নিয়ম নেই, শুনছে কে
সম্প্রতি আরও অনেক বাঙালি পরিবারের মতো আমিও সপরিবার দিঘা-মন্দারমণি বেড়াতে গিয়েছিলাম। স্কুলে স্কুলে গরমের ছুটি। স্বাভাবিক ভাবেই তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তবে পর্যটকের গাড়ির সংখ্যা বিচার করলে বলব নন্দকুমার থেকে দিঘা পর্যন্ত রাস্তাটা কিন্তু বেশ অপ্রশস্ত। সারা রাস্তাতে মোট তিন বার টোল ট্যাক্স দিতে হয়েছে। এত বার কেন, বোধগম্য হল না। আবার মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, অথচ এক ধরনের গাড়ি দিব্যি চলছে ব্যবসার কারণে। শ’খানেক মিটার একটা বাচ্চাকে চড়িয়ে দাবি করছে তিনশো টাকা। এটাকে মনে হয়েছে দিনে-দুপুরে ডাকাতি। এর পিছনে মধু-প্রত্যাশী আরও কেউ কেউ আছে নিশ্চয়। পর্যটন দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শুভংকর সাহা সিন্দ্রাণী, উত্তর ২৪ পরগনা
কেন করবিন
দীর্ঘ কাল ব্রিটেনে থাকার ফলে অনায়াসে বলতে পারি, এই ধরনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অনেক দিন হয়নি ব্রিটিশ জনগণের (‘বিনাশকালে’, সম্পাদকীয়, ১২-৬)। যে কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বলা সোজা যে, সিদ্ধান্তটি ঠিক ছিল বা ভুল ছিল। একেবারে সাধারণ রাজনীতি-সচেতন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বারের নির্বাচনের ফলাফলের কারণ অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি।
১) অবশ্যই সত্যি কথা যে টেরেসা মে’র হাতে ছিল তিন বছর এবং তাঁর অল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতাও ছিল। কিন্তু ব্রেক্সিটের ভোটে কোনও পক্ষেই হুইপ ছিল না, সুতরাং কনজারভেটিভ সাংসদ মানেই যে ব্রেক্সিটের দর কষাকষিতে টেরেসা মে-র পক্ষে ভোট দেবেন তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং টেরেসা মে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আরও মজবুত করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁর এই সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। তখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একমত ছিলেন যে কুড়ি পয়েন্টের লিড থাকলে হাসতে হাসতে জিতবেন টেরেসা মে। সবাই তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার তারিফ করেছিল।
২) জেরেমি করবিন তখন নিজের দলের গৃহযুদ্ধে কাহিল। এমনকী তাঁর বন্ধু ট্রেড ইউনিয়নের নেতা লেন ম্যাকলাস্কিও বলেন যদি লেবার ২০০টা সিট পায়, তা হলেই নৈতিক জয়! ২৬২ সিট পাওয়ার স্বপ্ন জেরেমি করবিনও দেখেননি কখনও। এমতাবস্থায় ভোট করে নিজের কর্তৃত্ব বাড়িয়ে ব্রেক্সিটের দরাদরিতে বসাই শ্রেয়— এ তো রাজনীতির একেবারে গোড়ার কথা! মে সেটাই করেছেন।
৩) তরুণদের ভোট জেরেমি করবিন পেয়েছেন, সত্যি কথা। কেন? ব্রিটেনে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া এক ব্যয়বহুল ব্যাপার। এক জন সাধারণ চাকুরের মাইনে মাসে ১৩০০ থেকে ১৫০০ পাউন্ড। ঠিক ততটাই খরচ প্রতি মাসে ইউনিভার্সিটিতে। সুতরাং বেশির ভাগ চাকুরিজীবী বাবা-মায়ের পক্ষে ছেলেমেয়েকে পড়ানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ জন্য ধার নেওয়াই রীতি। কনজারভেটিভ আমলে খরচ বেড়েছে আর লেবারের প্রতিশ্রুতি ‘পড়া আমাদের জন্মগত অধিকার, সুতরাং ইউনিভার্সিটিতে পড়া ফ্রি!’ অবশ্যই এই বিপুল টাকা ধার নেওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে চাকরি পেলে ধীরে ধীরে শোধ করা যায়। কিন্তু ভেবে দেখুন, যখন ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে চাকরি আরম্ভ করলেন তেরোশো পাউন্ড মাসমাইনেতে, দেখলেন যে আপনার নামের পাশে ধারের অঙ্ক পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড— সংসার করে কত দিনে এ অর্থ শোধ হবে? প্রশ্ন তোলাই যায় ইউনিভার্সিটিতে পড়লে খরচ তো হবেই! কিন্তু ঠিক তা নয়। স্কটল্যান্ডেই ইউনিভার্সিটি শিক্ষা স্কটিশদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি। সরলীকৃত উপসংহার হল, করবিন সাহেব শিক্ষা নিয়ে এই রাজনীতি বুঝতে পেরেছেন, টেরেসা মে পারেননি। কিন্তু একটু গভীরে ঢুকলে দেখা যাবে টেরেসা মে এই অসাম্য দূর করতেই চাননি, বামপন্থী করবিন চেয়েছেন।
এ বার দেখি বয়স্কদের ভোট। বয়স্করা কনজারভেটিভদের বিশ্বস্ত ভোটার। কিন্তু কনজারভেটিভ ম্যানিফেস্টো বলল, এ বার এক নতুন ট্যাক্স চালু হবে। কুখ্যাত ‘ডিমেনশিয়া ট্যাক্স’। সহজে বলতে গেলে, যদি আপনি নিঃসম্বল হন, তা হলে বৃদ্ধ বয়সে আপনার দেখাশোনা করবে সরকার, কিন্তু যদি আপনার অর্থসম্বল থাকে তা হলে সেই একই পরিচর্যা আপনি পাবেন আপনার অর্থের বিনিময়ে। এর পর যোগ হল আর একটি প্রস্তাব। অনেক সঞ্চয় করে একটা বাড়ি বানিয়েছেন ছেলে বা মেয়েকে দিয়ে যাবেন বলে, তা এখন সরকারের হস্তগত হবে আপনার সেই একই পরিচর্যার জন্য। এমনকী আপনার জীবদ্দশাতেই! এইখানে টেরেসা মে হারালেন তাঁর বিশ্বস্ত বয়স্ক ভোটারদের। সারা জীবনের সঞ্চয় সরকার নিয়ে নেবে, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না তাঁরা। বলা ভাল, ব্যবস্থাগুলি সব ক’টাই ইংল্যান্ডে, স্কটল্যান্ডের কোনওটাই লাগু হবে না। ফল? স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ পার্টি ভাল ফল করল, নইলে ব্রিটেনে কনজারভেটিভ পার্টির আর সরকার গঠনের খোয়াব দেখতে হত না।
৪) জেরেমি অন্তত একটা আর্থিক হিসেব দিয়েছেন তাঁর ম্যানিফেস্টোতে, কনজারভেটিভ সরকার কোনও হিসেবনিকেশের ধারই ধারেনি। কোনও জমাখরচের কথা নেই সে চটি বইয়ে। জেরেমি করবিনের নীতি খুব সাধারণ। যার বেশি টাকা তার ট্যাক্স বেশি। ফলে তাঁর রবিনহুডের মতো নীতিগুলো লোকের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে অনেক বেশি। আসলে তিনি তাঁর সোশ্যালিস্ট চিন্তাধারা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পেরেছেন। টেরেসা মে পারেননি। জনগণ আমার পকেটে আছে— এই বিশ্বাস যে কোনও রাজনৈতিক নেতাকে ডোবাতে বাধ্য, টেরেসা মে-ও ব্যতিক্রম নন। আর সস্তা জাতীয়তাবাদ? মনে রাখতে হবে, জেরেমি করবিন কিন্তু অভিবাসন বিরোধী নন, বরং কনজারভেটিভরাই বেশি চিন্তিত অভিবাসন নিয়ে। সুতরাং জেরেমি করবিনকে সস্তা জাতীয়তাবাদী বললে সত্যের অপলাপ হয় মাত্র।
৫) কফিনের শেষ পেরেকটা পুঁতল ম্যানচেস্টার আর লন্ডনের টেররিস্ট আক্রমণ। বছর কয়েক আগে হোম সেক্রেটারি থাকার সময় পুলিশের সংখ্যা মারাত্মক কমিয়ে দেন টেরেসা মে। পুলিশের বড়কর্তারা উদ্বেগ জানালে সর্বসমক্ষেই কড়া ধমক দেন তিনি। এই দুই সন্ত্রাসের পর বার বার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁর পুলিশ কমানোর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না, আর তিনি রোবটের মতো বলে যান ‘পুলিশকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’ লোকে বিরক্ত হয়েছে তাঁর এই প্রশ্ন ডজ করে যাওয়ায়।
৬) সবশেষে বলি জেরেমি করবিনও কিন্তু নির্বাচনটি হেরেছেন। এমনকী কনজারভেটিভ পার্টি যদি আজ সরকার না গঠন করতে চায়, জেরেমিও পারবেন না। অঙ্কের নিয়মে জেরেমি করবিনের কোনও জয়ধ্বজা তোলার প্রশ্ন নেই। নৈতিক বিজয় তিনি দাবি অবশ্যই করতে পারেন, কিন্তু তা দিয়ে তো আর সরকার গঠন হয় না। তবে অন্তত তাঁর নিজের দলের মধ্যে আর বিদ্রোহ ঘোষণার সম্ভাবনা সামান্য কমল। সেটাই বা মন্দ কী?
শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায় ডান্ডি, স্কটল্যান্ড
নেড়া প্ল্যাটফর্ম
শিয়ালদহ উত্তরের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তিক স্টেশনটির নাম কৃষ্ণনগর সিটি জংশন। এই স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে সারা দিনে মাত্র দশ-বারোটি ট্রেন যাতায়াত করলেও এর মাথায় তিন-চারটি লম্বা টিনের শেড দেওয়া আছে। আবার চার-পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সারা দিনে মাত্র দুটি ট্রেন যাতায়াত করলেও তার মাথায় আছে এক অতি ঢাউস লম্বা টিনের শেড। অথচ দুই-তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের ডবল সংখ্যক (তেইশ-চব্বিশটি) ট্রেন চলাচল করলেও সেখানে মাত্র একটি পূর্ণ শেড ও একটি অর্ধেক শেড এই দুর্দান্ত রোদের বেলায় দাঁড়িয়ে থাকে, যাতে পুরো প্ল্যাটফর্মের একচিলতে জায়গাও ঢাকা পড়ে না। সামনে আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষায় ট্রেনে ওঠা-নামার সময় জলে ভেজা অথবা রোদে পোড়া অবশ্যম্ভাবী বলে মনে হয়। তাই আমাদের দাবি, অবিলম্বে দুই-তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের এক মাথা আকাশ ঢাকা পরুক টিন অথবা অ্যাসবেস্টসের শেডে।
সঞ্জীব রাহা পাডিয়া মার্কেট, হাইস্ট্রিট, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy