বাংলার কাশ্মীর?
• ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কালিম্পং ২ নম্বর ব্লকের এক জন অফিসার ছিলাম। আমার প্রধান অফিস ছিল দার্জিলিং। তখনকার দার্জিলিং জেলার আটটি ব্লকেই যাতায়াত করেছি।
তখনও রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী আসতেন দার্জিলিঙে, মহকুমায় এবং ব্লকে। আমাদের ব্লকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় আমাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। রাজ্যপাল এ এল ডায়াসও পরিদর্শন করেছেন আমাদের কর্মস্থল। তখন পাহাড়ে ছিল পরম শান্তি।
১৯৮০ সাল থেকেই পাহাড়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়। তখন বামফ্রন্ট আমল। শাসক দলের প্রশ্রয়ে নেতা বনে যান সুবাস ঘিসিঙ্গ। তখন বিমল গুরুঙ্গই ছিলেন ঘিসিঙ্গের ডান হাত। পরে ঘিসিঙ্গকে বনবাসে পাঠিয়ে দার্জিলিঙের সম্রাট হয়ে বসলেন গুরুঙ্গ।
২০১৪ সালে গিয়েছিলাম লোলেগাঁও-এ। ১৯৭৩ সালে আমার ব্লক থেকে ৭ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হত সেখানে। তেলের সলতের আলোয় রাতে কাজ করতেন বাসিন্দারা। ২০১৪-য় গিয়ে দেখলাম বিদ্যুতের আলো, দামি হোটেল, রেস্তোরাঁ সবই হয়েছে। পুরো টুরিস্ট সেন্টার। গাড়িতেই যাতায়াত করা যাচ্ছে সেখানে। কেবল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্থাপন করা হোটেল, টুরিস্ট লজগুলিকে জঙ্গি আন্দোলনে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
আবারও পাহাড়ে আগুন জ্বলছে। জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। টুরিস্টরা চরম বিপাকে। রাজনীতিকরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কী বীজ তাঁরা বুনেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কোনও দলেরই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে মদত দেওয়া মোটেই ঠিক হবে না। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখা সব দলের দায়িত্ব। দেখতে হবে, দার্জিলিং যেন পশ্চিমবঙ্গের কাশ্মীর না হয়ে যায়।
সুভাষ সরকার
কলকাতা-৩৫
উন্নতি কাকে বলে
• বিভিন্ন সূত্র থেকে কৃষিতে রকেট লাঙল-এর ব্যাপক ব্যবহারের খবর চোখে পড়ছে। একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানাতে চাই। আমি বীরভূম জেলার বোলপুর থানার অন্তর্গত রাইপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৯০ সালে আরামবাগ থেকে বোস ফাল বা বোস লাঙল (যা বর্তমানের রকেট লাঙলের অনুরূপ) আনাই, তার পর গ্রামের মিস্ত্রি হিতেন মুদিকে দিয়ে তাকে চাষযোগ্য করে তুলি। লাঙলের ফ্রেমটি তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। অচিরেই লাঙলটির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। জমি চষার সময় আশেপাশের চাষিরা নিজেদের কাজ ফেলে বোস লাঙলের কাজ দেখতে ভিড় জমাত। চাষের পর জমি দেখে মনে হত, কোদাল করে মাটি কেটে সাজিয়ে রাখা আছে। দিন দিন বোস লাঙল নিয়ে সকলের কৌতূহল ও আগ্রহ বাড়তে থাকে। অনেকে অনুরোধ করায় আমি মেদিনীপুর থেকে হাজারখানেক বোস ফাল আনিয়ে সরবরাহ করি । ধীরে ধীরে বোলপুরের ব্যাবসায়ীদের মধ্যেও এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বোস ফাল এক দিকে মাটি কেটে ফেলত। আজকের ‘রকেট লাঙল’ দু’দিকে মাটি কেটে ফেলতে সক্ষম। এই তো উন্নতি।
শ্যামল দালাল
রাইপুর, বোলপুর, বীরভূম
বিপন্ন শৈশব
• ‘চাপ কি কম পড়িয়াছে?’ শীর্ষক প্রবন্ধে (১৫-৬) অমিতাভ গুপ্ত আইসিএসই বোর্ড কর্তাদের সত্যি একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, ক্লাস ফাইভেই যদি বোর্ড পরীক্ষা চালু করা হয়, তা হলে ওইটুকু বাচ্চাগুলোর কী অপরিসীম চাপ বেড়ে যাবে। কতটুকু চাপ না দিলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে না আর কতখানি চাপ দিয়ে ফেললে তাদের নাভিশ্বাস ওঠে, তারা কাহিল হয়ে পড়ে— অনেক অভিভাবকই এখনও সেই ভারসাম্য বজায় রাখতে তেমন দড় হয়ে ওঠেননি। স্কুল আর বোর্ডের চাপ সরাসরি অভিভাবক থেকে ছাত্রছাত্রীতে সমান্তর প্রগতিতে বৃদ্ধি লাভ করে। ফলে বইয়ের ব্যাগটা এখন আর শুধু বড্ড ভারীর পর্যায়েই নেই, এতই ভারী যে ওইটুকু বাচ্চা তো দূর অস্ত, মা-বাবারাও হিমশিম খাচ্ছেন তা বইতে গিয়ে। শিক্ষকদের যোগ্যতা ও ধারাবাহিকতা যাচাইয়ের আরও অনেক রাস্তা আছে। বাচ্চাগুলোকে রেহাই দিন।
আবু তাহের
ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ।
অভিভাবক
• তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হতে পারেন। আমাদের এই হতভাগ্য রাজ্যের জন্য এমনই এক জন অভিভাবকের প্রয়োজন ছিল। তিনি একের পর এক জেলা সফর করছেন। প্রশাসনিক বৈঠক করছেন। তাঁর নখদর্পণে থাকে সমস্ত হিসেব, কাজ-কর্মের খতিয়ান। সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিক, জেলা শাসকবৃন্দ এখন রীতিমত ‘হোমওয়ার্ক’ করছেন তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসবার আগে। তাই, অহেতুক স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য কোথাও যদি বিশাল অঙ্কের টাকার দাবি করা হয়, তিনি সরাসরি বলে দিতে পিছপা হচ্ছেন না যে এই অঙ্কটা বড্ড বেশি। বেসরকারি স্কুলগুলোর ডোনেশান এবং ফি নিয়েও তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অনতিবিলম্বে ত্রি-ভাষা স্তর চালু করার নির্দেশ দিলেন যার মধ্যে ‘বাংলা ভাষা’কে রাখতেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে খেপে উঠল মোর্চা বাহিনী। ভরা পর্যটক মরশুমে মোর্চার এই দাদাগিরি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল পাহাড়ের প্রশাসন। আশা করা যেতেই পারে, এই ক্ষেত্রেও তিনি ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ভূমিকা নেবেন।
তিনি এখন রাজনীতিতে অনেক পরিণত। আমজনতা এখন অনুরোধ করতে পারেন, বাড়াবাড়িটা বন্ধ হোক। ছুটির বহর কমুক। উৎসবের নামে মোচ্ছব বন্ধ হোক। পাড়ায় পাড়ায় তাঁর দলীয় সমর্থকদের দাদাগিরি বন্ধ হোক। যে কোনও নিয়োগে রাজনীতি বা বকলমে ঘুষ নেওয়া নিষিদ্ধ হোক। যেহেতু, তাঁর কাছে সব খবরই যায়, তাই তিনি ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হলে আখেরে পশ্চিমবঙ্গেরই লাভ। প্রচারের ঢক্কানিনাদে তিনি বিশ্বাসী নন। আমরাও চাই, আগত ২১ জুলাইয়ের সভা যেন লড়াইয়ের রণক্ষেত্র না হয়।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী
কলকাতা-১২৫
বাংলা ও বাঙালি
• গত কয়েক দিন ধরে ‘সম্পাদক সমীপেষু’তে মাতৃভাষা নিয়ে উদ্বেগের চিঠি পড়লাম। আমার পেশা এখন বাঙালিকে বাংলা শব্দ শেখানো। যাঁরা তাঁদের নিজস্ব পেশায় প্রতিষ্ঠিত, এমন চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত কয়েক জন উৎসাহী তরুণতরুণী আমার ছাত্রছাত্রী। ‘প্রত্যাশা’, ‘প্রেক্ষিত’, ‘প্রেক্ষাপট’, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’, ‘চলচ্চিত্র প্রযোজনা’, ‘টানাপড়েন’, ‘ধারাবাহিকতা’, ‘প্রবহমানতা’— এই শব্দগুলি তাঁদের কাছে অপরিচিত। শব্দগুলির মানে ইংরেজিতে বলে দিতে হয়। এই সব বাঙালি বাংলা চিঠি লিখতে পারেন না। শ্রুতিলিখনে ডাহা ফেল।
প্রসঙ্গত, রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের ছোট্ট ঘরে অভিনেতা দেবেশ চক্রবর্তী (এলটিজি) আজও, পঁচাশি বছর বয়সে, নাটকের সংলাপ পড়া এবং আবৃত্তি করা শেখাচ্ছেন। সেখানেও অল্পসংখ্যক ছাত্র। এ রকম আরও অনেক স্পোকেন বেঙ্গলির স্কুল প্রয়োজন। ইংরেজি ও হিন্দির আধিপত্যে বাংলা ভাষার অবলুপ্তির আশঙ্কা থেকেই যায়।
বিমল দেব
কলকাতা-৮৪
বিদেশের মাটি
• পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট নদী নিয়ে ইউরোপের প্রশংসায় লেখা হয়েছে, বাঁধানো রাস্তার কোথাও মাটি বা পাতা নেই (‘এমন বিদেশটি...’, সম্পাদক সমীপেষু, ১৩-৬)। ইউরোপে রাস্তার পাশে গাছের নীচে মাটি ও বড় বড় অনেক সবুজ পার্ক দেখেছি। মাটি, পাতা না থাকার দুর্ভাগ্য যেন কোনও দেশের, কোনও রাজপথের না হয়। ইউরোপে শিক্ষণীয় হল প্রাচীন সব সৌধের সুরক্ষা, নিয়মশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার। জনসংখ্যা কম, দূষণ নিয়ন্ত্রিত, সকলে সময়নিষ্ঠ।
অর্চনা বন্দোপাধ্যায়
ফুলু, ডিয়ার পার্ক, শান্তিনিকেতন
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy