হিন্দু ভারত এল কোথা থেকে
‘বাহুবলী ২’ সিনেমাটি আদ্যন্ত একটি কল্পকাহিনি, যার মধ্যে পরিচালক কোনও ঐতিহাসিক তথ্য ব্যবহার করেননি। কিন্তু বিশ্বজিৎ রায় কোন তথ্যের ভিত্তিতে ছবিটিকে ‘যবন-আক্রমণ-পূর্ব হিন্দু অতীত’ বলেছেন তা বোঝা যায় না (‘কী তার দর্প’, ১৪-৫)। যে সমৃদ্ধি-রাজসিকতার কথা তিনি বলেছেন, তা কি শুধু সেই হিন্দু ভারতের অভিজ্ঞান? যবন শাসিত ভারতে তা কি ছিল না? ১৮৮২ সালে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসের মতো বিধিসম্মত সতর্কীকরণ (হিন্দু হলেই ভাল হয় না, মুসলমান হলেই মন্দ হয় না) ২০১৭ সালের ‘বাহুবলী ২’-তে আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে? নিবন্ধকার আগাগোড়া ছবিটিকে শুধুমাত্র একটি হিন্দু কাহিনি হিসেবে দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ নিয়ে সতর্কীকরণ জারি করে রাখলেন যে, হিন্দুরা এই ছবিটিকে যেন ভারতের একমাত্র গল্প না ভাবে, অন্য স্বরকে যেন নিকেশ না করে বা হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে ওঠে। একটি শিল্পসৃষ্টিকে এই রকম সংকীর্ণ দৃষ্টিতে দেখা শিল্প বা শিল্পীর পক্ষে শুধু অনভিপ্রেতই নয়, অবমাননাকরও বটে। অন্য দিকে তা সংখ্যাগরিষ্ঠের পরিণতমনস্কতাকেও ছোট করে। এই সতর্কীকরণ তো তা হলে ‘জোধা-আকবর’ বা নির্মীয়মাণ ‘পদ্মাবতী’-র মতো ছবিগুলির ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন, কারণ সেগুলি সরাসরি ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা মুসলিম আধিপত্যবাদের উপর আধারিত।
ছবিটির শেষ দিকে রাজমাতার বিচারসভায় শৃঙ্খলাবদ্ধ দেবসেনাকে বলতে শোনা যায় ‘দুষ্টের অত্যাচার অপেক্ষা সজ্জনের মৌন রাজ্যের পক্ষে বেশি ক্ষতিকারক।’ কথাটি যেন আজকের ভারতে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
করালীপ্রসাদ মালী, নূতনপল্লি, সিউড়ি, বীরভূম
তাকেদা
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা (‘কদম কদম বঢ়ায়ে যা’, রবিবাসরীয়, ৫-৩) প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর অত্যন্ত আপনজন হরিপ্রভা মল্লিক তথা তাকেদা-র কথা। এই বঙ্গনারী ছিলেন ঢাকা উদ্ধারাশ্রম-এর প্রতিষ্ঠাতা শশিভূষণ মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী তথা ওই আশ্রমের সেবিকা নগেন্দ্রবালা দেবীর প্রথমা কন্যা, যাঁর জন্মসাল ১৮৯০। ঢাকার বুলবুল ফ্যাক্টরির জাপানি প্রযুক্তিবিদ ছিলেন উয়েমেন তাকেদা, যিনি পরে নিজে গড়ে তোলেন সাবান তৈরির কারখানা ইন্দো-জাপানিজ সোপ ফ্যাক্টরি। হরিপ্রভা ও উয়েমেনের পরিচয় তথা পরিণয়ের সুবাদে ১৯১২ সালে প্রথম জাপানে যান হরিপ্রভা ও সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখে ফেলেন বঙ্গমহিলার জাপানযাত্রা নামে একটি বই। সুধী পাঠক, মনে রাখবেন ১৯১৫ সালে প্রকাশিত এই বইটিই বাংলা ভাষায় জাপান ভ্রমণ বিষয়ে লেখা প্রথম বই, কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জাপান যাত্রীর ডায়েরি’ প্রকাশিত হয় ১৯১৯ সালে। ১৯১২-র পরে ১৯২৪ ও ১৯৪১ সালেও হরিপ্রভা জাপানে যান। তৃতীয় বার জাপান যাওয়ার সূত্রে হরিপ্রভার সঙ্গে জাপানে নেতাজি ও রাসবিহারী বসুর যোগাযোগ হয়। নেতাজির অনুরোধে হরিপ্রভা মল্লিক টোকিয়ো থেকে নিয়মিত বেতার মারফত আজাদ হিন্দ বাহিনীর সপক্ষে প্রচারকার্য পরিচালনা করতেন। দুঃখের বিষয়, হয়তো যুদ্ধের বাজারে গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরেই এই প্রচারকার্য সম্পর্কিত কোনও বিবরণী হরিপ্রভা লিখে যাননি। তবে এটা পরিষ্কার যে, হরিপ্রভা নেতাজির অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন ছিলেন বলেই নেতাজি তাঁকে এত বড় একটা দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
উৎপল মুখোপাধ্যায়, চৌধুরিপাড়া রোড, বারাসত
মিত্র শান্ত
বর্তমানে সর্বগ্রাসী বাণিজ্যের বৃত্তে বন্দি বিভিন্ন খেলার বিখ্যাত খেলোয়াড়রা ক্রীড়ামোদীদের স্মৃতির পাতায় কী ভাবে বিরাজ করবেন, জানি না। হয়তো কেউ কোনও সিমেন্ট, সাবান বা দাদের মলমের সঙ্গে এক নিশ্বাসে উচ্চারিত হবেন। আমাদের মতো প্রবীণদের সুবিধেটা হল, আমাদের স্মৃতির ভাণ্ডারে প্রিয় খেলোয়াড়রা নিজ গুণেই উজ্জ্বল থাকবেন। কথাটা মনে এল মে দিবসে শান্ত মিত্রের প্রয়াণ সংবাদ পড়ে।
তিনি এমনই ব্যতিক্রমী এক ক্রীড়াচরিত্র ছিলেন যে, তাঁর সংস্পর্শে এলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যেত না। চাকরি করার সময় অনেক বিখ্যাত ফুটবলারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে, কারণ পরিমল দে ছিলেন আমার সহকর্মী। প্রায় দিনই বিকেলে সংস্থার ময়দান তাঁবুতে পরিমলের মধুর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে খেলোয়াড়রা আসতেন। শান্ত মিত্র কিন্তু খেলা ছাড়া সংগীত, সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়েই বেশি আলোচনা করতেন। তিনি ছিলেন সদা হাস্যময়। তাঁর তীক্ষ্ণ রসবোধই আমাকে বেশি আকর্ষণ করত। এক দিন তেমনই তাঁবু-আড্ডায় তাঁর সঙ্গে দেখা— সে দিনই খবরের কাগজে তাঁর ইস্টবেঙ্গলের কোচ হওয়ার খবরটা বেরিয়েছে। অভিনন্দন জানালাম। আমার মোহনবাগান-প্রীতি তাঁর অজানা ছিল না। অভিনন্দনের উত্তরে শান্ত বললেন, ‘আপনি সৎব্রাহ্মণ, আশীর্বাদ করুন, মোহনবাগান ছাড়া সব দলকে যেন হারাতে পারি।’
বলাইচন্দ্র চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৪
রাতে গাড়ি নেই
সম্প্রতি ইডেনে আইপিএল ম্যাচ দেখে ছেলেকে নিয়ে রাত ১২টার সময় ধর্মতলায় এসে কোনও বাস পাইনি। অথচ কথা ছিল, খেলার পর বাস পাওয়া যাবে। ট্যাক্সি এবং অন্যান্য ভাড়ার গাড়ি উল্টোপাল্টা টাকা হাঁকছিল। শেষে ট্রামে করে ফিরতে হল। এ ব্যাপারে আমি পরিবহণ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শৈবাল ঘোষ, কলকাতা-৫০
জর্জ ইভরেস্ট
হিমালয়ে সাগরমাথা শৃঙ্গটি জন্মের পর প্রথম দু’কোটি বছর বেশ শান্তিতেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাপজোক করে যখন দেখা গেল তা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ এবং তার একটি সাহেবি নাম দেওয়া হল, ‘মাউন্ট এভারেস্ট’, তখন থেকে তার শান্তি যাওয়া আরম্ভ হল। যে সাহেবের নামে শৃঙ্গটির নাম, তিনি নিজের নাম বলতেন ‘জর্জ ইভরেস্ট’। অতি বদরাগী এই সাহেবকে কেউ ‘এভারেস্ট’ সম্বোধন করলে তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হতেন ও ভুল শুধরে দিতেন। প্রায় দেড়শো বছর ধরে নিজের নামের ভুল উচ্চারণ শুনে তাঁর আত্মিক রাগ নিশ্চয় আজ শৃঙ্গটির থেকেও গগনচুম্বী।
অতনু ভট্টাচার্য, কলকাতা-২
বৃহদারণ্যক
মেধাবী গুণী পুত্রসন্তান প্রাপ্তির বিশুদ্ধ পদ্ধতি অনেক আগেই ‘বৃহদারণ্যক উপনিষদ’-এর খিলকাণ্ড অংশে দেওয়া আছে। তাতে ফরসা ছেলে, মেধাবী বেদপারঙ্গম কালো ছেলে, সব কিছুর জন্যে ব্যাপক নিদান দেওয়া আছে। খামখা প্রচারকরা আয়ুর্বেদের থেকে ধার নিচ্ছেন (‘সবার কোলেই শিবাজি’, ১৩-৫)।
উপনিষদ হল জ্ঞানকাণ্ডের আধার; বৃহদারণ্যক তার মধ্যে প্রথম সারিতে। তাই আমি উদাহরণস্বরূপ একটি শ্লোক উদ্ধৃত করছি। ‘‘আর যিনি ইচ্ছা করেন যে, ‘আমার পণ্ডিত, বিখ্যাত, সমিতিঙ্গম ও রমণীয় বাক্যের বক্তা পুত্র জাত হউক, সে সর্ববেদ অধ্যয়ন করুক এবং পূর্ণায়ু প্রাপ্ত হউক’, তিনি তরুণ বা অধিক বয়স্ক বৃষভের মাংসের দ্বারা পলান্ন রন্ধন করাইয়া (স্বামী ও স্ত্রী) দু’জনে আহার করিবেন। (তাঁহারা ঐরূপ) সন্তানোৎপাদনে সমর্থ হন।’’ খিলকাণ্ড, ষষ্ঠোধ্যায়, চতুর্থ ব্রাহ্মণ। (৬/৪/১৮)। উপনিষৎ গ্রন্থাবলি, তৃতীয় ভাগ, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত। (উদ্বোধন কার্যালয়, কলিকাতা-৩। পঞ্চম সংস্করণ, শ্রাবণ, ১৩৮০)
রঞ্জন রায়, কলকাতা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy