Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

গরমের শুরুতেই যে ভাবে জলসংকট এ রাজ্যেও থাবা বসিয়েছে তাতে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি-সহ দক্ষিণের উদাহরণ মেনে আমাদেরও বাড়তি সতর্কতা গ্রহণের সময় এসেছে (‘জলসংকটে লড়বে যোগী সরকার’, ১৭-৫)।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

জল অপচয় বন্ধ হোক

গরমের শুরুতেই যে ভাবে জলসংকট এ রাজ্যেও থাবা বসিয়েছে তাতে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি-সহ দক্ষিণের উদাহরণ মেনে আমাদেরও বাড়তি সতর্কতা গ্রহণের সময় এসেছে (‘জলসংকটে লড়বে যোগী সরকার’, ১৭-৫)।

কী সেই সতর্কতা? ‘জল ধরো-জল ভরো’র মতো পুরনো প্রকল্পের পুনরুত্থান একান্ত জরুরি। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশির ভাগ জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার দ্রুত কমছে। তার ওপর শহর ও গ্রামে যত্রতত্র মটরচালিত পাম্প ও শ্যালো মেশিনের সাহায্যে যত খুশি ভৌমজল তুলে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া শহর মফস্সলের সর্বত্র নতুন নতুন উচ্চ শক্তি সম্পন্ন পাম্পের সাহায্যে লক্ষ-কোটি গ্যালন জল তুলে বহুতলের ট্যাঙ্ক ও পাড়ায় পাড়ায় সদ্য গজিয়ে ওঠা জল-কারখানায় ব্যয় করা হচ্ছে। এমন অবিবেচকের মতো আচরণ বাংলাকে নির্জলা করে ছাড়বে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, যোগী সরকারের মতো কোনও বাড়ি বা সরকারি ভবন নির্মাণের নকশায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকলে যেন বাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র না দেওয়া হয়। আর ভূগর্ভস্থ জল তুলে হাবিজাবি রাসায়ানিক মিশিয়ে চড়া দামে সেই জল ‘মিনারেল ওয়াটার’ নামে বিক্রি করার ওপর অবিলম্বে লাগাম পরানো দরকার, না হলে পশ্চিমবঙ্গও অদূর ভবিষ্যতে পানীয় জলের তীব্র সংকটে ভুগবে!

সঞ্জীব রাহা কৃষ্ণনগর, নদিয়া

শিক্ষকদের নিয়ে

বছরের গোড়াতেই রাজ্য সরকার আয়োজিত নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের শিক্ষা সম্মেলনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কলেজ শিক্ষকদের জন্য একগুচ্ছ সুবিধা ঘোষণা করেছেন। যার সবগুলিই ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে, শিক্ষক সমাজ বলতে কেবল ‘কলেজ শিক্ষক’দের বোঝায় না। ‘স্কুল শিক্ষক’ ব্যতিরেকে ‘বৃহত্তর শিক্ষক সমাজ’ অসম্পূর্ণ। স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে এ ধরনের একটি শিক্ষা সম্মেলন রাজ্য শিক্ষা দফতর আয়োজন করবে, এমনটা শোনা গেলেও এখনও কোনও তারিখ ঘোষণাই হয়নি। তা হলে কি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী স্কুল শিক্ষকদের কথা ভুলে গেলেন!

সামাজিক ভারসাম্য আনয়নে কলেজ শিক্ষকদের সুবিধার কিছু অনুসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি— এক, ঘোষিত সুবিধাগুলি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় স্কুল শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হোক। দুই, কলেজ শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬২ হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই কলেজ সার্ভিস কমিশন মারফত সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বয়সসীমা বাড়ানো প্রয়োজন। তা হলে উচ্চশিক্ষিত চাকরি-প্রার্থীদের অসন্তোষ দূর হবে। সাধারণ ক্যাটেগরির বয়সের উর্ধ্বসীমা ৩৭ বৎসর। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ প্রার্থীদের ৪২ বৎসর, সংরক্ষিত প্রার্থীদের ৪৫ বা ৪৭ বৎসর করা দরকার। তিন, স্কুল শিক্ষকদের সেই অর্থে কোনও পদোন্নতি নেই। উপযুক্ত যোগ্যতামান সম্পন্ন স্কুল শিক্ষকদের ৫০ বৎসর বয়স পর্যন্ত কলেজ শিক্ষকপদে আবেদনের সুযোগ রাখলে শিক্ষার চর্চা ও উৎকর্ষতা উভয়ই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গুরুত্ব পাবে। চার, পাঁচ বৎসরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সহ-শিক্ষকদের প্রধানশিক্ষক পদে বিবেচনা করলে প্রধানশিক্ষকের শূন্যপদ দ্রুত পূরণ হবে, প্রতিযোগী সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উৎকর্ষ যাচাইয়ে সুবিধা হবে। পাঁচ, আট বা দশ বৎসর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সহকারী শিক্ষকদের ‘অ্যাসোসিয়েট টিচার’ করা যায়। ছয়, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের মতো রাজ্যের ক্ষেত্রেও, প্রধান শিক্ষক পদটির নাম ‘প্রিন্সিপাল’ বা ‘অধ্যক্ষ’ হলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে সমতা বিধান হবে।

সাবির চাঁদ রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ

এটিএম-এ বিপদ

সম্প্রতি ঘাটাল মহকুমার দাসপুরের গৌরা সংলগ্ন সিনেমা মোড়ে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের রক্ষীবিহীন এটিএম-এ ভাঙচুর হয় (দুষ্কৃতীদের নজরে... ২২-৫)। কিছু দিন আগে খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকায় প্রহরীবিহীন এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম ভেঙে লুঠ হয়েছিল ২২ লক্ষ টাকা। সিসিটিভি ক্যামেরাও ভেঙে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। খরচ কমাতে কর্মী সংকোচন করছে ব্যাঙ্কগুলি, তারই জেরে এটিএম-এ রক্ষী সংখ্যা কমাচ্ছে। ফলে রাতে রক্ষীবিহীন এটিএম-এ ভাঙচুর, টাকা লুঠ হচ্ছে, এটিএম-এ গ্রাহকরাও বিপদে পড়ছেন। ব্যাঙ্ক-পরিষেবার মানও নিম্নগামী হচ্ছে।

গৌরীশঙ্কর দাস সম্পাদক, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরাম, পশ্চিমবঙ্গ

তালাক থাকুক

সুপ্রিম কোর্ট যদি তিন তালাক প্রথাকে অসংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয়, তা হলে মুসলমানদের বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিয়ে কেন্দ্র নতুন আইন আনবে। সেই নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছে (‘তিন তালাক বাতিল হলে নতুন আইন’, ১৬-৫)। তালাক নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে বিতর্ক।

কী হিন্দু কী ইসলাম, সব ধর্মের কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। তবে ধর্ম যখন তার অতিসক্রিয়তায় বা অপব্যবহারে মানবিকতার পথে বাধা হয়ে ওঠে, তখনই প্রয়োজন তার সংস্কারের। এ জন্যই কালে কালে বিভিন্ন মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে হিন্দু ধর্মে শেষ কয়েক শতাব্দীতে যত সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটেছে মুসলমান ধর্মে তেমনটা ঘটেনি। হিন্দু সংস্কারকদের হিন্দু ধর্মের ভেতর থেকেই বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর তাই এখন, বিজেপি’র মতো হিন্দু সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়া রাজনৈতিক দল যখন মুসলমানদের এক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মাতব্বরি করে, তখন মুসলমানরাই বা মানবে কেন? এ জন্য বিজেপিই দায়ী, কারণ বিজেপি এখনও নিজেদের ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি; সুতরাং কেন্দ্রের এই উদ্যোগ মুসলমানদের ওপর জোর করে একটা উপায় চাপিয়ে দেওয়ার আদেশ না তাঁদের প্রতি দরদ, তা বোঝা যাচ্ছে না।

সমস্যাটা আসলে তালাকের অপব্যবহার নিয়ে। মুসলমানদের ধর্মে সবচেয়ে ঘৃণ্য শব্দ ‘তালাক’। কিন্তু তবুও ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে তালাক দেওয়ার ঘটনা আমরা শুনতে পাই। মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছিল স্বামী স্ত্রীর, কথায় কথায় ঝগড়া করে মোবাইলেই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন স্বামী, (‘ফোনে তিন তালাক দিয়েও ঘরে ফেরালেন স্ত্রীকে’) কিন্তু এর পরেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি। এ দিকে সেই স্বামী চান নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করতে, কিন্তু ইসলামের আইন তা মানে না। নিকাহ্ করতে হলে আগে অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে তিনি স্ত্রী-র বিয়ে দিয়ে তার পর তালাক দেবেন, তবেই স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবেন আগের স্বামী। কিন্তু এই স্বামীটি তা মানেননি, তিনি স্ত্রীর সঙ্গে সুখেই ঘর করছেন। গ্রামের মৌলবিও তাঁদের মেনে নিয়েছেন, শুধু দাবি জানিয়েছেন, স্ত্রীর নামে দেড় কাঠা জমি কিনে দেওয়ার। এই ঘটনাটি তালাক নিয়ে এত বিতর্কের মাঝে একটা দৃষ্টান্তের মতো। অনেক কিছুই তো ইসলামে নিষিদ্ধ, যেমন ছবি তোলা নিষিদ্ধ, কিন্তু হজে গেলে পাসপোর্ট, ভিসার জন্য ছবি তো তুলতে হয়; গান নিষিদ্ধ, কিন্তু মহম্মদ রফি’কে নিয়ে আমাদের গর্ব কম হয় না। এমন অনেক কিছুই আমরা মানি না, তা হলে তালাক নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন?

মেরুকরণের রাজনীতিতে ফেলে তালাক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, এ ব্যাপারে চাই মুসলমানদের মধ্যে থেকে সচেতনতামূলক প্রচার। বিবাহ যেমন আছে, তেমনি তালাকও থেকে যাবে। কিন্তু বন্ধ করা উচিত এর অপব্যবহার। এ ক্ষেত্রে তালাকের মাধ্যম হতে পারে আদালত। কেউ যদি তালাক দিতে চায় তা হলে নিয়ম করা হোক, তা আদালতে আবেদনের মাধ্যমে বিচারপতির রায়ের উপর নির্ভর করে হবে। সরকার দ্বারা অনেক স্থানেই মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অ্যান্ড কাজি, নিযুক্ত আছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের মাধ্যম করা যেতে পারে। ইসলামের মধ্য থেকেই ইসলামের সংস্কার সম্ভব।

ফিরোজ আলি কাঞ্চন গলসি, বর্ধমান

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE