Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক চরমপন্থী দেশভক্তদের দেখলাম, যাঁরা দেশকে ভালবাসতে গিয়ে ভাষা-জ্ঞান ঠিক রাখতে পারেননি। ক্রিকেট-প্রেম আর দেশপ্রেম গুলিয়ে ফেলবেন না প্লিজ। আপনাদের দেশপ্রেম ফেসবুকেই ভাল থাকুক, প্রত্যেকের ভাললাগাগুলোও ভাল থাকুক।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০০:১৫
Share: Save:

ফেসবুকে দেশপ্রেম

ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ এলে আমাকে প্রত্যেক বার কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যেমন— ‘ভারত না পাকিস্তান, কাকে সাপোর্ট করবি?’ ‘ফেভারিট প্লেয়ার কে, বিরাট না আজহার?’ প্রশ্নগুলো শোনার পর বরাবর চুপ থাকি। যদিও প্রশ্নকারীদের বিশেষ করে আমাকে প্রশ্ন করার কারণ ও আকাঙ্ক্ষিত উত্তরগুলো সহজে আন্দাজ করা যায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ক্রিকেটের একাধিপত্যের চরম বিরোধী। যে বোর্ডের অনেকাংশই দুর্নীতিগ্ৰস্ত, যারা দল নির্বাচনের সময় দেশের আগে নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবে, যেখানে আইপিএল-এর দুটো টিমকে দুর্নীতির কারণে নির্বাসিত হতে হয়— সেই খেলাকে না ভালবেসেও দেশকে ভালবাসা যায়। খেলোয়াড়রা কোটি কোটি টাকা মাইনে পেয়েও আরও টাকা চান। সর্বোপরি খেলাটা মাত্র আট-দশটা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তার মধ্যে আবার আমরা প্রতিবেশী পাঁচ জন। কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক চরমপন্থী দেশভক্তদের দেখলাম, যাঁরা দেশকে ভালবাসতে গিয়ে ভাষা-জ্ঞান ঠিক রাখতে পারেননি। ক্রিকেট-প্রেম আর দেশপ্রেম গুলিয়ে ফেলবেন না প্লিজ। আপনাদের দেশপ্রেম ফেসবুকেই ভাল থাকুক, প্রত্যেকের ভাললাগাগুলোও ভাল থাকুক।

সেখ মহম্মদ আসিফ

হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

ভাষার দাবি

‘প্রাচীর নয়, সোপান’ (সম্পাদকীয়, ১৩-৬) পড়ে হতাশ হলাম। কোনও অনিচ্ছুক জনগোষ্ঠীর উপর জোর করে কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক, অসঙ্গত ও অন্যায়। পশ্চিমবঙ্গের শাসককুল এখন যদিও বলছেন পাহাড়ে বাংলা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না, কিন্তু দার্জিলিঙের আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে তাঁরা এ কথা বলেননি। আপনারা লিখেছেন, ‘ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই নীতি আছে।’ কিন্তু ভারতের একাধিক প্রদেশে যে ভাষাগত সংখ্যালঘুরা এই নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন, সেটা আপনারা লেখেননি। উদাহরণ হিসেবে, অসমের কথা বলা যায়। অসমে ১৯৬০ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার বিধানসভায় অসমিয়াকে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব-সহ একটি বিল পেশ করে। প্রবল বিতর্কের পর রাজ্যের বাঙালি ও অন্যান্য অ-অসমিয়া ভাষীদের অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করে বিলটি বিধানসভায় গৃহীত হয়। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এক তরফা দাঙ্গাও চলতে থাকে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ীই এই দাঙ্গায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়। এঁদের প্রায় সবাই বাঙালি। চালিহা সরকারের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সরকারি ভাষা-আইনের প্রতিবাদে অসমের বাঙালি, পার্বত্য জনজাতি ও অন্যান্য অ-অসমিয়া ভাষাগোষ্ঠীর লোকেরা সরব হয়ে ওঠেন। চলতে থাকে সভা, সম্মেলন, পদযাত্রা, হরতাল ইত্যাদি। অবিভক্ত কাছাড়ে (বর্তমান বরাক উপত্যকা) শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনের মূল পর্ব শুরু হয় ১৯৬১ সালের ১৯ মে। ওই দিন পুলিশের গুলিতে শহিদের মৃত্যুবরণ করেন ১১ জন তরুণ-তরুণী। এঁদের মধ্যে এক জন কমলা ভট্টাচার্য। বিশ্বে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী একমাত্র মহিলা শহিদ। ঘটনাটি ঘটে শিলচর রেলস্টেশনে। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে ১৯৭২ ও ১৯৮৬ সালেও। ১৯৮৬ সালে করিমগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আরও দুই আন্দোলন-সমর্থক যুবক জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস। তখন ক্ষমতায় প্রফুল্লকুমার মহন্তের নেতৃত্বাধীন অসম গণপরিষদ সরকার। দার্জিলিঙের হিংসা কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সমর্থন করতে পারে না। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব ও আচরণও সমর্থনযোগ্য নয়।

স্মর্তব্য, অসমের অসমিয়া নেতৃত্ব অসমিয়া ভাষা নিয়ে জোর-জবরদস্তি করায় নাগাল্যান্ড, মেঘালয় ও মিজোরাম অসম থেকে বেরিয়ে যায়। এখনও বোড়োরা ‘বোড়োল্যান্ড’ চাইছেন, কার্বি ও ডিমাসাদের মধ্যেও এ নিয়ে ক্ষোভ আছে। বরাক উপত্যকায়ও প্রায়শই পৃথকীকরণের দাবি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে মত বিনিময় করা চাই, আগ্রাসনবাদী মানসিকতা প্রদর্শন করলে হিতে বিপরীত হবেই।

অরিজিৎ চৌধুরী

কলকাতা-৭৫

কলেজ-রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার কলেজে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্ৰহণে উদ্যোগী হয়েছে। কলেজ ইউনিয়নের দায়িত্বে ছাত্রদের মাথার উপর এক জন শিক্ষককে বসানোর চিন্তা করা হয়েছে। এই বিষয়ে কিছু কথা বলার। মার্ক্সীয় তত্ত্বে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁরা কলেজকে ছাত্র রাজনীতির চারণভূমি জ্ঞানে সেখানে সর্বদাই একটি লড়াইয়ের ময়দান দেখতে পেলে উৎফুল্ল বোধ করেন। বিগত ৩৩ বৎসরের ইতিহাসই সেই সত্যের সাক্ষী। আরও বড় সাক্ষী হল বর্তমান বামপন্থী জীবিত রাজনীতিবিদেরা। তাঁরা অনেকেই ছাত্র রাজনীতির লেজ ধরে বর্তমান পাদপ্রদীপে এসেছিলেন। তাই সেই কলেজকে রাজনীতি মুক্ত করে তাঁরা কখনওই নিজের জীবিকার রাস্তাকে মরুভূমিসম করতে চাননি। সেই কারণে এই রোগের শিকড় অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। যাঁরা কলেজ চালানোর চাকরি নিয়ে প্রিন্সিপাল-এর কুর্সিতে উপবিষ্ট, অথবা পূর্বে কখনও এই পদ অলংকৃত করেছিলেন, তাঁদের বর্তমান সরকার ও পূর্বের সরকার কখনওই এই ধরনের উৎকট উপসর্গ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মতামত বা উপদেশের জন্য আমন্ত্রণ করেননি। যদিও তাঁরা মাঝে মাঝে তাঁদের পদাধিকার বলে অনেক রাস্তা বাতলেছেন। আমি পশ্চিমবঙ্গে ৩৩ (প্রায়) বৎসর কলেজে শিক্ষক হিসাবে চাকরি করেছি। মাঝে ১৩ বছর অধ্যক্ষ পদে। আমার মনে হয় আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে তা থেকে বেরিয়ে আসার সহজ পথ আছে। সরকার যদি মনে করেন তবে সিনিয়র ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ‍দের নিয়ে এক বার বসুন। আশা করি আমরা প্রাক্তনরা এই বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করতে পারব।

নানক ভট্টাচার্য

দেশবন্ধুপাড়া, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং

কৃষির দশা

জয়ন্ত ঘোষাল লিখেছেন, ‘কৃষিক্ষেত্রে অতি উৎপাদন। নয়া কৃষক সমাজ তাই দাম পাচ্ছে না। এই সংকটে কৃষিকে পরিত্যাগ করে চাষিরা আসছে শিল্পে।’ (‘গরিব চাষির স্বীকৃতিই নেই’, ২১-৬ )। এটা কি বাস্তবে ঘটা সম্ভব? শিল্পে কাজের সুযোগ ২০০৫-২০০৮-এ যা ছিল, বর্তমানে তা নেই। শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ, যা ৩.৯% হারে বৃদ্ধি হচ্ছিল, সেটা গত আর্থিক বছর থেকে ০.২% হারে কমে যাচ্ছে। উৎপাদন শিল্প, যা বর্তমানে জিডিপি-র ১৭%, তার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে জিডিপি-র ২৫%, যেটা অনেকের মতে প্রায় অসম্ভব। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কৃষককে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিতে হবে উৎপাদনের যাবতীয় খরচের ওপর ৫০%। ২০১৪ সালে বিজেপি-র নির্বাচনী প্রচারে এটা প্রাধান্য পেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় কিষাণ মজদুর সংঘের আহ্বায়ক শিবকুমার শর্মা ওরফে কাকাজির দাবি হল কৃষিঋণ মকুব ও সেই সঙ্গে স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ মতো উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। এ ব্যাপারে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্যে অপেক্ষা করছেন। অবশ্য এত কাণ্ডের পরেও রামা কৈবর্ত অথবা গোফুর মিঁঞা সারা জীবন উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও এক অন্তহীন ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে কি? তামিলনাড়ুর এক কৃষক আইয়াকান্নুর মোবাইলে যে গানটি অহরহ বেজে চলেছে, সেটা এখানে খুব প্রাসঙ্গিক: দ্য ফার্মার টিলস অ্যান্ড টিলস অ্যান্ড টিলস/ বাট হু ইজ বদার্ড, মাই ফ্রেন্ড/অল হি লিভস বিহাইন্ড আফটার সো মাচ টিলিং...

অনিলেশ গোস্বামী

শ্রীরামপুর, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE