলেই তো চলেছে পুলিশি তাণ্ডব!
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা-৭৫
‘শিব ওঠা’
এক পাঁচ দিন ব্যাপী ভিন্নধর্মী উৎসব, যার সূচনা ‘শিব ওঠা’কে কেন্দ্র করে। যে বছর চৈত্র মাস ৩০ দিনে, সে বছর ওঁর উত্থান ঘটে ২৫ তারিখে, আর ৩১ শে মাস হলে ২৬ শে। ওই দিন সদলবলে হাজির হয়ে যান সালারের অদূরবর্তী দওবরুটিয়া গ্রামে বেলা ১১টার মধ্যে। মধ্যে ঘণ্টাখানেকের বিশ্রাম। তার পর বিকেল চারটে নাগাদ শুদ্ধ ভক্তদের বিশেষ ধরনের নৃত্য পরিবেশন তিন জায়গায়। মোটামুটি ঘণ্টা চারেকের ব্যাপার। অতঃপর যাত্রাপালা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বিকেলেও একই অনুষ্ঠান, কিন্তু তৃতীয় দিন সন্ধ্যার পর থেকে পাতাভক্তদের বিশেষ অনুষ্ঠান ও বোলান গান। সমগ্র এলাকা জুড়ে। গ্রামের পর গ্রামে সারা রাত-ব্যাপী বিশেষ নৃত্য-গীতের আসর। একে বলে ‘জাগরণের রাত’। বড় মায়াবী রাত। চতুর্থ দিনে ‘রাঘবেশ্বর’ (দওবরুটিয়ার শিবের নাম) যাবেন গঙ্গা নাইতে, সঙ্গী বাণেশ্বর, দুই ধরনের ভক্ত, দেয়াসিনি ও অনুরাগিবৃন্দ। দোলযাত্রার মুহূর্তে বোল উঠবে ‘লবার বাবার জল সন্ন্যাস’। ‘লবা’ হচ্ছেন লম্বোদর, অর্থাৎ সিদ্ধিদাতা গণেশ। সেই দোলে আম আর চাঁদমালা দানের মধ্যে দিয়ে এলাকাবাসী আম মুখে দেবে। একটি লোকপ্রবাদ— কাগ্রাম, খাঁড়েরা, শিশুয়াশ্বর, দওবরুটিয়া এবং গঙ্গাটিকুরী-সহ শিব সহোদর পাঁচ ভাই স্নানের ঘাট কাটোয়ার অপর পিঠে উদ্ধারণপুর শাঁখাই সঙ্গমের মাঝামাঝি। এই চত্বরের গঙ্গার ঘাটগুলিতে সকল গ্রামের শিবই নাইতে আসে ওই দিন। পঞ্চম দিনে গাজনের সমাপ্তি পার্বণ। মূলত হোম-যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও বাণফোঁড়া হয়, যেমন দখিনখণ্ডে। লোকসংস্কৃতি অনুরাগীরা এই ভ্রমণে খুঁজে পাবেন বৌদ্ধ ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে উত্তরণ পর্বের অসাধারণ কিছু ক্রমবিলীয়মান চিত্রালেখ্য।
অনুপ মুখোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy