‘সাইকেল-শহর’ হবে কলকাতা?
পেট্রল-ডিজেলের ব্যবহার (অনেক ক্ষেত্রে অপচয়) হ্রাস করার বিকল্প হিসাবে সাইকেল ব্যবহারের যথেষ্ট যুক্তি আছে। আবার কলকাতার রাস্তায় সাইকেল ব্যবহারের বহুবিধ অসুবিধা, নানা রকম বাধা-নিষেধ, রাজনৈতিক ফন্দি-ফিকির— এ সবের জটিলতাও কম নয়। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, কলকাতার রাস্তার আয়তন ও পরিমাণ বাড়ার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকগুণ বেশি। যানবাহন বাড়ছে বটে, কিন্তু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাড়ছে না সে ভাবে, বাড়ছে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাড়ার বদলে বরং কমছে। অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম আর জ্বালানির উচ্চ মূল্যের কারণে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সঙ্গে কলকাতার ওপর প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ। জ্যামজমাট কলকাতায় ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টার বেশি। ফলশ্রুতি, প্রতি দিন নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ শ্রমঘণ্টা, অপচয় হচ্ছে গ্যালন গ্যালন জ্বালানির, সেই সঙ্গে বিষাক্ত পরিবেশে মানুষ হারাচ্ছে জীবনীশক্তি।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বেহাল দশায় মেট্রো রেল কিছুটা হাল ধরলেও সমস্যার সমাধান সে ভাবে হয়নি। হাইটেক যুগে কলকাতার মতো মহানগরীতে সাইকেল ব্যবহার ‘সেকেলে’, ‘পিছিয়ে পড়া’ মনে হলেও বাস্তবতার নিরিখে এটিই পরিত্রাণের মোক্ষম উপায়। অন্তত কিছু কিছু প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ দেশে সাইকেলের ব্যবহার আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। চিন, ভিয়েতনাম, হংকং-এ বাই-সাইকেলের ব্যবহার অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও সাইকেল ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতে সাইকেলের ব্যবহারকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। চিনের কারখানাগুলোর সামনে বিশাল জায়গা জুড়ে হাজার হাজার সাইকেল দেখা যায়। কারণ, সেখানে অনেকেই গাড়ি কেনার সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও সাইকেল ব্যবহার করেন।
এ প্রসঙ্গে ডেনমার্কের কথা না বললেই নয়। অফিশিয়ালি এই দেশটিকে ‘সাইকেলের দেশ’ বলা হয়। কোপেনহাগেন শহরের ১৬ শতাংশ ভ্রমণ হয় শুধু সাইকেলে। প্রত্যেক ডেনিশ নাগরিক গড়ে প্রতি দিন ১.১ কিমি সাইক্লিং করেন।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বেহাল দশা থেকে কলকাতার মুক্তি আদৌ সম্ভব কি না জানা নেই। তার চেয়ে সরকার যদি সাইকেল চালানোর আলাদা রাস্তা নির্মাণে সচেষ্ট হয়, তা হলে সাইকেলের ব্যবহার জনপ্রিয় হতে পারে। তবে সবই নির্ভর করছে প্রশাসনিক সদিচ্ছা, নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর। আর সরকারের দূরদর্শিতা ও জনকল্যাণের ভাবনা থেকে থাকলে আগামী দিনে দূষণমুক্ত, প্রাণশক্তিতে ভরপুর কলকাতা উপহার দেওয়ার জন্য সাইকেল ব্যবহারের উপযোগী রাস্তা তৈরিতে সরকার নিশ্চয়ই উদ্যোগী হবেন। তাতে জ্বালানির অপচয় বন্ধ হয়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত অনিশ্চয়তা থাকবে না। আর কে না জানে সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী!
অমরনাথ কর্মকার কলকাতা-১৫০
সুদিন এল কি
সবুজ বিপ্লব নিয়ে অমিতাভ ঘোষ-এর লেখা পড়লাম (সম্পাদক সমীপেষু, ৪-৬)। তবুও কিছু কথা বাকি থেকে যায়। সবুজ বিপ্লবকে অস্বীকার করব কী করে? ১৯৫০-৫১ সালে দানা শস্য উৎপাদন হয়েছিল ৫১০০০ টনের মতো, ২০১৪-১৫ সালে তা হয়েছে ২৫২০০০ টন। সন্দেহ নেই, সবুজ বিপ্লবের রাস্তা মেনেই তা হয়েছে। এ ছাড়া গাছ তো ‘এন পি কে’ নেয় রাসায়নিক আয়ন হিসেবে। তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। পেস্টিসাইড দেওয়া হত কনট্যাক্ট এবং সিস্টেম-এর ভিত্তিতে। শুরুতে খুব ম্যাজিক-এর মতো কাজ হয়েছিল। এন পি কে আয়ন সরাসরি পেয়ে গাছ ফলে-ফুলে বৃদ্ধি পেল। পোকা-জীবাণু কীটনাশক বা ওই জাতীয় পদার্থের কনট্যাক্ট-এ এসে (কিংবা সিস্টেম-এ গিয়ে) মরতে লাগল। গবেষকরা নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করলেন। চাষিরা খুশি হলেন। ফলন বেড়েছে। সুদিন এসেছে। এই তো ছিল সবুজ বিপ্লব। তার পর? চাষিরা প্রাথমিক সাফল্য পেয়ে অতি উত্সাহিত হয়ে পড়লেন। জমিতে অঢেল সার দিতে লাগলেন। অতিরিক্ত কীটনাশক শস্য ও জমিকে বিষাক্ত করে তুলল। কেউ মানা করেনি। শুধু বলেছে আরও দাও। নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ পাওয়ায় চাষিরা ভুলে গেলেন পুরনো বীজের ভাণ্ডারকে। লুঠ হয়ে গেল পুরনো সব জাত যারা এক সময়ে ১২-১৩ মণ ফলন দিত। কুড়ি বছর আগে ১ কেজি সার দিলে ১৭-১৮ কেজি শস্য দানা পাওয়া যেত। এখন সেখানে ৩-৪ কেজি দানা পাওয়া যায়। জমি লুঠ হয়ে যাচ্ছে। বহু অনুখাদ্য জমি থেকে শেষ হয়ে গিয়েছে। ‘কার নিন্দা কর তুমি, এ আমার এ তোমার পাপ’। নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।
পরিতোষ ভট্টাচার্য প্রাক্তন অধিকর্তা, ন্যাশনাল সেন্টার অব অরগানিক ফার্মিং
অ-রাজনৈতিক!
যে দিন এ রাজ্যে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে ‘অরাজনৈতিক’ ছাত্র সংসদ গঠনের নির্দেশিকা জারি হল (৬-৬), কী আশ্চর্য সমাপতন, ওই লগ্নেই অন্তর্জাল জানাল, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ হওয়ার প্রতিবাদে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর (টিস) চারটি ক্যাম্পাসে তাদের সহপাঠী তিনশো ছাত্রছাত্রী ফি দিতে অস্বীকার করেছে। কিছু দিন পূর্বে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে টিস-এর ছাত্রছাত্রীরা যাতে কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখায় সেই মর্মে একটি নির্দেশিকা প্রসঙ্গে এক জন পাঠরতা প্রশ্ন করেন, সমাজ বিজ্ঞান পড়ে সে যদি সমসাময়িক সামাজিক সমস্যা নিয়ে কোনও অবস্থান নেবে না, তা হলে সে যা জ্ঞান লাভ করছে তা কিসের জন্য? উপরের ঘটনাক্রমে সরাসরি রাজনীতি না থাকলেও গভীর সমাজবোধ পরিলক্ষিত হয়, যা অনাগতকাল নিয়ে আশাবাদ জাগায়। এই প্রেক্ষিতে একদা ছাত্র রাজনীতির পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ গঠনের কারণ কী? উচ্চশিক্ষায় রাজনীতি-মুক্ত ক্যাম্পাস কি সোনার পাথর বাটি নয়? এবং এটা কি আদৌ কাম্য?
ছাত্রদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে বিতর্ক সুপ্রাচীন। কিন্তু অষ্টাদশ/অষ্টাদশী, যারা উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্ত অতিক্রম করছে, তারা সবাই এ দেশের বৈধ ভোটার। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বৃহত্তর সমাজে তাদের রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে হয় ভোটদান করে। সুতরাং অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের আর যা-ই হোক, রাজনীতি মুক্ত করবে না।
একদা বুদ্ধদেব শিষ্য আনন্দকে বজ্জি গণরাজ্যে নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের প্রথা চালু আছে কি না জানতে চান। ইতিবাচক সাড়া পেয়ে বুদ্ধদেব স্বস্তির সঙ্গে বলেন যত দিন ওই এলাকার অধিবাসীরা নিয়মিত এই পারস্পরিক মত চর্চার ধারা বজায় রাখবেন, তত দিন কাশী বা কোশলের মতো বড় বড় রাজ্য তাঁদের দখলে আনতে পারবে না।
আমরা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের কোন নির্বাণের দিকে ধাবিত করছি?
দেবত্র দে কলকাতা-১২৩
রাসায়নিক চামড়া
অনেক বাদ্যযন্ত্রেই অনেক দিন ধরে পশুচামড়ার পরিবর্তে রাসায়নিক চামড়া জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে শব্দ গুণের খুব একটা পরিবর্তন না করেই (‘তবে ঢাকের কী হবে’, সম্পাদক সমীপেষু, ৯-৬)। অনেক ক্ষেত্রেই শব্দ গুণের নাকি উন্নতিই হচ্ছে। তবে ‘চড়াম চড়াম’ শব্দ আগে হত কি না, বা এখন হয় কি না জানা নেই। প্রসঙ্গত পাদুকা বা ফুটানি কা ডাব্বাদি তৈরিতেও পশুচামড়ার ব্যবহার অনেক কমে আসছে।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-৬১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy